প্রসঙ্গ জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধকরণ

বতর্মানে নিবার্চন কমিশনে দলটির নিবন্ধন না থাকলেও সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে জামায়াতের ২৫ জন প্রাথীর্ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ও কিছু নিরপেক্ষ প্রাথীর্ হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেও একটি আসনেও জিততে পারেনি তারা। এতে খুশি হওয়ার দিক যেমন আছে তেমন আত্মপ্রসাদের কোনো কারণও নেই। মনে রাখতে হবে, জামায়াতে ইসলামী একটি ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন। মূল দলের নেতৃত্ব ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করায় তারা আপাতত আগ্রাসী ভ‚মিকা পালন থেকে বিরত রয়েছে।

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

রণেশ মৈত্র
আসলে অন্য একটা বিষয় নিয়ে লিখছিলাম। বেশ কিছুটা অগ্রসরও হয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎই হাতে এলো দৈনিক পত্রিকাগুলো। তাতে ১০ জানুয়ারির সংখ্যায় লাল কালি শিরোনামে তিন কলামব্যাপী প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি খবরের প্রতি স্বভাবতই দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো। হয়তো বা ওই পত্রিকায় নিয়মিত পাঠকবৃন্দের (দৈনিক সংবাদ) সবার দৃষ্টিই খবরটি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। আমি আসলে সমগ্র দেশবাসীর মতো এই দাবিতে পুরোপুরি একমত, তেমনি যখন কথাটি আমাদের আরও এক মেয়াদের জন্য নিবাির্চত আইনমন্ত্রী আনিসুুল হক কিছু বলে বসেন। বস্তুত তিনি এই বিষয় নিয়ে অন্তত দীঘর্ তিনটি বছর ধরে বলে আসছেন, জামায়াত নিষিদ্ধকরণের ব্যাপারে নতুন আইন প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে। নথিপত্র এখন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি অনুমোদন দিলেই তা মন্ত্রিসভা অনুমোদন করবে। অতঃপর সংসদে পাস হতে কোনো সমস্যাই নেই। আমার স্মরণমতে তিনি ২০১৮ সালে তার সিডনি সফরকালে আয়োজিত এক সভায়ও কথাগুলোর পুনরুক্তি করেন। এই সমাবেশে অবশ্য আমি এবং আমার জ্যেষ্ঠ পুত্রও আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দিয়েছিলাম। জামায়াত নিয়ে যখন বিদেশের মাটিতে সরাসরি কথা উঠল তখন যথেষ্ট আশাবাদেরও সঞ্চার হয়েছিল উপস্থিত সবার মনেই। হঠাৎ করে উদ্যোক্তারা আমাকে ডাকলেন মঞ্চে গিয়ে বসতে এবং অতঃপর কিছু কথা বলতে। জামায়াত প্রসঙ্গকেই সূত্র হিসেবে ধরে বললাম, ‘মাননীয় মন্ত্রী, এই একই কথা জামায়াত প্রসঙ্গে তো আপনার মুখে বহুকাল ধরে শুনে আসছি। মন্ত্রিসভার বৈঠক তো প্রতি সপ্তাহের সোমবারে অনুষ্ঠিত হয়। এক বছরে কম করে হলেও ৪০টি বৈঠক হয়েছে কিন্তু বিল আকারে কোনো কিছুই তোলা হয়নি। তবে কি এতে প্রভাবশালী কোনো মন্ত্রীর আপত্তি আছে? বললাম, শুনুন মাননীয় মন্ত্রী! আমি ক্ষুদ্র মানুষ হয়েও আপনাকে একটা পরামশর্ দিতে পারি। আর তা হলো আইন প্রণয়নের আদৌ কোনো দরকার নেই? সরাসরি সংবিধানের একটি সংশোধনী আনুন। তাতে জামায়াতে ইসলামীসহ সব ধমার্শ্রয়ী দলকে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করুন। জিয়ার বিসমিল্লাহ ও এরশাদের ইসলাম রাষ্ট্রধমর্ হিসেবে। ভেবে দেখুন ৭২ সংবিধানে এগুলো নিষিদ্ধ ছিল। তখন তো বঙ্গবন্ধুর জামায়াত নিষিদ্ধ করতে কোনো আইন প্রণয়ন করতে হয়নি। আর আজ সুপ্রিম কোটর্ নিষিদ্ধ করল, ‘যুদ্ধাপরাধী বিচারের ট্রাইব্যুনালগুলো রায় দিল’ জামায়াত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন সুতরাং অবিলম্বে তার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা প্রয়োজন। কিন্তু বস্তুত কোনোটাই মানা হলো না। আবার সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদও বললেন, ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে শুধু একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। তার জন্য বিদ্যমান আইনগুলোই যথেষ্ট। কিন্তু তখন সরকার সে পথে না হেঁটে জামায়াতকে বৈধ হিসেবে চালু রেখেছেন আবার ওই বৈধ সংগঠনের সঙ্গে জোট করার জন্য বিএনপিকে অপরাধী সাব্যস্ত করছেন। আবার বহু জেলায় জামায়াতের বহু নেতাকমীের্ক আওয়ামী লীগে সাদরে ঢুকিয়ে নিয়ে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ করে অনেককে ইউপি চেয়ারম্যান পৌরসভার মেয়র কাউন্সিলারও নিবাির্চত করে রেখেছেন। তবুও খবঃঃবৎ ঞযধহ ঘবাবৎ উদ্যোগ যদি আবার সত্যিই নেয়া হয়ে থাকে তবে তার আন্তরিক সাফল্য করি। ‘সংবাদ’-এর খবরে বলা হয়েছে, ‘জামায়াতে ইসলামীসহ যদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত সব সংগঠনের বিচারে ফের আইন সংশোধনের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে আন্তজাির্তক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বেছে নেয়া হলেও এই আইনে দল বা সংগঠনের মানবতাবিরোধী অপরাধের শান্তির ব্যাপারে কিছু বলা নেই। এজন্য আইনটি সংশোধন করেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত সরকারের সময় সংশোধনী এনে আন্তজাির্তক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। এরপর থেকে বিষয়টি ঝুলে আছে কোথায় এবং কেন?)। আবারও খসড়া চ‚ড়ান্ত করতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হলে তা অনুমোদনের পর জাতীয় সংসদে পাঠানো হবে। সংসদ সংশোধনী পাস করলে ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের বিচারে আইনগত কোনো বাধা থাকবে না। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে গত (১১ জানুয়ারি) সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ‘জামায়াতে ইসলামীর বিচারের জন্য ফের আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’ একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যেমন চ‚ড়ান্ত পযাের্য় তখন ছয় দফা এগারো দফাসহ বিভিন্ন দফায় বিরোধিতা করে জামায়াত। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ নামে। যুদ্ধকালে সাংগঠনিকভাবে তারা সারা দেশে ব্যাপক হত্যা, ধষর্ণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত হয়। সেই অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে এ পযর্ন্ত জামায়াতের সাবেক আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসাদ মুহাম্মদ মুজাহিদ, দলটার প্রধান অথর্দাতা বলে পরিচিত মীর কাশেম আলী, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ সংগঠনটির সাত শীষর্ নেতা ফঁাসি বা মৃত্যুদÐ কাযর্কর করা হয়েছে। গোলাম আযমের মামলার রায়ের জামায়াতেও ইসলামীকে একটি ‘ক্রিমিন্যাল সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওই রায়ে বলা হয়, জামায়াত একটি অপরাধী সংগঠন। একাত্তরে তাদের ভ‚মিকা ছিল দেশের স্বাথের্ও পরিপন্থির। এ ছাড়া আন্তজাির্তক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিটি রায়ের পযের্বক্ষণেই জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন (ক্রিমিন্যাল অগার্নাইজেশন) হিসেবে উল্লেখ করেছে। ২০১৩ সালে আন্তজাির্তক অপরাধ ট্রাইব্যুানালের প্রথম রায়ের জামায়াতের সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার আদেশ হলে যুদ্ধাপরাধীদের ফঁাসি এবং তাদের দলগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ সাত দফা দাবিও অন্তভুর্ক্ত ছিল তখন গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলনে তরুণ সমাজ কতৃর্ক। বিভিন্ন মহল থেকে তাদের দাবির প্রতি সমথর্ন ব্যক্ত করা হয় হাজারে হাজারে অংশগ্রহণও করা হয়। পরে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করলে দলটির নিজস্ব নামে ও প্রতীকে নিবার্চনে অংশগ্রহণ করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে। এর পঁাচ বছর পর গত বছরের অক্টোবরের নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নিবার্চন কমিশন। সংশ্লিষ্টদের মতে পাকিস্তান আমলে দুবার এবং ভারতে চারবার নিষিদ্ধ হয় জামায়ত। বতর্মানে নিবার্চন কমিশনে দলটির নিবন্ধন না থাকলেও সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে জামায়াতের ২৫ জন প্রাথীর্ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ও কিছু নিরপেক্ষ প্রাথীর্ হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেও একটি আসনেও জিততে পারেনি তারা। এতে খুশি হওয়ার দিক যেমন আছে তেমন আত্মপ্রসাদের কোনো কারণও নেই। মনে রাখতে হবে, জামায়াতে ইসলামী একটি ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন। মূল দলের নেতৃত্ব ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করায় তারা আপাতত আগ্রসী ভ‚মিকা পালন থেকে বিরত রয়েছে। কিন্তু হাজার হাজার মসজিদ, মাদরাসা? সেগুলো আজও দিব্যি তাদের নিয়ন্ত্রণে। সরকারের ছোট-বড় আমলা, পুলিশ, ডিজিপি, সেনাবাহিনীতে তাদের বহু অনুপ্রবেশ ঘটছে। সেদিকগুলো খেয়ালে রাখা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ দরকার। নারী সংগঠনও তাদের কম নয়। বাড়ি বাড়ি বোরকা পরে গিয়ে বাড়ির নানা বয়সের মহিলাদের বিনা পয়সায় ইসলামে তামিল দিয়ে থাকে তারা। ওই বোরকাগুলোর একাংশ অস্ত্র ও মাদক বহনে ও পুরুষ অপরাধীদের আশ্রয় দানের কাজেও ব্যবহৃত হয়। তাই সতকর্তার প্রয়োজন সাবির্ক ক্ষেত্রেই। নইলে যে কোনো মহলের মাধ্যমে বিপযর্য় নেমে আসা অস্বাভাবিক নয়। অতীতের খবর তো এখানেই শেষ নয়। পরে আন্তজাির্তক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর ওই সংশোধনী সংসদে তোলার বিষয়ে কয়েক দফা প্রতিশ্রæতি দেন। কিন্তু বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তজাির্তক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩-এর খসড়া প্রস্তুত থাকলেও তা কখনও সংসদে ওঠেনি। আন্তজাির্তক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন অন্যতম প্রসিকিউশন ব্যারিস্টার তুহিন আফরোজ ওই সময় বলেছিলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই করার দুই মাস পর জামায়াতের বিচার বিষয়ে আন্তজাির্তক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইন সংশোধনের বিষয়টি ওঠে। সে অনুসারে আইনটির খসড়াও করা হয়। কিন্তু এতদিনেও আইনটি কেন অনুমোদন হচ্ছে না, এটি আমার কাছে বোধগম্য নয়। আইনের খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ বলে অভিযোগ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অনেক সদস্যই। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল ক্ষোভ জানিয়ে আসছে এটি দ্রæত হওয়া দরকার বলে দাবি করে আসছেন। এ বিষয়ে আইনজ্ঞরাও প্রশ্ন তুলছেন। তারা বলছেন, অনেক আইন রাতারাতি সংশোধন করা হচ্ছে। অথচ জামায়াতের বিচারে আইনের সংশোধন আটকে আছে। জামায়াত যে এতটা সন্ত্রাসী সংগঠন তা বহু রায়েই উঠে এসেছে অথচ ওই দলটিকে নিবার্হী আদেশেও বে-আইনি করা সম্ভব। এ ছাড়া বিদ্যমান আন্তজাির্তক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনে ব্যক্তির বিচারের কথার উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সংগঠনের নেই। সেখানে অগার্নাইজেশনস বা সংগঠন শব্দটি সংযোজন এবং