চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি

বাণিজ্যিক মানসিকতা ত্যাগ করুন

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
স্বাস্থ্যসেবা একটি জনগুরুত্বপূণর্ ও স্পশর্কাতর ইস্যু হওয়া সত্তে¡ও এ নিয়ে নৈরাজ্য, হয়রানি, দুভোর্গ আর জটিলতার যেন শেষ নেই। যতই দিন যাচ্ছে এর মাত্রা অধিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাবির্ক পরিস্থিতি দেখে মনে হয় দেশের স্বাস্থ্য খাত প্রতারক মাস্তান ফঁাকিবাজ, আর দুবৃের্ত্তর খপ্পরে পড়েছে। এর থেকে নিস্তারের যেন কোনো পথ খোলা নেই। দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে নানারকম অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে। চিকিৎসকদের ভুলের কারণে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দেশজুড়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ক্লিনিক ও রোগনিণর্য় কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে কোনো ধরনের লাইসেন্স ছাড়াই। অবৈধ বøাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তো আছেই। রয়েছে অবৈধ নামসবর্স্ব হাসপাতাল ও ক্লিনিক। কেবল তাই নয়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভুয়া ডাক্তার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও রয়েছেন। দেশের স্বাস্থ্য খাতের আরও একটি সমস্যা হচ্ছে ডাক্তাররা সবাই রাজধানীমুখী, কেউ গ্রামে যেতে চান না। গেলেও গ্রামীণ দরিদ্র জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে তারা আন্তরিক ও মনোযোগী নন। অনেকেই হাজিরা দিয়ে ঢাকায় অবস্থান করেন বাণিজ্যিক কারণে। তাদের মধ্যে কোনো সেবার মানসিকতা নেই। রাজধানীতে থেকে কীভাবে টাকা কামানো যায় সে চিন্তাতেই সারাক্ষণ মশগুল থাকেন। অবস্থা যদি এমন হয় তা হলে কীভাবে গ্রামের দরিদ্র জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে? এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশের আটটি জেলার ১০টি সরকারি হাসপাতালে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুনীির্ত দমন কমিশন (দুদক)। এসময় হাসপাতালগুলোতে ৪০ শতাংশ চিকিৎসককেই অনুপস্থিত পাওয়া যায়। তবে উপজেলা পযাের্য় এ হার সবেচেয়ে বেশি দেখা গেছে। প্রায় ৬২ শতাংশ চিকিৎসকই কমর্স্থলে ছিলেন না। সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পযর্ন্ত এ অভিযানের পর দুদকের সেগুনবাগিচার কাযার্লয়ে ব্রিফিং করে এ কথা জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (ডিজি) মুনীর চৌধুরী। এই হাসপাতালগুলোয় ২৩০ ডাক্তারের মধ্যে ৯২ জনই অনুপস্থিত ছিলেন, যা হিসেবে ৪০ শতাংশ। ঢাকার বাইরে যে সাত জেলায় আটটি হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়েছে, সেখানে ১৩১ চিকিৎসকের মধ্যে ৮১ জনই অনুপস্থিত ছিলেন, যা হিসাবে প্রায় ৬২ শতাংশ। স্বাস্থ্য সেক্টরে এ অবক্ষয় অত্যন্ত দুঃখজনক। মানবসেবার চেতনা না থাকলে চিকিৎসাসেবা পরিত্যাগ করা উচিত। এর আগে খোদ প্রধানমন্ত্রী ডাক্তারদের বারবার হুশিয়ারি উচ্চারণ করার পরও পরিস্থিতির বদল হচ্ছে না। এমনকি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ডাক্তারদের গ্রামমুখী হওয়ার আহŸান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শহরে অবস্থান করেন বিধায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। এটা সত্য যে ডাক্তারদের সেবাবিমুখ বাণিজ্যিক মানসিকতা ও প্রবণতা সত্যি লজ্জাজনক। দেশের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রিক এ চিত্রের বদল ঘটাতে না পারলে জনগণ যে সঠিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করতে পারলে এটা সরকারের ব্যথর্তা হিসেবে চিহ্নিত হবে। সুতরাং যেভাবেই হোক ডাক্তারদের গ্রামমুখী করতে হবে। কোনো ডাক্তার গ্রামে না গেলে তাদের বিরুদ্ধে কাযর্কর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে ভুল চিকিৎসার জন্যও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ভুয়া চিকিৎসক, অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বøাড ব্যাংক চিহ্নিত করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে । স্বাস্থ্য খাতে যেসব জায়গায় অনিয়ম, দুনীির্ত, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য হচ্ছে, চলছে মাস্তানতন্ত্র সে সব জায়গায় সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া নাগরিক অধিকার। আর এ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।