তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প সর্বাত্মক পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভূমিকম্প কতটা ভয়ংকর হতে পারে- তা আবারও দেখল পুরো বিশ্ববাসী। তথ্য মতে, সোমবার ভোরে সিরিয়ার সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। আর এই বড় ধরনের ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষ যেমন নিহত হয়েছে, তেমনি আহত হয়েছে বহু মানুষ। ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ শহরের কাছে। ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। উলেস্নখ্য, তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ শহরের কাছে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর আরও বেশ কয়েকটি আফটারশক বা ভূমিকম্পপরবর্তী কম্পন অনুভূতি হয়েছে। এর মধ্যে একটি কম্পন ছিল মূল ভূমিকম্পের মতোই শক্তিশালী। আমরা বলতে চাই, এই ভয়াবহ ভূমিকম্প কতটা মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে তা বলার দরকার পড়ে না। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে, সরকার, বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। লক্ষণীয়, এই ভূমিকম্প কতটা ভয়াবহ- সেই প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশনের প্রধান অধ্যাপক জোয়ানা ফাউর ওয়াকার বলেছেন, যে কোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। গত ১০ বছরের মধ্যে মাত্র দুটি ভূমিকম্প এ মাত্রার ছিল, আর এর আগের ১০ বছরে মাত্র চারটি ভূমিকম্প এ মাত্রার ছিল। এই ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৪ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তুরস্কে নিহত মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ২ হাজার ৯২১। সিরিয়ায় নিহত কমপক্ষে ১ হাজার ৪৪৪ জন- এছাড়া আরও ভয়াবহ বিষয় হলো, নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে- এমন বিষয় জানা যাচ্ছে। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে এটাও আমলে নেওয়া জরুরি- শুধু কম্পনের শক্তির কারণেই এত বেশি ধ্বংসযজ্ঞ হয়নি বলে জানা যাচ্ছে। এই ঘটনাটি ঘটেছে ভোরের দিকে, যখন মানুষ ঘরের ভেতরে ঘুমাচ্ছিল। এছাড়া ভবনের দৃঢ়তাও ছিল একটি বিষয়। এই আলোচনাও উঠে এসেছে যে, দুর্ভাগ্যবশত দক্ষিণ তুরস্ক এবং বিশেষ করে সিরিয়ায় অবকাঠামোগুলো খুব একটা ভূমিকম্প প্রতিরোধী নয়। এছাড়া, এটি এমন একটি অঞ্চল- যেখানে গত দুইশ' বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে কোনো বড় ভূমিকম্প হয়নি বা কোনো সতর্কতা সংকেতও ছিল না। তাই প্রায়ই ভূমিকম্প মোকাবিলা করে এমন অঞ্চলের তুলনায় এখানকার প্রস্তুতির মাত্রা বেশ কম। প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, এটা আমলে নেওয়া দরকার- আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা প্রেরণের পরও প্রতি বছর সারাবিশ্বে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপুল সম্পদ বিনষ্ট হয় এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ঝড়সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে আগাম সতর্কতার বিষয়টি সামনে এলে, দেখা যায়, অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস প্রদানের সুযোগ নেই। অন্যদিকে, ভূমিকম্পের ফলে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি কত ব্যাপক হতে পারে, তা বিভিন্ন সময়েই লক্ষ্য করা গেছে। সঙ্গত কারণেই এবারের ভূমিকম্পের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, সহায়তার বিষয়টি আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকেও পদক্ষেপ নিতে হবে। এবারের ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়া- উভয় দেশে ধসে পড়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, যার মধ্যে অনেক বহুতল ভবন রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে জোর তৎপরতার বিষয়টিও সামনে এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশ-সংস্থা তুরস্ক ও সিরিয়াকে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। কেউ কেউ সহায়তামূলক কার্যক্রম শুরুও করে দিয়েছে। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টরা ও আন্তর্জাতিক মহল তৎপর থাকবে এটাই প্রত্যাশিত। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটল তা কাটিয়ে উঠতে তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশের সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে এই ঝুঁকি মোকাবিলায়ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকা যে জরুরি সেটিকে সামনে রেখে বিশ্বের সব দেশেরই উদ্যোগী হওয়া জরুরি। এই ভয়ানক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের তৎপরতা বজায় থাকুক এমনটি কাম্য।