চিকিৎসা সেবায় নৈরাজ্য দূর হোক

একশ্রেণির টাউট ও দালালচক্র সবর্ক্ষণ হাসপাতালের গেটে ওঁৎ পেতে থাকে। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা হাসপাতালে এলেই দালালচক্র তাদের ওপর হামলে পড়ে। এই চক্রের হাতে প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছে রোগীরা।

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মীর আব্দুল আলীম
দেশজুড়ে চলছে চিকিৎসা নৈরাজ্য; স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চলছে রসিকতা! তাই বেজায় চটেছেন নয়া মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সব বিভাগে শিগগিরই শুদ্ধি চালানো হবে বলে সাফ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অপরাধ যার যার নিজস্ব বিষয়। সরকার এতে কাউকে ছাড় দেবে না। দ্রæতই স্বাস্থ্য বিভাগের সব ধরনের অনিয়ম ও দুনীির্তর বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানোর কথা জানান এই মন্ত্রী। আমাদের দেশের হাসপাতালের যা অবস্থা তাতে এমন শুদ্ধি অভিযান জরুরি হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ঘুষ দুনীির্ত আর অনিয়মের বিষয়টি এখন বেশ আলোচিত হচ্ছে। তৃতীয় শ্রেণির এক কমর্চারীর ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ায় রয়েছে অধর্ডজন অত্যাধুনিক বাড়ি ও প্লট। এ ছাড়া নামে-বেনামে রয়েছে শত শত কোটি টাকা। এমন সব কমর্কতার্ কমর্চারির কারণে স্বাস্থ্য খাত বিপযর্স্ত হয়ে পড়েছে। সেবাবঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সরকারি হাসপাতালে এটা নেই; সেটা নেই। দুগর্ন্ধ আর নোংরা পরিবেশ। বাথরুমের মেঝে ও টয়লেট অপরিষ্কার। সরকারি হাসপাতালজুড়ে কুকুর বিড়াল ঘোরাফেরা করলেও হাসপাতালে নিয়োজিত অধিকাংশ ডাক্তার থাকেন অনুপস্থিত। নোংরা টয়লেটের সঙ্গে রাখা হয় রোগীদের। বিছানা আর টেবিলের ওপর অবাধেই ঘুরে বেড়ায় তেলাপোকা। বিছানায় ছাড়পোকা গিজগিজ করে। জরুরি বিভাগের মেঝেতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ, গজ, ব্যান্ডেজ পড়ে থাকে যত্রতত্র। উপযুর্পরি দালাল চক্র, ডাক্তার- কমর্চারীদের হয়রানি, অবহেলা এ যেন রোগীদের নিয়তি হয়ে দঁাড়িয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই কোনো না কোনো হাসপাতালের এমন চিত্র চোখে পড়ে। প্রকাশিত সংবাদগুলোর প্রতিপাদ্য বিষয় একই থাকে। রোগীরা সেবা পাচ্ছে না। হাসপাতালে ডাক্তার থাকে না। চিকিৎসাসেবা না পেয়েই গ্রামের মানুষকে বাড়ি ফিরতে হয়। এই হচ্ছে আমাদের চিকিৎসাসেবার নমুনা। সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে আছে স্বাস্থ্য খাত। এখানে দুনীির্ত-অনিয়ম বেড়েই চলছে। নিমার্ণ, সরবরাহ, কেনাকাটা, নিয়োগ, বদলি- সবক্ষেত্রেই চলে ঘুষ লেনদেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন হিসাবরক্ষক আবজাল মিয়াও সিন্ডিকেটের কল্যাণে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ভুয়া টেন্ডারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বাজেট বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুনীির্ত দমন কমিশন (দুদক)। পত্রিকার খবরে জানা যায়, বিশ্বখ্যাত জাপান ব্র্যান্ড ক্যাননের অথোরাইজেশন লেটার জালিয়াতি করে ৮০ কোটি টাকার মেডিকেল যন্ত্রপাতি সরবরাহের টেন্ডার বাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এই চক্রের অন্যতম হোতা এএসএল নামে একটি প্রতিষ্ঠান জাপানি ক্যাননের ভুয়া অথোরাইজেশন লেটার দিয়ে এমআরআই ও সিটি স্ক্যান মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য টেন্ডার দাখিল করেছে। দেশের স্বাস্থ্য খাতের বেহাল পরিস্থিতি নিয়ে টিআইবির অনুসন্ধানেও নানা চিত্র ফুটে