আঞ্চলিক ভাষা ও ভাষার অধিকার

বাংলাদেশে বতর্মানে সবচেয়ে বেশি গণমাধ্যম রয়েছে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে। বিশেষ করে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এখন জনগণের অন্যতম বিনোদনের মাধ্যম, তাই দেখা যায় মানুষকে বিনোদন দেয়ার জন্য বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে আঞ্চলিক ভাষার নাটক। এই নাটকগুলোও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে এই আঞ্চলিক শব্দে রচিত নাটকগুলোর ডায়লগ যারা অভিনয়ের মাধ্যমে উচ্চারণ করেন সেখানে উচ্চারণজনিত ত্রæটি লক্ষ্য করা যায়।

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন
মনের ভাব আদান-প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হলো ভাষা। মানুষ শব্দ উচ্চারণ করে ভাষার মাধ্যমে তার মনের ভাব কবে বা কত বছর আগ থেকে প্রকাশ করতে শুরু করেছিল তা সঠিকভাবে নিধার্রণ করা যাবে না। বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র থেকে জানা যায়, এক সময় মানুষ ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করত। পরবতীর্ সময়ে এক ধরনের শব্দ উচ্চারণ করে যা অনেকটা এখানকার দিনের চিৎকার বলা যায় তার মাধ্যমে প্রকাশিত হতো মানুষের মনের ভাব। অনুশীলনতার মাধ্যমে কালক্রমে তা পরিবতির্ত হয় আজকের ভাষার রূপ লাভ করে। মানুষ একপযাের্য় এসে শব্দের মাধ্যমে তার মনের ভাব প্রকাশ করতে শুরু করে, আর এই শব্দগুলোই মানুষের ভাষা হিসাবে পরিগণিত হয়ে ওঠে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত মানুষ বিভিন্ন ধরনের শব্দের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে মনের ভাবের আদান-প্রদান করত। তাই দেখা যায়, পৃথিবীর একেক অঞ্চলের মানুষ একেক ধরনের ভাষায় কথা বলে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ যে শব্দগুলো ব্যবহার করে তার মধ্যে রয়েছে অথর্গত পাথর্ক্য অথার্ৎ দুনিয়াজুড়ে মানুষ মাকে মা শব্দ ব্যবহার করে ডাকে না, যেমনটি বাংলাদেশে মানুষ ব্যবহার করে। ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, যে মানুষ যে অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছিল সেই অঞ্চলের প্রাকৃতিগত ভৌগোলিক অবস্থা এবং জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শব্দের ব্যবহার শুরু করে। মানুষ জন্মগতভাবে প্রকৃতিনিভর্র প্রাণী। প্রতিটি মানুষ জন্মের পর বেড়ে ওঠে প্রকৃতির নিয়মে। তাই দেখা যায় ভৌগোলিক প্রাকৃতিকতার ভিন্নতায় মানুষের মধ্যে রয়েছে শব্দের ব্যবহারের ভিন্নতা। মানুষ তার ব্যবহৃত শব্দগুলো লিপিবদ্ধ করার জন্য বণের্র উদ্ভব ঘটায়। ভৌগোলিক প্রাকৃতিক পরিবেশগত বিষয়টির ওপর নিভর্র করে সৃষ্টি হয়েছে মানুষের সংস্কৃতি। নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য শব্দের মাধ্যমে সংরক্ষণের জন্য মানুষ বণের্র উদ্ভাবন করে। আর বণর্ উদ্ভাবনেও দেখা যায় সেখানে রয়েছে অঞ্চলগত ভিন্নতা। সুতরাং পৃথিবীতে যেমন হাজার রকমের ভাষা রয়েছে তেমনই রয়েছে হাজার রকমের বণর্। ভাষার উদ্ভব হয় প্রকৃতির উপর নিভর্র করে। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু ভাষা রয়েছে যে ভাষাসমূহের নিজস্ব বণর্ নেই। সেই ভাষাগুলো লিখিতরূপ পায় অন্য ভাষার বণের্র মাধ্যমে। তবে প্রতিটি ভাষার উৎপত্তি হয়েছে সেই অঞ্চলের প্রচলিত সংস্কৃতির উপর নিভর্র করে। অথার্ৎ সংস্কৃতির বিষয়কেই লালন করে ওই অঞ্চলে ভাষা। তাই প্রতিটি অঞ্চলের ভাষাই হলো ওই অঞ্চলের সংস্কৃতির প্রতীক। প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষাই হলো সেই অঞ্চলের প্রাচীন ঐতিহ্যর প্রবাহমান সাংস্কৃতিক ধারা। তাই প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষার প্রতি অন্য অঞ্চলের মানুষের নিজ অঞ্চলের ভাষার মতো শ্রদ্ধা করা উচিত। পৃথিবীতে মানবজাতির জীবনযাত্রার শুরু পর আদিম সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। আদি সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষ তার চাহিদা সমাজ থেকেই পূরণ করতে পারত, মানুষের কমর্সহ চাহিদা পূরণের পরিমÐল সমাজকেন্দ্রিক ছিল। সেই সময়কার সমাজব্যবস্থায় কমর্কাÐ পরিচালনার জন্য সৃষ্ট শব্দগুলোই তাদের ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু হয়। ওই সময় দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা আদিম সমাজগুলোয় প্রতিটির একটি করে নিজস্ব শব্দমÐিত ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। তাই দেখা যায় এক গোত্র বা এক সমাজের ভাষা ও শব্দের সঙ্গে অন্য গোত্রের ভাষা এবং শব্দের পাথর্ক্য। জনসংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গোত্র বা সমাজভিত্তিক ভাষাই আঞ্চলিক ভাষায় পরিণত হয় এবং সেই ভাষাই জাতীয় রূপ লাভ করে রাষ্ট্র গঠনের পর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে। পৃথিবীতে যখন মানুষ জীবনধারণের জন্য এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে আরম্ভ করে তখনই এক অঞ্চলের ভাষার অনুপ্রবেশ অন্য অঞ্চলে ঘটে থাকে আর এভাবে ভাষার সংমিশ্রণ ঘটে। সব রাজারা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল জয় করেও নিজেদের ভাষাকে ওই অঞ্চলে প্রচলন ঘটায়। তাছাড়া ধমর্ প্রচারকদের মাধ্যমেও এক অঞ্চলের ভাষা অন্য অঞ্চলে প্রসারিত হয়। আধুনিক যুগে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটার পর থেকে দেখা যায় পঁুজি বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা লাভ করার জন্য পঁুজিবাদীরা নিজেদের বাজার অঞ্চলে নিজেদের ভাষার প্রচলন ঘটায়। বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে জ্ঞান বিজ্ঞান এবং শিক্ষার ব্যবস্থায় যে ভাষাগুলো এগিয়ে আছে সেই ভাষাগুলোর মাধ্যমে জ্ঞান আহরণের জন্য মানুষ ওই ভাষাগুলো শিখতে শুরু করে এবং সেই ভাষার মাধ্যমে নিজ জাতিকে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালায় এবং শিক্ষার ভাষাগুলো আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে মিশ্রিত হয়। তা ছাড়া সাংস্কৃতিক বিনোদনমূলক বিষয়গুলোর মাধ্যমেও এক অঞ্চলের ভাষা অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করে। আর এভাবেই শুরু হয় এক ভাষার সঙ্গে অন্য ভাষার সংমিশ্রণ। আথির্ক এবং সাংস্কৃতিকভাবে যারা সমৃদ্ধ তারা জনসংখ্যার অনুপাতে পৃথিবীর অন্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে অনেক কম হওয়ার পরও, তাদের ব্যবহৃত ভাষার দাপট তাবৎ দুনিয়াজুড়ে বিস্তার করে আছে। বৈশ্বিক রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে ভাষার আগ্রাসনের বিষয়টিও জড়িত রয়েছে। ১৪০০ শতাব্দীর আগে ইংরেজি ভাষার প্রচলন সারা বিশ্বব্যাপী এখনকার মতো ছিল না। ১৪ শতাব্দীতে বৃটিশরা পৃথিবীর এক এক করে বিভিন্ন অঞ্চল নিজেদের করায়ত্ত করতে শুরু করে আর এর ফলে সারা বিশ্বজুড়ে ইংরেজি ভাষা তার আধিপত্য স্থাপন করে ফেলে। তাছাড়া সেই সময় ইংরেজরা শিল্প, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানেও পৃথিবীর অন্য ভাষাভাষীদের চেয়ে একটু এগিয়ে ছিল। সেই সময় প্রায় অধের্ক পৃথিবী ইংরেজদের শাসনাধীন ছিল। তখন থেকে দেখা যায় ইংরেজি ভাষা পুরো বিশ্বেই নিজেদের আধিপত্য বিস্তার স্থাপন করে ফেলে। বতর্মানে সারা বিশ্বের শিক্ষার অন্যতম মাধ্যমটি ইংরেজি ভাষা। সাংস্কৃতি বিনোদনেও ইংরেজি ভাষা একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। যার জন্য দেখা যায়, ইংরেজি ভাষাই আন্তজাির্তক ভাষা হিসেবে স্থান দখল করে আছে। সারা পৃথিবীতে ইংরেজি ভাষা যাদের মাতৃভাষা তাদের জনসংখ্যা কত, যদি হিসাব করা হয়, তাহলে দেখা যাবে বাঙালিদের চেয়ে অনেক কম। ভাষাভাষী হিসেবে হিসাব করলে ইংরেজরা সংখ্যালঘু অথচ এই সংখ্যালঘুদের ভাষার দাপটই সারা দুনিয়াজুড়ে। পৃথিবীতে কৌশলে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে বা কথিত জ্ঞান বিস্তারের কথা বলে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বল প্রয়োগেও ভাষার আগ্রাসন ঘটছে। পুঁজি যেভাবে বাজার দখল করে ঠিক তেমনিভাবে ভাষাও বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে আসছে পঁুজির মুনাফার জন্য। বতর্মানে বিনোদনের নামে চলছে ভাষার আগ্রাসন। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার আঞ্চলিকগত কারণে শব্দের উচ্চারণ এবং শব্দের অথের্র পাথর্ক্য দেখা যায়। সারা পৃথিবী না ধরে শুধু ছাপান্ন হাজার বগর্মাইলের বাংলাদেশে রয়েছে ভাষারই নানা আঞ্চলিকতার নানা রূপ। বাংলাদেশে বাংলা ভাষারই রয়েছে প্রায় শতাধিক আঞ্চলিকতার প্রকারভেদ আর এই প্রকারভেদটা দৃশ্যমান হয় শব্দগত অথের্ভদে এবং উচ্চারণে। সারাদেশ নয়, শুধু একটি বৃহত্তর জেলাকে উদাহরণ নিলে দেখা যাবে যে বাংলা শব্দের ব্যবহারিক অথর্ এবং উচ্চারণের রয়েছে বেশ কিছু পাথর্ক্য। রাজশাহী অঞ্চলের নওগঁা, নাটোর, চঁাপাই নবাবগঞ্জ এবং রাজশাহীর এই চার জেলার মানুষ যে বাংলা শব্দ ব্যবহার করেন তাদের ব্যবহৃত শব্দের অথর্ এবং উচ্চারণগত পাথর্ক্য এক জেলার সঙ্গে অন্য জেলার রয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে পাথর্ক্যটা লক্ষ্য করা যায় অঞ্চল থেকে অঞ্চল ভেদে। বরিশাল অঞ্চলের মানুষের ব্যবহৃত শব্দের সঙ্গে গুলির মধ্যে ওই অঞ্চলের পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, বরিশালের পাথর্ক্যটাও লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া বৃহত্তর অঞ্চল হিসেবে বরিশাল, রাজশাহী, ময়মসসিংহ, রংপুর, সিলেট চিটাগাংসহ বাংলাদেশের সাবেক জেলাগুলোর মানুষের কথা বলার ব্যবহৃত শব্দগুলোর অথর্ এবং উচ্চারণগত বিষয়ে অমিলটা লক্ষণীয়। এ ধরনের আঞ্চলিক ভাষাকে সংরক্ষণের জন্য ওই অঞ্চলে কবি-সাহিত্যিকরা রচনা করেছেন কবিতা উপন্যাস গল্প আর বিশেষ করে সংগীতশিল্পীরা আঞ্চলিক শব্দগুলো ব্যবহার করে গেয়েছেন গান যা সারা দেশে পেয়েছে জনপ্রিয়তা। অঞ্চলভিত্তিক এই গানগুলোর আঞ্চলিক নামকরণ আছে। বাংলাদেশে বতর্মানে সবচেয়ে বেশি গণমাধ্যম রয়েছে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে। বিশেষ করে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এখন জনগণের অন্যতম বিনোদনের মাধ্যম, তাই দেখা যায় মানুষকে বিনোদন দেয়ার জন্য বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে আঞ্চলিক ভাষার নাটক। এই নাটকগুলোও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে এই আঞ্চলিক শব্দে রচিত নাটকগুলোর ডায়লগ যারা অভিনয়ের মাধ্যমে উচ্চারণ করেন সেখানে উচ্চারণজনিত ত্রæটি লক্ষ্য করা যায়। যেমন ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় যিনি ডায়ালগ বলবেন তাকে অবশ্যই যথাথর্ভাবে ওই অঞ্চলের মানুষের মতো উচ্চারণ করতে হবে, উচ্চারণের অবিকল না হলে তা হয় ওই অঞ্চলের ভাষাকে বিদ্রƒপ করার শামিল। দেখা যায় এ দেশের কথিত শিক্ষিত সমাজে যদি শুদ্ধ বাংলা কোনো আঞ্চলের মানুষ উচ্চারণ করতে না পারে তখন তাকে নিয়ে চলে নানা ধরনের ঠাট্টা বিদ্রƒপ। দেখা যায় এ দেশের কথিত শিক্ষিত সমাজে যদি শুদ্ধ বাংলা কোনো অঞ্চলের মানুষ যথাযথভাবে বলতে না পারে তাকে বলা হয় মূখর্। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যদি কেউ ময়মনসিংহ অঞ্চলের ব্যবহৃত শব্দগুলোর যথাযথ উচারণ করতে না পারে তাহলে কেন তাকে বিদ্রƒপ করা যাবে না বা মূখর্ বলা হবে না। প্রতি অঞ্চলের মানুষের ভাষার ব্যবহৃত শব্দ এবং উচ্চারণ হলো তার মাতৃভাষা। প্রত্যেকটি মানুষই তার মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং নিজ মাতