তিন কোটি মানুষ বঞ্চিত বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা দিতে হবে

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পানির অপর নাম জীবন। সঙ্গত কারণেই যদি নিরাপদ পানির সংকট সৃষ্টি হয়, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। যা আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। এটা মনে রাখা জরুরি, জীবনের অধিকার মানে পানির অধিকার। পানি থাকলেই জীবন থাকবে। পানি ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। এছাড়া সুপেয় পানির প্রাপ্তির সুযোগ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘ পানি অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু এটা লক্ষ্য করা দরকার, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে তীব্র পানি সংকট। দেশেও সুপেয় পানির জন্য চলছে হাহাকার। উপকূলের নারীদের পানির জন্য মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলে খাবার পানি এখন দুষ্প্রাপ্য। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, সুপেয় পানি পাচ্ছেন না দেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলে সুপেয় পানি যেন সোনার হরিণ! আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে সৃষ্ট বাস্তবতা আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করা। বলা দরকার, পানির জন্য যখন এমন হাহাকার, তখন গতকাল পালিত হলো, 'বিশ্ব পানি দিবস'। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব পানি দিবস-২০২৩ পালিত হয়েছে। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য 'নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন-ত্বরান্বিত করা'। আমরা উলেস্নখ করতে চাই, আগামী দিনগুলোতে পানি নিয়ে বিশ্ব যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে এই বিষয়টিকে সহজ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, এই আলোচনাও সামনে আসছে যে, পানির দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না প্রায় তিন কোটি মানুষ। অন্যদিকে, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মাত্র ৫৬ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রায় পাঁচ হাজার শিশু মারা যায় সুপেয় পানির অভাবে। আশঙ্কাজনকভাবে ঢাকার পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে ঢাকায় সমুদ্রের লবণ পানি চলে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানা যায়, রাজধানীবাসীর ব্যবহৃত পানির ৮৬ ভাগই ভূগর্ভস্থ পানি। মাত্র ১৪ ভাগ পানি উপরিভাগের। দেশে এক কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় সাড়ে ১৬শ' লিটার পানির প্রয়োজন হয়। এতে সেচের পানি সংকটও তীব্র হচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে প্রতি বছর গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল পাঁচ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে এটাও অনুধাবন করা দরকার, বাংলাদেশে চাষাবাদ বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। বৃষ্টি না হওয়ায় মৌসুমে ফেটে চৌচির হয় ফসলের মাঠ। বাংলাদেশে আমন ও বোরো ধান আবাদের মৌসুমে নদনদীতে পানি পাওয়া যায় না। উন্মুক্ত জলাশয়, পুকুর, খাল-বিল শুকিয়ে চৌচির হয়। এ ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া জরুরি, গবেষকরা বলছেন, দ্রম্নত বরফ গলার কারণে আগামী ৪০ বছরের মধ্যে পুরোপুরি ভেসে যাবে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেকংসহ প্রধান ১০টি নদী ও তাদের অববাহিকাগুলো। ফলে পানির জন্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে এই অঞ্চলের বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, চায়না, আফগানিস্তান, কম্বোডিয়া, ভুটানসহ আটটি দেশের মানুষ। ২০৩০ সাল নাগাদ পানির অভাবে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় ধান, গম ও ভুট্টার ফলন ১০ শতাংশ কমে যাবে। পানির অভাবে এই অঞ্চলের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে। ফলে সার্বিক বিষয়গুলো এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। অগ্রগতির ধারায় সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ। ফলে এই উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ পানিও নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পায়নের পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে নিরাপদ পানির জোগান সংকুচিত হচ্ছে- এমন বিষয় পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। ফলে এই বিষয়গুলো এড়ানো যাবে না। সচেতন হতে হবে সবার। এটা মনে রাখতে হবে, নিরাপদ পানি ছাড়া পৃথিবী প্রাণহীন। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে নিরাপদ পানির বিষয়টিকে সামনে রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকবে এমনটি কাম্য।