গণহত্যা দিবস জাতীয় জীবনে গভীর ক্ষত
প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোক, বেদনা, রক্তক্ষয় ও সংগ্রামের। ২৫ মার্চ কালরাত এই ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক ঘৃণ্য অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ) স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য অপারেশন সার্চলাইট নামে একটি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। রাজারবাগ, পিলখানা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অগণিত লাশ পড়ে থাকে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সংঘটিত হিটলারের গেস্টোপো বাহিনীর নিধনযজ্ঞের চেয়েও ছিল ভয়ংকর। ভিয়েতনামে মার্কিন সেনাদের দ্বারা সংঘটিত মাইলাই হত্যাকান্ডের চেয়েও ছিল বড় নির্মম ও পাশবিক। তাই বাঙালির জীবনে ২৫ মার্চ কালরাত নিষ্ঠুরতম ভয়াবহ রাত। মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। এই গণহত্যা চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করার আগপর্যন্ত। আশার কথা, জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ার পর থেকেই জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল উত্তাল ঘটনাবহুল মাস। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ হঠাৎ এক হটকারী সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার আপামর জনতা। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে জনসাধারণের ওপর পাকিস্তানি হামলার কথা চিন্তা করে শেখ মুজিব ৭ মার্চের বিশাল জনসভায় সমবেত জনতাকে 'প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে' ও 'স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম' করতে বলেন। ভাষণ সমাপ্তির প্রাক্কালে তার আহ্বান 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' পূর্ব বাংলার জনসাধারণকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করল। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল। মূলত মার্চের প্রথম দিনগুলো ছিল খুবই উত্তাল। তখন দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন চলছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। গোটা বিশ্বকে তিনি জানিয়ে দিলেন '৭০-এর নির্বাচনে ম্যানডেটের পর ৬ দফা মেনে না নিয়ে পূর্ব বাংলাকে শাসন করার কোনো অধিকার পাকিস্তানের নেই। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, যদিও তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় সাংবিধানিক যোগ্যতা অর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়া তার লক্ষ্য নয়, তিনি বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান। তার এই অনমনীয় মনোভাবের কারণে কেন্দ্রীয় সরকার যুদ্ধ করে বাংলাদেশ পুনর্দখল করতে চায়।
রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ভবনগুলোতে, বাড়িতে, গাড়িতে কালো পতাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৪ মার্চ, ১৯৭১ শেখ মুজিবের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের বৈঠক হয়। কোনো প্রকার নতিস্বীকার না করার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধু। পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে। ওই রাতেই ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়ি থেকে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানে। গ্রেপ্তারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এখানে বিশেষভাবে উলেস্নখ্য, পাকিস্তানের জন্মের শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে বশীভূত করা হয়। যদিও পূর্ব পাকিস্তান পাট রপ্তানির মাধ্যমে সমগ্র পাকিস্তানের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত, পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে তার অধিকাংশই বিনিয়োগ করা হতো। পাকিস্তানের পরিকল্পনা কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৫০-১৯৭০ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সামগ্রিক বাজেটের শতকরা ২৮.৭ ভাগ ব্যয় করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ অনুভব করেছিল, তাদের পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এই বৈষম্য দূর করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে স্বায়ত্তশাসনের জন্য ছয় দফার একটি পরিকল্পনা রচনা করেন। ছয় দফা এক দফায় পরিণত হয়। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ আর আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আসে কাঙ্ক্ষিত মুক্তি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার ৫২ বছর অতিক্রম করেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে ওই গভীর ক্ষত বাঙালি কোনো দিনও ভুলতে পারবে না।
ইতিহাস গড়ে সিরিজ জয়
টাইগারদের অভিনন্দন
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আবারও আরেকটি জয় উপহার দিল। এবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এক সিরিজ দুই হাত ভরিয়ে দিল স্বাগতিক বাংলাদেশকে। আগের দুই ম্যাচে দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ডও ভাঙাগড়া হলো। তথ্য মতে, সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ১০ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। এই জয়ে টাইগারদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
উলেস্নখ্য, এবার টাইগারদের রানের পাহাড়ে যেন চাপা পড়তে না হয়, সে জন্য প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিল আইরিশরা। কিন্তু তাতে হয়ে গেল আরেক রেকর্ড। কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০২ রান তাড়া করে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটাও ২-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে তামিম ইকবালের দল। বাংলাদেশ রেকর্ডগড়া ৩৪৯ রান করার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল। না হলে হয়তো ৩-০ ব্যবধানে আইরিশদের হোয়াইটওয়াশ করার কীর্তিটাও লেখা থাকত টাইগারদের নামের পাশে।
প্রসঙ্গত আমরা এটা বলতে চাই যে, করোনায় বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সারা বিশ্বেই। করোনাভাইরাসের প্রভাবে মানুষের জীবনযাপন হয়েছে বিঘ্নিত, বিভিন্ন খাতেও এর ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল। আর করোনাভাইরাসের প্রভাব ক্রীড়াঙ্গনেও পড়েছিল ব্যাপকভাবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসে। আর ক্রীড়াঙ্গনে গতি ফিরতে শুরু করে। এর সঙ্গে সঙ্গে টাইগাররাও এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে এবার যখন আরেকটি জয় উপহার দিল টাইগাররা তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আর এটি শুধু সুখকরই নয়, বরং প্রেরণারও। এটিকে আমলে নিয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। যে কোনো ধরনের সংকট থাকলে তা মোকাবিলায় দেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নেও কাজ করতে হবে। জয়ের আনন্দকে অনুপ্রেরণা এবং শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। একইসঙ্গে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে।
এবারে সিরিজ জয়ের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ১০২ রানের। তামিম ইকবাল আর লিটন দাস মিলেই এই লক্ষ্য পেরিয়ে গেছেন। সেটাও মাত্র ১৩.১ ওভারে। ওয়ানডেতে এর আগে উইকেটের হিসাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়টি ছিল ৯ উইকেটের। পাঁচবার প্রতিপক্ষকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। কিন্তু ছিল না ১০ উইকেটের জয়। তিন সংস্করণ মিলিয়েই এদিন বাংলাদেশের প্রথম ১০ উইকেটের জয় এটি। দেখা যায়, এবারে জয়ের মঞ্চ গড়ে দেন পেসার হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেন চৌধুরী। পেসত্রয়ীর বোলিং দু্যতিতে ঝলসে যায় যেন আইরিশ ব্যাটিং। গতি, সুইং আর দুর্দান্ত স্কিলের মিশেলে তিন পেসার মিলে গড়লেন ইতিহাস। একদিকে পেসার হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেন গড়লেন নতুন ইতিহাস। অন্যদিকে দেশের ক্রিকেটে প্রথমবার পেসাররা পেলেন ১০ উইকেট। এরপর বাকি কাজ সহজেই সারলেন দুই ওপেনার। বাংলাদেশ পেল আরও একটি দুর্দান্ত জয়। এ ছাড়া এর আগে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে রানের ব্যবধানে সর্বোচ্চ জয়। এদিন উইকেটের ব্যবধানেও নিজেদের সর্বোচ্চ জয় পেল টাইগাররা।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ দলের এই অর্জন ইতিবাচক এবং আশাপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সঙ্গত কারণেই জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে সর্বাত্মক পদক্ষেপও জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, টাইগাররা বারবার দেশে সুনাম ছড়িয়েছে, সারা বিশ্বের সামনে দেশকে উজ্জ্বল করেছে বারবার। ফলে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সব ধরনের প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাবে আরও বহুদূর- এমন লক্ষ্যকে সামনে রেখে ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।