সাজার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধকরণ তহবিল অফিস বাজেয়াপ্ত সহ কয়েকটি শব্দ সংযোজন করলে দলেরও বিচার করা সম্ভব হতে পারে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠনগুলোর বিচারে বতর্মান সরকারের ওপর তাদের আস্থা আছে। এখনই উপযুক্ত সময়। যত দ্রæত সম্ভব আইনের সংশোধনীর খসড়া পাঠিয়ে দিয়ে তা মন্ত্রিসভায় ও সংসদে অনুমোদন করতে আর কালক্ষেপণ উচিত হবে না। এ বিষয়ে সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আন্তজাির্তক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনের সংশোধনী তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা চেষ্টা করবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনা নিয়ে আবারও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেব যাতে এটা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের বিচার করা কিনা, সেজন্য এ আইনটির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনটি রায়ে দেখা গেছে, জামায়াত দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধে জড়িত। তাদের বিচারের জন্য দাবি উঠেছে। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম যে বিদ্যমান আইনে বিচার করা যায় না, তাই আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন। এখন প্রাসঙ্গিক কয়েকটি জরুরি প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাইÑ এক. সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামীসহ জঙ্গি উৎপাদনকারী ধমার্শ্রয়ী দলগুলোকে, জিয়ার উদ্দেশ্যমূলক বিসমিল্লাহ্ এবং স্বৈরাচারী এরশাদের ‘রাষ্ট্রধমর্ ইসলাম’ বে-আইনি/বাতিল করে পুনঃস্থাপন করতে বাধা কোথায়? দুই. সংবিধান সংবিধানে যে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যদের প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি সদস্য থাকা সত্তে¡ও সংবিধান সংশোধনের পথে যেতে অনীহা কেন? তিন. দল নিষিদ্ধকরণের জন্য আদালতের কাছে যেতে হবে কেন? চার. আদালতের বিচারে যে অত্যাধিক সময় সাপেক্ষ তা নিশ্চয়ই সবারই জানা আছে। তবু সে পথে হঁাটার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল কেন? পঁাচ. একটি মামলা দায়ের করলেই মাননীয় আদলত যে দল/দলগুলোকে বে-আইনি ঘোষণা করলেনই তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? ছয়. যদি ধরেও সেই যে আদালত বে-আইনি ঘোষণা করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবেনই, ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী কি উচ্চ আদালতে আপিল করতে যেতে পারবেন না? আমার ধারণা নিশ্চয় পারবেন। তখন সে আপিল শুনানীর জন্য যে কয় বছর সময় লাগবে তাও কি বিবেচনায় নেয়া হবে না। সাত. মন্ত্রিসভা/ সংসদে অনুমোদনের দিন তারিখ তো এখনও ঠিকই হয়নি। অথচ উদ্যোগটি সুরু হয়েছে ২০১৩ সালে। আজ প্রায় ছয় বছর ইতোমধ্যেই অতিক্রান্ত। আট. যদি সহজেই তিন বা ছয় মাসের মধ্যেই মন্ত্রিসভা/সংসদেও অনুমোদন পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতে এজাহার প্রণয়ন, চাজির্শট প্রণয়ন, চাজির্শট গ্রহণ প্রভৃতিতে অনেক সময় স্বাভাবিকভাবেই লাগবে। নয়. অতঃপর অভিযুক্ত পক্ষ নানা যৌক্তিক/অযৌক্তিক কারণে দিব্যি আদালতের কাছ থেকে বারবার সময় নিতে পারবে। এভাবে সংঘঠিত বিলম্বের আশংকাও কম নয়। দশ. আদালত প্রদত্ত জামায়াত প্রভৃতি বাতিলের রায় কি সংসদে অগ্রাহ্য করে যথা পূবর্ং তথা পরং করাÑ অথার্ৎ পঞ্চদশ সংশোধনীর মতো সংশোধনী দ্বারা আদালতের রায় অগ্রাহ্য করার সুযোগ রাখার চিন্তা আছে? শেষ কথাটি বলিÑ বাংলাদেশে সব কিছুই সম্ভব। রণেশ মৈত্র: মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক