রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অর্থ পাচারের ঘটনা একটি বড় অপরাধ। এজন্য শাস্তির বিধান আছে, অর্থ পাচার বন্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। তদুপরি বারবার অর্থ পাচারের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ফলে অর্থ পাচারের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না কেন, এ প্রশ্নকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য যে, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, জাল নথিপত্রে রপ্তানির আড়ালে ৮৬টি চালানের বিপরীতে ২১ কোটি টাকা বিদেশে পাচার ও আত্মসাতের অভিযোগে সাবিহা সাইকি ফ্যাশনের মালিক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। তথ্য মতে, বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, শার্ট, লেগিন্স ও শালসহ বিভিন্ন পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও নাইজেরিয়ায় রপ্তানি দেখানো হয়েছে। জানা গেছে- শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহ্‌? মো. আশিকুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। চট্টগ্রামের বন্দর থানায় গত ২৪ মার্চ মামলাটি এজাহারভুক্ত করা হয়। গত ৩১ জানুয়ারি শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানে অর্থ পাচারের এমন কৌশলের বিষয়টি সামনে আসে। আমরা বলতে চাই, অর্থ পাচারের এমন কৌশল সংক্রান্ত বিষয়াদি বিবেচনা করে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে, অর্থ পাচারের মতো অপরাধ কেন রোধ হচ্ছে না, সেটিও এড়ানো যাবে না। কেননা, বিভিন্ন সময়েই অর্থ পাচার সংক্রান্ত খবর সামনে আসে- যা স্বাভাবিকতভাবেই উদ্বেগজন। এছাড়া অর্থ পাচার বন্ধ করতে সব ধরনের পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের এটা মনে রাখা দরকার, এর আগে এমন বিষয়ও পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছিল, আইনগতভাবে দেশের বাইরে টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও গত ১৫ বছরে অনেকে মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাড়ি-ফ্ল্যাট ক্রয় ছাড়াও নানা ব্যবসাবাণিজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এছাড়া বহুল আলোচিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সেও অনেক বাংলাদেশির নাম এসেছে। সঙ্গত কারণেই এই ধরনের চিত্র কতটা ভয়ানক, তা এড়ানোর সুযোগ নেই। এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, সাবিহা সাইকি ফ্যাশন মোট ৮৬টি পণ্য চালানের বিপরীতে ৯৯৭ মেট্রিক টন মেনস ট্রাউজার, টি-শার্ট, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট ও হুডি রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৭ মার্কিন ডলার বা ২১ কোটি টাকা। গত ৩১ জানুয়ারি শুল্ক গোয়েন্দার একটি টিম চট্টগ্রাম নগরের উত্তর পতেঙ্গা কাটগড় এলাকায় সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (ওসিএল) ডিপোতে অভিযান চালায়। অভিযানে জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ১৫টি বিল অব এক্সপোর্টের রপ্তানি কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়। এরপর এসব বিল অব এক্সপোর্টের রপ্তানি সংক্রান্ত দলিলাদি যাচাই করার জন্য অগ্রণী ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়। গত ২ ফেব্রম্নয়ারি ব্যাংক জানায়, সাবিহা সাইকি ফ্যাশন তাদের কোনো গ্রাহক নন। বিল অব এক্সপোর্টগুলো অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নামে ইসু্য করা হয়েছিল। এতে প্রমাণিত হয় জাল দলিলের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে ও হচ্ছিল। তাই পণ্য চালানগুলোর বিপরীতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পন্থায় দেশে আসার সুযোগ নেই বিধায় এ ক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং সংঘটিত হয়। আমরা বলতে চাই, অর্থ পাচারের এবারের ঘটনাটি আমলে নিন। একইসঙ্গে মনে রাখা দরকার, এর আগেও নানা সময়ে এটা আলোচনায় এসছে যে, অর্থ পাচারের একটি বড় কারণ হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থ পাচারের হারও দিন দিন বাড়ছে বলেও এমনটিও জানা যায়। সঙ্গত কারণেই, প্রয়োজনে আরো বেশি কঠোর হতে হবে। কেননা, যেভাবে অর্থ পাচার সংক্রান্ত উদ্বেগজনক চিত্র বিভিন্ন সময়ে পরিলক্ষিত হয় তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে এ থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা জরুরি। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, অর্থ পাচারকারীরা যাতে কোনোভাবে পার না পায়, সেটি নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার তা না হলে নানা প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচারের ঘটনা বাড়তে থাকবে এমন আশঙ্কা থাকে- যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।