উঠেছে। টিআইবি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগ, বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি সবর্ত্রই অনিয়ম-দুনীির্ততে ছেয়ে গেছে। এ ছাড়া যে কোনো টেন্ডার বা ছোটখাটো যে কোনো কাজের জন্যও গুণতে হয় ঘুষ। এ ক্ষেত্রে সবির্নম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে সবোর্চ্চ ১০ লাখ টাকা পযর্ন্ত ঘুষ দিতে হয় ভুক্তভোগীদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিভিল সাজর্ন কাযার্লয় ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা এ অথর্ নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে চিকিৎসকরা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন নিয়ে থাকেন। আর দালালরা নিয়ে থাকেন ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এ খাতে অ্যাডহক চিকিৎসক ও তৃতীয়-চতুথর্ শ্রেণির কমর্চারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৬৫ লাখ টাকা, বদলির ক্ষেত্রে ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা এবং পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হয়। এসব ঘুষ লেনদেনের সঙ্গে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সিভিল সাজর্ন কাযার্লয়সহ স্বাস্থ্য খাতের প্রতিটি বিভাগের একশ্রেণির কমর্কতার্-কমর্চারী জড়িত। পত্রিকায় আরও জানলাম, হাসপাতাল থেকে শুরু করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার সবর্ত্রই দালালদের উৎপাত। হাসপাতালে ভতির্ করতে দালাল, ওয়াডের্ বেড পাওয়া নিশ্চিত করতে দালাল, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেও দালালদের সাহায্য নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। পঙ্গু ও সোহরাওয়াদীর্ হাসপাতালে রোগীর জন্য ট্রলি ব্যবহার করতেও গুণতে হয় টাকা। রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকা ট্রলি নিয়ন্ত্রণে রেখে মিটফোডর্ হাসপাতালেও বাড়তি টাকা কামায় বহিরাগতরা। নানা কারণে ঢাকার প্রায় সব সরকারি বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্রসহ সারা দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জামাদির সুযোগ-সুবিধা রোগীদের ভাগ্যে জুটছে না। ফলে ন্য‚নতম রক্ত পরীক্ষা থেকে শুরু করে ক্যান্সার নিণর্য় পযর্ন্ত যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীরা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওপর নিভর্রশীল হচ্ছে। এ দেশের ডাক্তাররা দিন দিন কেমন যেন নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছেন। এ দেশে হরেদরে মানুষ মরছে দায়িত্বে অবহেলায় আর চিকিৎসার অভাবে। দালাল চক্র ঘিরে আছে হাসপাতালগুলো। ডাক্তাররা মেতে উঠেছেন কমিশন বাণিজ্যে। সরকারি হাসপাতালের এমন অনিয়মে রোগীদের সেবা পাওয়া যেন দায় হয়ে দঁাড়িয়েছে। চিকিৎসক, কমর্চারী ও দালালদের সমন্বয়ে হাসপাতালগুলোতে তৈরি হয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। হাসপাতালে ওষুধ-পথ্যসহ অপারেশনসামগ্রীর কৃত্রিম সংকট এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে করে রোগীরা চিকিৎসক, কমর্চারী ও দালালদের মাধ্যমে হাসপাতালের আশপাশে তাদেরই নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়। গরিব রোগীদের জন্য সরকারিভাবে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা দিতে আসা এসব হাসপাতাল এখন রয়েছে কমর্চারী ও দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে। তারা যেভাবে চাইবে সেভাবেই হচ্ছে সব। প্রায় ক্ষেত্রেই ডাক্তাররা দায়িত্ব যথাযথ পালন করেন না। অনেকেই উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। আমাদের ডাক্তাররা বড্ড বেশি বাণিজ্যিক হয়ে পড়েছেন। রোগী, রোগীর আত্মীয়স্বজনকে