শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যেন এই পৈশাচিক ঘটনা না ঘটে

নতুনধারা
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

জন্ম হলে মৃতু্য হবে এটাই বিধাতার নিয়ম। মৃতু্য ঘটবে এটা চিরন্তন সত্য। কিন্তু এমন পৈশাচিক মৃতু্যকে কেউ কামনা করে না। যেখানে মানুষ একটু জ্ঞানহীনতার জন্য বা হীনম্মন্যতার জন্য অথবা অন্যমনস্কের জন্য অঝোরে অকালে ঝরে যায় প্রাণ। নিঃস্ব হয় মায়ের কোল- বাবার বুক। অনাথ হতে হয় কোমলমতি ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের। এটা যেন যমদূতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা দিয়ে প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। সেই যমদূত প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম 'সড়ক দুর্ঘটনা।'

পত্র-পত্রিকা খুললেই কোনো না কোনো ঘটনা নাও থাকতে পারে; কিন্তু একটা খবর বা ঘটনা না হলে যেন পত্রিকা পূর্ণতা পায় না। পরিপূর্ণ হয় না খবরের কাগজগুলো। সেই খবরটি হলো 'সড়কে মৃতু্য' বা দুর্ঘটনা। প্রতিদিন ঘটছে এমন ঘটনা। তবুও সচেতন হননি চালক বা যাত্রীরা। সরকারি নিয়ম চালু হলেও তোয়াক্কা করছেন না চালকরা। নিরাপদ সড়কের আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করছেন না প্রশাসন। ফলে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রশাসনের অলস ও দৈন্যতার কারণে ফিটনেসবিহীন চালকরা প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনা। কেড়ে নিচ্ছে সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক মানুষের প্রাণ। আইনের প্রতি অবহেলার জন্য বড় বড় ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে চালক বা বাস মালিকরা। এই দুর্ঘটনার জন্য শুধু চালকদের নয় বরং বাস মালিকরাও সমান দায়ী। তাদের অবহেলাও চোখে পড়ে। অল্প বেতনের টাকা দিয়ে যোগ্য ও ফিটনেসবিহীন চালকদের দিয়ে মোটা অংকের টাকা কামানোই তাদের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। ফলে এসব চালকদের জন্য হামেশাই ঘটছে সড়কের মৃতু্যর ফোয়ারা। অনেক সময় যাত্রীরাও তাদের সময় বাঁচাতে ও তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তার মধ্যে দিয়ে দৌড়ে দেয়। পরে ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

গত ৪ বছরের জরিপ করলে দেখা যাবে, সড়কে বাস ও মোটর সাইকেলের মৃতু্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সড়কের মৃতু্যর যে সংখ্যা তা আমাদের ভাবায়। এত মৃতু্য! এর শেষ কোথায়? কারা নেবে এই মৃতু্যর দায়? এই ৪ বছরে মৃতু্যর হার অধিক পরিমাণে বেড়ে গেছে। ২০১৯ সালে দুর্ঘটনা ঘটে ৪৬৯৩টি এবং মৃতু্যর সংখ্যা ৫২১১ জন। ২০২০ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৪৭৩৫টি এবং নিহতদের সংখ্যা ৫৪৩১ জন। যা ২০১৯ থেকে দুর্ঘটনা ও মৃতু্যর সংখ্যা অধিক। ২০২১ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫৩৭১টি এবং মৃতু্যর সংখ্যা ৬২৮৪ জন। যা ১৯ ও ২০ সাল থেকে অনেক বেশি। ২০২২ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৬৮২৯টি এবং নিহতদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭১৩ জন। যা আগের সব বছর থেকে অনেক গুণ বেশি। প্রত্যেক বছর দুর্ঘটনা ও মৃতু্যর সংখ্যা অধিক পরিমাণে বেড়ে গেছে। এই জায়গাগুলোতে আমাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে আমরা এখন একটি আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশের বসবাস করি। সড়কের মৃতু্য স্মার্ট বাংলাদেশে কাম্য নয়। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন করে পুরো দেশকে জাগিয়ে তুলেছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে ছিল কীভাবে সড়কে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। যদিও কিছু কষ্ট ভোগ করতে হবে; কিন্তু সেটা কিছু দিনের জন্য। অল্প কয়েকদিনের জন্য আমরা কি চিরস্থায়ী সড়কের চলাচলের বিঘ্নিত থেকে মুক্তি পেতে পারি না? সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার সড়কের আইন পর্যালোচনা করে এবং অনেক নতুন আইন আনেন; কিন্তু আইন আইনের মতো করে শুধু পাসই করল, তার প্রয়োগ মেলা কঠিন হয়ে গেল। ২০১৮-তে আইন তৈরি হলেও ২০১৯ থেকে সড়কের মৃতু্যর ফোয়ারা বেড়েই চলেছে। অকালে অঝোরে ঝরছে কোমল প্রাণ। আইন হলেও তা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অনেক চালক ও বাস মালিকরাও জানেন না। বিশেষ করে চালকরা এই বিষয়ে বেশি অজ্ঞ। তারা তেমন অনলাইন ব্যবহার করেন না। করলেও কোনো নিউজ বা মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত নন। ফলে আইন সম্পর্কে অজানা থেকে যায়। সড়কের মৃতু্যর সংখ্যায় জরিপে শিক্ষার্থীদের সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। বেপরোয়া গতিতে দ্রম্নত যানবাহনগুলো প্রতিষ্ঠানের পাশ দিয়ে যায়। তারা গতি কমানোর প্রয়োজন মনে করে না। ফলে মুহূর্তেই ঘটে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। শিক্ষার্থীদেরও সতর্ক করতে হবে। পাঠ্যবইয়ে একটি অধ্যায় রাখা যায় এই বিষয়ের ওপর। যাতে তারা ছোট্ট থেকেই সতর্ক হয়ে বড় হয়। এভাবে অনেক শিক্ষার্থী রক্ষা পাবে এবং একটা সময় পুরো দেশে রাস্তা পারাপারের সময়ও সতর্ক হয়ে যাবে। দেশের ভবিষ্যৎ মেধাবী শিক্ষার্থীরা যদি এই স্মার্ট বাংলাদেশে প্রাণ দিতে হয় তাহলে এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে? পাঠ্যবইয়ের সড়ক দুর্ঘটনা অধ্যায়ে ধীরে ধীরে সুফল বয়ে আনবে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এই সড়ক দুর্ঘটনায় সব সরকারকেই পদক্ষেপ নিলেও তেমন প্রয়োগ করতে পারেননি। সড়কের উন্নয়ন হয়েছে, বড় বড় হাই রোড হয়েছে, উড়াল পথ হয়েছে, ফ্লাইওয়াভার হয়েছে, মেট্রোরেল হয়েছে। কিন্তু সড়কে স্বস্তি আসছে না। প্রাণ রক্ষা পাচ্ছে না। মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়ছে- শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংবাদিক, পুলিশ, কৃষক, শ্রমিক, ব্যাংকারসহ সাধারণ মানুষ। যারা পরিবারের কর্তা। তাদের মৃতু্যতে পুরো পরিবারকে খেসারত দিতে হয়। এমনকি রাস্তায় নামেন অনেক পরিবার। এই সড়কের মৃতু্যর প্রধান প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সেই অনুযায়ী আইনানুগ শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। চালকদের সম্পূর্ণ সুস্থ থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে দিতে হবে। অনেক চালক বাড়তি আয়ের জন্য সারাদিন চালিয়েও রাতে চালান। সারারাত চালিয়েও দিনে চালান। ফলে তাদের ঘুম পরিমাণ মতো হয় না। তারা থাকে ক্লান্ত। পরক্ষণেই ঘটে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। তাদের ফিটনেস ঠিক রাখতে হবে। যাত্রীদেরও রাস্তা পারাপারের জন্য নিরাপদ জায়গায় ব্যবস্তা রাখতে হবে। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। দূরপালস্নার বাসের প্রতি ট্রাফিক পুলিশের বাড়তি নজর রাখতে হবে। এভাবেই একদিন রক্ষা পাবে আমার সোনার বাংলা। এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতাই প্রাণ রক্ষার ঢাল।

শহীদুল ইসলাম শুভ

\হঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে