বাংলাদেশের চোখ

একটা বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে , জনগণকে দেয়া ওয়াদা, জনগণের প্রত্যাশা এবং সরকার কতৃর্ক প্রত্যাশা পূরণের সামথর্্য এগুলোর মধ্যে যেন সামঞ্জস্য থাকে, একটি যেন অন্যটিকে অতিক্রম করে না যায়।

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

একিউএম আবু জাফর
আমার মনে হয়, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের দুটি অলৌকিক চোখ আছে। যেগুলো দিয়ে আমাদের এই প্রিয় দেশ তার চলার সঠিক পথ দেখে নেয়। ওই চোখগুলো দিয়েই বাংলাদেশ তার ভবিষ্যতের শত বছর, হাজার বছরের উন্নয়ন ও পথ চলার সব দৃশ্য সুস্পষ্টভাবে দেখতে পায়। দেশ পরিচালনার দায়িত্বে¡ থাকা নেতৃত্বের মধ্য থেকে একেক সময় একেক জনের চোখে ওই চোখগুলো বসানো থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অজের্নর সময় আমাদের মাতৃভ‚মির চোখগুলো বসানো ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চোখে। তিনি বাংলাদেশের জন্য করণীয় আগামী শত বছর, হাজার বছরের কমর্পদ্ধতি দেখতে পেতেন। সেভাবেই পরিকল্পনা নিয়ে তিনি সামনে অগ্রসর হচ্ছিলেন। কিন্তু দেশের দুশমনরা তাকে শহীদ করে উন্নয়নের সব কাজকে থামিয়ে দিয়েছিল। সৃষ্টি বিধাতার অপার মহিমায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দেশ সেবার জন্য চতুথর্বার দায়িত্ব নিয়েছেন। বাংলাদেশের চোখগুলো এখন শেখ হাসিনার চোখে বসানো আছে। আগামীদিনের বাংলাদেশকে কীভাবে উন্নত করতে হবে তা তিনি ওই চোখগুলো দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পান। সে জন্য তিনি রূপকল্প-২০২১ সাল, ২০৪১ সাল এবং ২১০০ সালের ডেল্টা পরিকল্পনা নামে অনেক পরিকল্পনা এবং মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। উন্নয়নের এই মহাসড়কে শুধু সামনের দিকে যাওয়া যায়, পেছনে ফেরার বা ডানে-বামে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে ইঞ্জিনটি বাংলাদেশকে সামনের দিকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার জ্বালানি হলো জাতির পিতার আদশর্ এবং ওই জ্বালানি কখনও কমে না, সব সময় সমান ক্ষমতা সম্পন্ন ও চিরস্থায়ী। বাংলাদেশে দক্ষতার সঙ্গে সরকার পরিচালনা, নিজ দলকে সফল নেতৃত্ব প্রদান এবং উন্নয়নের ধাপগুলো একে একে পার হয়ে কীভাবে শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন এসব বিষয় প্রতিবেশী দেশগুলো ও বিশ্ববাসী গভীর মনোযোগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নিবার্চনে বাংলার জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট প্রদানের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, আমাদের বাংলাদেশ নামক দুঃখিনী মায়ের উত্তরোত্তর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি তারা দেখতে চান। এই বাংলা মায়ের দুঃখের কাহিনী, পরিমাণ ও তীব্রতা এত বেশি যে, যা লেখেও কখনও শেষ করা যাবে না। তিতুমীর, সূযর্ সেন, প্রীতিলতা, রফিক, বরকত, সালাম ও জব্বারের রক্তাক্ত পথ ধরে এগিয়ে এসে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত দিয়ে গোসল করে লাল-সবুজের পতাকা হাতে ‘দুঃখিনী বাংলা মা’ এখন মাথা উঁচু করে দঁাড়িয়েছে। আমাদের মাতৃভ‚মিকে আর কেউ কোনোভাবে খাটো করতে পারবে না, কারণ বাংলা মায়ের অসীম ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি চোখ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চোখে বসানো আছে এবং দেশপ্রেমিক জনতা দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ নেতৃত্বের সমথের্ন হিমালয়ের মতো অটল ও দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নিবার্চনে জাতির পিতার সংগঠন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে। এ নিবার্চনে আরও বিজয়ী হয়েছে দেশের জনগণ, শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, মুক্তিযোদ্ধা, সাবের্ভৗমত্ব ও শহীদরা। একই সঙ্গে পরাজিত হয়েছে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি, ১৫ আগস্টের খুনিরা, জেল হত্যার