নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ

উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যে কোনো কারণেই হোক, জনজীবনে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। ফলে সংকট সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, বিভিন্ন সময়েই লোডশেডিংয়ের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, শীতে বিদু্যৎ চাহিদা কমে হওয়ায় বছরের শুরুতে লোডশেডিং করতে হয়নি বিদু্যৎ বিভাগকে। কিন্তু অনিশ্চয়তা ছিল গ্রীষ্মে বর্ধিত চাহিদা অনুযায়ী বিদু্যৎ উৎপাদন নিয়ে। আর সে হিসাবে মার্চ-এপ্রিলে ফের লোডশেডিংয়ের শঙ্কা ছিল সব মহলেই। তবে সে শঙ্কা একেবারেই নেই বলে দাবি করছেন বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) শীর্ষ কর্মকর্তারা। লক্ষণীয় যে, শুধু তাই নয়, আবাসিক গ্রাহকের পাশাপাশি এবার শিল্প খাতেও নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যতের নিশ্চয়তা থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সঙ্গত কারণেই এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলেই প্রতীয়মান হয়। উলেস্নখ্য যে, বিপিডিবি উৎপাদন শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেবল মার্চ ও এপ্রিল নয়, পুরো গ্রীষ্ম মৌসুমে দেশে লোডশেডিংয়ের কোনো আশঙ্কা নেই। এবার চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ পাবে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান- এমনটিও জানা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিদু্যতের মূল জ্বালানি হবে এলএনজি বা তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস। এ ছাড়া জাতীয় গ্রিডে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট কয়লা বিদু্যতের পাশাপাশি প্রয়োজনে পুনরায় চালু হতে পারে ডিজেলভিত্তিক বিদু্যৎ কেন্দ্রও। ফলে আমরা বলতে চাই, যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা সুখকর বলেই প্রতীয়মান হয়। কেননা, এটা বলার দরকার পড়ে না- বিদু্যতের লোডশেডিং হলে শুধু কারখানাতেই নয়, উৎপাদন খাতসহ সব ধরনের কর্মযজ্ঞে স্থবিরতা দেখা দেয়। জনজীবন বিঘ্নিত হয়। নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিদু্যৎ সংকটের কারণে উৎপাদন কমে আসে- যা অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে যখন এটা জানা যাচ্ছে যে, কেবল মার্চ ও এপ্রিল নয়, পুরো গ্রীষ্ম মৌসুমে দেশে লোডশেডিংয়ের কোনো আশঙ্কা নেই তখন তা ইতিবাচক। যা যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছরের মাঝামাঝিতে ডলার ও রিজার্ভ সংকটে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বন্ধ ও জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধিতে ডিজেলচালিত বিদু্যৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ায় দেশব্যাপী চলে ব্যাপক লোডশেডিং। এমনকি নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিদু্যতের চাহিদা কমে গেলেও বিদু্যতের অভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে। প্রায় ৮ মাস বন্ধ ছিল দেশের ৩০টিরও বেশি গ্যাসভিত্তিক এবং সব ডিজেলচালিত বিদু্যৎকেন্দ্র- যা দেশের মোট উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে, এই বিষয়টিও এড়ানো যাবে না, এখনো দেশে ডলার সংকট কাটেনি, কিন্তু গত ২ মাসে নির্বাহী আদেশে পাইকারিতে ১ বার এবং খুচরা পর্যায়ে ৩ বারে ১৫ শতাংশ বিদু্যতের দাম বাড়ানো হয়েছে। যা আগের বছরে ১ বার গণশুনানির মাধ্যমে বাড়ানো হতো। ইতোমধ্যেই গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে এ খাতে ভর্তুকি তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি মাসে বিদু্যতের দাম সমন্বয় করছে সরকার। সে হিসাবে গত দুই মাসের ধারাবাহিকতায় এপ্রিলেও বিদু্যতের দাম বাড়বে এমনটিও আলোচনায় আসছে। আমরা মনে করি, নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যতের বিষয়টি যেমন ইতিবাচক। তেমনি দামের বিষয়টিকে সামনে রেখে জনসাধারণের সামর্থ্যর দিকটি ভেবে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, লোডশেডিং জনজীবনকে কতটা বিপর্যস্ত করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা নেই দাবি করে যখন আবাসিক গ্রাহকের পাশাপাশি এবার শিল্প খাতেও নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যতের নিশ্চয়তা থাকবে- এমন বিষয় সামনে আসছে, তখন তা সন্দেহাতীতভাবেই আশব্যঞ্জক। ফলে এর সুষ্ঠু বস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের তৎপর থাকতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।