বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রমজান এলেই এ দেশে বেড়ে যায় ভোগ্যপণ্যের দাম

আজহার মাহমুদ
  ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

জাতি হিসেবে দিন দিন আমাদের অবনতি হচ্ছে এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এই অবনতি যে চরম মাত্রায় হচ্ছে সেটা অনেকেই ক্যালকুলেশন করি না। আমরা আধুনিক আসলে হচ্ছিটা কোথায় সেটা খুঁজে পাই না। আমাদের মননে, মানসিকতায়, নৈতিকতায়, সততায় নিয়মিত ভাটা পড়ছে। প্রতি বছরই একটু একটু করে আমাদের নৈতিকতা বিসর্জন দিচ্ছি। দিন যত যাচ্ছে আমরা যেন ততই উলঙ্গ হয়ে যাচ্ছি। শরীরে কাপড় থাকলেই উলঙ্গ হওয়া থেকে বাঁচা যায় না। সত্যি বলতে, আমরা আমাদের কাজকর্মে নিয়মিত উলঙ্গ হচ্ছি।

আমরা ধর্মকে নিয়ে কতই না বড়াই করি, আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রক্ত গরম হয়ে না-কি মাথায় উঠে আসে। কি চরম মাত্রার ধর্মীয় অনুভূতি আমাদের। বেশ ভালো বিষয়, ধর্মকে বাঁচাতে হবে, ধর্মের প্রতি টান, সম্মান, শ্রদ্ধা থাকতে হবে। কিন্তু ধর্মকে পুঁজি করে ব্যবসা করা, ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে মানুষকে বিপদে ফেলা, এককথায় মানুষ মারা এটা ধর্মের কোথায় আছে? ইসলামের কোথায় আছে? এই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কষ্টের বেলায় এইসব অসাধু মুসলমানদের রক্ত কোথায় ওঠে? মাথায় তো উঠতে দেখি না, হাঁটু পর্যন্ত ওঠে কিনা সেটা নিয়েই ভাবছি।

মাহে রমজান আমাদের মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি পবিত্র মাস। এই মাসে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভে মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা রোজা রাখেন। এটা ইসলাম ধর্মের একটি বিধান। প্রতিটি সুস্থ মুসলমানের জন্য এই রোজা রাখা ফরজ। সেই ফরজ কাজটি করার জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষ যখন প্রস্তুতি নেয় তখনই খায় বড় ধাক্কাটা।

এই রমজানকে কেন্দ্র করেই বাড়ানো হয় সমস্ত পণ্যের দাম। মধ্যবিত্তদের জন্য এই রমজান মাসটা হয়ে ওঠে মারাত্মক কঠিন। অসহায়ত্ব নিয়ে সেহরি আর ইফতার করতে যাওয়া মধ্যবিত্তরা না বলতে পারে দুঃখের কথা, না চাইতে পারে সহায়তা। এই সমাজ শুধু উচ্চবিত্তের আর নিম্নবিত্তের। উচ্চবিত্ত নিজেও খাবে দানও করবে। নিম্নবিত্তরা চেয়ে চেয়ে সেটা নিতে পারে। যদিও অনেক সময় নিম্নবিত্তরাও কষ্টে থাকে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি মানুষ মধ্যবিত্ত। এসব মানুষের দুঃখ যেন দেখার কেউ নেই।

রমজান এলেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ীচক্র প্রতি বছরই এই কাজটি করে থাকে। কিন্তু এর কোনো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কোনো বছরই আমরা দেখতে পাই না। দু-চার কলম লেখা আর জনগণের মন্তব্য নেওয়া এতেই যেন প্রতিবছর এর দায় শোধ করে ফেলেন সবাই। অথচ নিয়মমাফিক এই অপরাধ, অন্যায় চলছে। ভাবতে অবাক লাগে আমরাই নাকি আবার মুসলমান, ধর্মীয় অনুশাসন এবং ধর্মীয় নিয়ম-নীতিকে শ্রদ্ধা করি। কি হাস্যকর আমাদের অবস্থান।

প্রতি বছরই রমজান এলে সিন্ডিকেটটা যেন আরও সক্রিয় হয়ে যায়। আমি গত বছরের সঙ্গে এই বছরের ভোগ্যপণ্যের পার্থক্যটা শুধু তুলে ধরছি। গত বছর রমজানে ভোজ্য তেলের দাম ছিল ১৫৪ টাকা, এবার সেটা ১৯০ টাকা। ছোলার কেজি ছিল ৭০ টাকা, এবার সেটা ৯৫ টাকা। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৫০ টাকা, এবার সেটা ৮০০ টাকা। চিনির দাম ছিল ৮০ টাকা, এবার সেটা ১২০ টাকা। খোলা আটার দাম ছিল ৩৫ টাকা, এবার সেটা ৬০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৫০ টাকা, এবার সেটা ৩০০ টাকা। এভাবে সবকিছুরই দাম এবছর বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দু-তিন মাস আগেও যেসব পণ্যের দাম ছিল হাতের নাগালে এখন সেটা দ্বিগুণ হয়ে নাগালের বাইরে।

এই যখন অবস্থা তখন ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্রতি ঘৃণাটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না। মানুষ কতটা নোংরা হতে পারে সেটা এই রমজান মাস এলেই উপলব্ধি করা যায়। আরও সহজ করে বলতে গেলে আমাদের ব্যবসায়ীদের কথা বলছি, সেসব ব্যবসায়ী যারা নিজেরাই আবার রোজা রাখবে। বেগুনের কেজি ১০০ টাকা, ছোলার কেজি ৯৫ টাকা এগুলো তো রমজানকে কেন্দ্র করেই বাড়ানো হয়। এই বাড়িয়ে দেওয়া লোকগুলোও আবার রোজা রেখে আলস্নাহর কাছে গুনাহ মাফ চাইবে। কি অদ্ভুত জাতি!

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে- প্রতি বছর এভাবেই শুরু হয় আমাদের রমজান। আমাদের দেশে রমজানের শুভেচ্ছা জানানো হয় এভাবে। ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে আমরা রমজান শুরু করি। অতীব দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই বিষয়ে আমাদের প্রশাসন, সরকারও কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে না। সরকারের দুর্বলতা আর জনগণের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এভাবেই চলতে থাকে আমাদের জীবন। সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।

আজহার মাহমুদ

খুলশী-১, চট্টগ্রাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে