বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানী ঢাকার দূষণের বিষয়টি নতুন নয়। নানা সময়ে এই বিষয় আলোচনায় এসেছে যে, দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যে সব তথ্য উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় গত শনিবার ঢাকার অবস্থান ছিল সপ্তম। বেলা ১১টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই-বায়ুর মান সূচক) স্কোর ছিল ১৪০। এ ক্ষেত্রে এটাও উলেস্নখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে দূষিত শহরের তালিকায় বেশির ভাগ সময়েই শীর্ষে ছিল ঢাকা। ফেব্রম্নয়ারিতেও বেশিসংখ্যক দিন অস্বাস্থ্যকর বায়ুর মধ্যে কাটিয়েছে নগরবাসী। এ ধারাবাহিকতা রয়েছে মার্চেও। মূলত প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কিনা, তা জানায়। আমরা মনে করি, বিভিন্ন সময়েই রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত বিষয় সামনে আসছে- যা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। স্মর্তব্য যে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে দুই দশমিক পাঁচ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ (পিপিএম) যদি শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বাতাসকে বায়ু মানের সূচকে (একিউআই) 'ভালো' বলা যায়। এই মাত্রা ৫১-১০০ হলে বাতাসকে 'মধ্যম' মানের ও ১০১-১৫০ হলে 'বিপদসীমায়' আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর পিপিএম ১৫১-২০০ হলে বাতাসকে 'অস্বাস্থ্যকর', ২০১-৩০০ হলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' ও ৩০১-৫০০ হলে 'বিপজ্জনক' বলা হয়। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে এবং বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এটা এড়ানো যাবে না- এর আগে এমন খবরও প্রকাশ পেয়েছে যে, ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী আশপাশের ইটভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের গবেষণায় উঠে এসেছিল, সারাদেশে ইটভাটা আছে প্রায় ৮ হাজার। আর ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে রয়েছে সাড়ে ৭০০টির বেশি। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, ইটভাটাগুলো প্রতি মৌসুমে ২৫ লাখ টন কয়লা ও ২২ লাখ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ায়। ইটভাটার দূষণে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ী এমনটিও জানা গিয়েছিল। সঙ্গত কারণেই সার্বিক বিষয় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে, নির্মাণ কাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলার কারণে, বিভিন্ন জিনিসপত্রসহ পস্নাস্টিক পোড়ানো এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের দূষিত বায়ুর স্তর পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার হয়ে ঢাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নাসার তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েছে ৮৬ শতাংশ। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে হবে। কেননা, একটি দেশের রাজধানী যদি নানাভাবে বায়ুদূষণের শিকার হতে থাকে তবে তা ভীতিপ্রদ। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বায়ুদূষণ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। বায়ুদূষণের মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব দূষণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। যেভাবে রাজধানীর বায়ুদূষণ হচ্ছে তা এড়ানোর সুযোগ নেই। বায়ুদূষণজনিত রোগে দেশে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বায়ুদূষণের কারণে মানুষের শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি, চুলকানিসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের প্রকোপ বাড়ছে বলেও বিভিন্ন সময়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এর আগে চরম অস্বাস্থ্যকর মাত্রায় পৌঁছেছে ঢাকার বায়ুমান এমন খবরও সামনে এসেছিল। সঙ্গত কারণেই নানাভাবে যখন বায়ুদূষণ হচ্ছে- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।