উপেক্ষা করেছেন। একজন রোগী ডাক্তারের কাছে নেহায়েতই একজন রোগী, তবে রোগীর পরিবারের কাছে তিনি একটি দালানের মজবুত খিলানের সমতুল্য। হায়াত-মউত মানুষের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সৃষ্টির জন্য নিধাির্রত। তবুও সে মৃত্যু যদি কারো অবহেলা, তাচ্ছিল্য ও উপেক্ষার কারণে হয়, তাহলে তার অপরাধ খুনের অপরাধের চাইতে কোনো অংশে কম নয়। ডাক্তারদের ওপরে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। তবে বেশির ভাগ ডাক্তার, তাদের ওপর অপির্ত দায়িত্ববোধÑ যা মানবীয় গুণাবলির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তা কতটুকু পালন করেন? এই প্রশ্ন আজ সবর্ত্র উঠেছে! ‘জীবে দয়া করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর’ একথাগুলো হাল আমলের ডাক্তারদের বেলায় খাটেকি? মানুষ হলো জীবের মধ্যেই শ্রেষ্ঠতম, আল্লাহ বলেছেন, ‘যে একজন মানুষ হত্যা করল, সে পুরো মানব জাতিকেই হত্যা করল। যে একজন মানুষকে বঁাচাল সে পুরো মানব জাতিকেই বঁাচাল’। এই দুটি কথার মাঝখানেই ডাক্তারদের অবস্থান। সামান্য উদাসীনতাই তাদের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি আসতে পারে, আবার সামান্য সহানুভ‚তিই তাদের জন্য আকাশসম মযার্দা আসতে পারে। যাকে আল্লাহ বাছাই করেছেন তাকেই তিনি ডাক্তার বানিয়েছেন। আল্লাহ সৃষ্টির সেরা জীবের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ডাক্তারকে বিচরণ করার মহাসুযোগ করে দিয়েছেন। এটা কোনো ডাক্তারের অজির্ত বাহাদুরির নাম নয়, বরং সেটা আল্লাহর বিশেষ দয়া, যার মাধ্যমে ডাক্তাররা জীবিকা নিবার্হ করবেন, সৃষ্টির প্রতি মমত্ব দেখাবেন এবং পুণ্য অজর্ন করবেন। আজ আমরা কি দেখছি? আমাদের ডাক্তার সাহেবরা কি তা করছেন? হাসপাতালের ডাক্তার-কমর্চারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার এন্তার অভিযোগ বহুদিনের। অবহেলার কারণে দঁাত তুলতে গিয়েও লাশ হচ্ছে মানুষ। খোদ মহানগরীতে সন্তান প্রসব করাতে গিয়ে এক ধাত্রী প্রসূতির নাড়িভুঁড়ি বের করে দিয়েছেন। এ ঘটনায় প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে প্রসূতি মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধেও রয়েছে এন্তার অভিযোগ। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় রোগীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ফি আদায়ের পাগলা ঘোড়া থামানো যাচ্ছে না কোনোভাবেই। খেয়ালখুশি মতো বাড়ানো হচ্ছে সেবা ফি। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোয় নিয়ন্ত্রণহীন ‘সেবামূল্য’ আদায়ে রোগীদের জিম্মিসহ নানা মাত্রার হয়রানি-অত্যাচার ইংরেজ নীলকরদেরও হার মানাচ্ছে। সাধারণ রোগের জন্যও চিকিৎসকরা বিভিন্ন টেস্ট দিয়ে রোগীদের পাঠাচ্ছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখান থেকে তারা পান কমিশনের কাড়ি কাড়ি টাকা। এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে হাতিয়ে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকা। এ টাকার মোটা অংশ কমিশন হিসেবে চলে যায় ডাক্তারদের পকেটে। এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল বিভাগটি অজ্ঞাত কারণে বরাবরই চরম উদাসীন। দলবাজির কারণেও স্বাস্থ্যসেবা বিপযর্স্ত হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য সেক্টরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৫ হাজার ডাক্তারের মধ্যে আট হাজার ডাক্তার কোনোদিনই চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন না। তাদের ধারেকাছে যেমন রোগীরা যেতে পারেন না, তেমনি এসব ডাক্তারও বসেন না নিজের কমর্স্থলে। দিন, সপ্তাহ, মাস নয়, বছরের পর বছর ধরে এসব দাপুটে ডাক্তার