সড়কে মৃতু্যর মিছিল কার্যকর উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ, তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৫ জন নিহত ও ৮৯৯ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২১৪টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৫ জন নিহত ও ১১৪ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে মোট ৬৫০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৬৪২ জন নিহত ও ৯৭৮ জন আহত হয়েছেন। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আমরা বলতে চাই, যখন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামিগ্রক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। বিবেচনায় নেওয়া দরকার, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। এছাড়া বিবেচনায় নেওয়া জরুরি, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, সড়কে চাঁদাবাজি ও রাস্তার পাশে হাটবাজারও বাড়িয়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। ফলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। স্মর্তব্য যে, এর আগে এমন বিষয় বারবার সামনে এসেছে, সড়ক দুর্ঘটনার ডজন দুয়েক কারণ চিহ্নিত করা হলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় মৃতু্যর মিছিল থামছে না। বরং সড়কে লাশের সারি দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আর তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটাও এড়ানোর সুযোগ নেই, গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সড়কে মৃতু্য কমছে না। একই সঙ্গে পথচারী ও যানবাহন চালকদের অসচেতনতা, যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি পরিচালনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করেন তারা। ফলে এই বিষয়গুলোকে আমলে নিতে হবে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এটা মনে রাখা জরুরি- বিভিন্ন সময়েই দুর্ঘটনার কারণ আলোচনায় এসেছে। এমনকি নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। নানা প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সড়ক নিরাপদ হয়নি। অন্যদিকে, ট্রেন ও নৌ দুর্ঘটনাও ঘটছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। এছাড়া এটাও এড়ানোর সুযোগ নেই- প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। ফলে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে তা আমলে নিতে হবে এবং এবং দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।