কুলাঙ্গাররা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারীরা। একটি ভোট যে কত কথা বলতে পারে, কত কিছু বুঝিয়ে দিতে পারে, কত সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ ঘটাতে পারে তা উল্লিখিত নিবার্চনের ফলাফলের প্রতি লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। এ ভোটের মাধ্যমে দেশের সবর্স্তরের জনগণ জানিয়ে দিলেন যে, তারা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কের ওপর সামনের দিকে চলমান অবস্থায় দেখতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত ধীরস্থিরভাবে সুচিন্তিত পদক্ষেপে সামনে অগ্রসর হচ্ছেন। নিবার্চনে বিজয়ের পর কোনো প্রকার উল্লাস প্রকাশে নিরুৎসাহিত করেছেন, বিজয় মিছিল না করার জন্য নিদের্শ দিয়েছেন, প্রশান্ত মনোভাব বজায় রেখে ভোটারদের সঙ্গে আন্তরিক ব্যবহার প্রদশর্ন করতে বলেছেন, সাধারণ জনগণের প্রয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে আদেশ করেছেন। এসবের মাধ্যমে তিনি মহান পিতার মতো মহৎ হৃদয়ের প্রমাণ দিয়েছেন। অশেষ ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। প্রত্যাশা আমাদের দেশের সরকারের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশা থাকে। বতর্মান সরকারের কাছেও দেশবাসীর কিছু প্রত্যাশা রয়েছে। আমার কেমন যেন মনে হয় সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশাগুলো সাধারণ জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে প্রায় একই ধরনের হবে। জনগণ আশা করেন, মন্ত্রিসভা সব সময় জাতির পিতার আদশের্র আলোতে পথ চলবে, প্রধানমন্ত্রীর মতো দেশ সেবার ব্রত নিয়ে নিরলসভাবে দেশের কাজে ব্যস্ত থাকবে। আমার মনে এমন একটি বিশ্বাস কাজ করে যে, আওয়ামী লীগ দেশসেবার দায়িত্বে থাকলে সরকারের কাছে জনগণের আন্তরিক আবদার ও আবেদন তুলনামূলকভাবে একটু বেশি থাকে। মনে হয় আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর সংগঠন হওয়াতে এবং শেখ হাসিনা তার কন্যা হওয়াতে এমনটি হয়েছে। আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা সমালোচকদের সমালোচনা ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে কাজের মাধ্যমে পরাজিত করবে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ও বিশাল কমীর্ বাহিনীর দেশ গঠনের কমর্ কুশলতা দেখে বিরোধী শক্তি যেন ভয় পেয়ে যায়, কোনো প্রকার ইশতেহার বা রূপকল্প নিয়ে জনগণের সামনে আসার কোনো সুযোগ যেন তারা না পায়। আমার মনে হয়, জনগণ দেখতে চাইবে যে, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ কলহ নেই। জনগণ বিরক্ত হয় এমন কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। কোনোভাবেই চঁাদাবাজি করা যাবে না, জমি দখল করা, মতের বিরোধী জনকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, টেন্ডারবাজি করা ইত্যাদি কখনও করা যাবে না। সব সময় মনে রাখতে হবে যে, আগামীদিনে জনগণের কাছে ভোট চাইতে হবে এবং তখন যেন জনগণ মুখ ফিরিয়ে না নেয়। জনগণের কাছে সরকারের দেয়া প্রতিশ্রæতিগুলো বাস্তবায়নের সামথের্র মধ্যে থাকাটাই নিরাপদ। দেশের সাধারণ জনগণ শেখ হাসিনার যে কোনো কথাকে প্রশ্নহীনভাবে বিশ্বাস করে। এ বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে মনে-প্রাণে ভালোবাসে ঠিক সেভাবেই শেখ হাসিনাকেও ভালোবাসে। সে জন্য দেশবাসীকে দেয়া শেখ হাসিনার উন্নয়ন প্রতিশ্রæতিগুলোর সবগুলোতেই হাত দিতে হবে। জনগণ মনে করে না যে, সব উন্নয়ন কমর্কাÐ একসঙ্গে শুরু হয়ে অতি অল্পসময়ে শেষ হয়ে যাবে। আমাদের দেশবাসী যথেষ্ট সচেতন এবং অনেক কিছুরই খেঁাজ রাখে ও বুঝতে পারে। জনগণ সরকারের কাজের মধ্যে জাদুকরি কিছু দেখতে চাইবে না, তারা দেখতে চাইবে উন্নয়ন কাজের প্রতি আন্তরিকতা ও জনতাকে দেয়া ওয়াদার প্রতি একনিষ্ঠতা। একটা বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে , জনগণকে দেয়া ওয়াদা, জনগণের প্রত্যাশা এবং সরকার কতৃর্ক প্রত্যাশা পূরণের সামথর্্য এগুলোর মধ্যে যেন সামঞ্জস্য থাকে, একটি যেন অন্যটিকে অতিক্রম করে না যায়। একিউএম আবু জাফর: কলাম লেখক