রাজনীতি, সংগঠন, দলাদলি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ছোটাছুটি করেন আন্দোলন, মিছিল, সমাবেশ নিয়ে। তারপরও তাদের চাকরি বহাল থাকে, বেতনভাতা পান এবং সবচেয়ে লোভনীয় পদগুলোতে পদায়ন-পদোন্নতিও জোটে। খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চিকিৎসক, নাসর্, কমর্চারীদের হাতেগোনা কয়েকটি সংগঠনের কাছে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকারি প্রতিটি হাসপাতালে হাসপাতালে ওষুধ-পথ্যসহ অপারেশনসামগ্রীর কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। রোগীর জন্য বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের নিয়ম থাকলেও নামমাত্র ২/১টি ট্যাবলেট ছাড়া তেমন কোনো ওষুধ দেয়া হয় না তাদের। রোগীদের একটি সিরিঞ্জ পযর্ন্ত বাইরের ফামেির্স থেকে কিনতে হচ্ছে। বিনামূল্যের শয্যা বেচাকেনা এখন ওপেন সিক্রেট। পত্রিকাগুলো ছেপেছে হাসপাতালে রোগী দেখতে গেলেও প্রতি গেটে নাকি জনপ্রতি দিতে হয় ১০ থেকে ৫০ টাকা। টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না হাসপাতালগুলোতে। বরাদ্দকৃত অথের্র ওষুধ কিংবা সাজির্ক্যাল আইটেম রোগীদের ভাগ্যে তেমন জোটে না। তাদের সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে সুতা পযর্ন্ত প্রয়োজনীয় ৯০ ভাগ ওষুধ হাসপাতালের বাইরে থেকে কিনতে হয়। তাদের জন্য বরাদ্দ ওষুধ তাহলে কোথায় যায়? একশ্রেণির টাউট ও দালালচক্র সবর্ক্ষণ হাসপাতালের গেটে ওঁৎ পেতে থাকে। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা হাসপাতালে এলেই দালালচক্র তাদের ওপর হামলে পড়ে। এই চক্রের হাতে প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছে রোগীরা। হাসপাতালকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই দালাল চক্রের সঙ্গে রয়েছে হাসপাতালের পাশ্বর্বতীর্ ও শহরের ক্লিনিকগুলোর সম্পকর্। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো রোগী আসলেই শুরু হয়ে যায় দালাল চক্রের আনাগোনা। দালাল চক্রের পাশাপাশি হাসপাতালে পেশাদার রক্তদাতারাও সক্রিয়। বেশিরভাগ রক্তদাতাই মাদকাসক্ত। পেশাদার এসব রক্তদাতার রক্ত মারাত্মক ঝুঁকিপূণর্। প্রতি ব্যাগ রক্ত তারা ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করে। পেশাদার রক্তদাতা ছাড়াও হাসপাতাল এলাকার বিভিন্ন ওষুধের দোকান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এমনকি খাবারের হোটেলেও রক্ত পাওয়া যায়। মূলত ডাক্তারদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অনিয়মের কারণেই হাসপাতালগুলোর এ দুরবস্থা। রোগীরা যথাযথ সেবা পায় না। বিনে চিকিৎসায় রোগী মারে। সত্যিই আমাদের ডাক্তাররা দিন দিন নিমর্ম হয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সব ডাক্তার নিমর্ম তা বলব না। তবে দয়ালু নন এমন ডাক্তার বের করতে গেলে রীতিমতো কেলকুুলেটরের প্রয়োজন পরবে। পরোপকারী ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ মানুষ, দয়া মনুষ্যত্বের ভ‚ষণ ইত্যাদি কথাগুলো ডাক্তারদের ইন্ট্রানিশিপের আগে পড়ানোটা খুবই জরুরি হয়ে উঠেছে। বিদ্যা অজের্নর আগে মানুষকে বিনয়ী হতে হবে তাও শিখিয়ে দিতে হবে আমাদের কতক ডাক্তারকে। সবোর্পরি তাদের হাতে সুই-সুতা, কঁাচি ইত্যাদি তুলে দেয়ার আগে জনগণের গঁাটের খরচে একটি প্রশিক্ষণ কোসর্ বাধ্যতামূলক করা জরুরি বলে মনে করছি। সে কোসের্ কেবলই মানবীয় গুণাবলি অজের্নর বিবিধ অনুশীলনী থাকবে। ফলে এসব ডাক্তাররা যখন রোগীদের সেবা করার সুযোগ পাবে, তখন তাদের হৃদয়ে অবহেলার জায়গায় সহানুভ‚তি জেগে উঠবে। তবেই মানব সম্প্রদায় উপকৃত হবে, আর কোনো মাকে এভাবে মরতে হবে না, কোনো সন্তান এতিম হবে না । মীর আব্দুল আলীম: সাংবাদিক, গবেষক ও কলামিস্ট হবংিংঃড়ৎব১৩@মসধরষ.পড়স