বন্ধ পাটকল চালুর উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা ও বহুমুখী ব্যবহার বাড়ছে। দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবেও পরিচিত পাট। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধ রয়েছে। অবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালুসহ ৬ দফা দাবিতে পাটকল রক্ষায় সংবাদ সম্মেলন করেছে সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পাটচাষ এবং পাটশিল্পের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি জড়িত। বাংলার পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ পাট। উন্নত মানের পাটের জোগান সহজলভ্য হওয়ায় পাকিস্তান আমলে পাটশিল্প ছিল একক বৃহত্তম শিল্প। ২০২০ সালের ২ জুলাই সরকার ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেয়। মিল বন্ধের দুই মাসের মধ্যে সব পাওনা পরিশোধের অঙ্গীকার করলেও এখন পর্যন্ত অনেক শ্রমিক এরিয়াসহ তাদের বকেয়া পাওনা পায়নি। ১৯৬৯-এর গণ-অভু্যত্থানসহ বাংলাদেশের অভু্যদয়ের ইতিহাসের সঙ্গেও পাটশিল্প শ্রমিকরা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। স্বাধীনতার পর ৭৭টি পাটকল জাতীয়করণ করার মধ্য দিয়ে বিজেএমসির যাত্রা শুরু হলেও তা বাড়িয়ে ১৯৮২ সালে বিজেএমসির অধীনে পাটকল ছিল ৮২টি। কিন্তু তারপর থেকে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের পরামর্শে এই পাটকলগুলো বন্ধ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, অর্থের অভাব এই পাটকলগুলো বন্ধের কারণ নয়। অলাভজনক অনেক খাতে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু করতে হবে। লোকসানের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং লুটপাটকারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ শাস্তি দিতে হবে। এটা সত্য, করোনাভাইরাস মহামারির ফলে সারা বিশ্বের অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশেও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কর্মহীন হয়েছে। এসএমই শিল্পে এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিক কর্মহীন হয়েছে। গার্মেন্টস খাতের উৎপাদন পুরোদমে হয়নি। ফলে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। কিন্তু করোনা বাংলাদেশের পাটশিল্পের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসছিল। করোনা পরবর্তীকালে পাটজাত পণ্যের চাহিদা যে পরিমাণ বেড়েছে, তা উৎপাদন এবং সরবরাহের সক্ষমতা একমাত্র বাংলাদেশের রয়েছে। এটা আমাদের বিরাট এক সম্ভাবনার জায়গা ছিল। এমন সময় পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়া জাতির জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তিন মাসের মধ্যে কারখানাগুলো চালু করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারখানা চালুর কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এত বড় একটি জাতীয় শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। বর্তমানে একমাত্র পাটশিল্পে ৬ মাসে দেড় লাখ লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব। বর্তমানে ৯ হাজার কোটি টাকার পাটপণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়। আগামী এক বছরের মধ্যে বার্ষিক ২০ হাজার কোটি টাকার পাটজাত পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পাটকল চালু করার বিকল্প নেই।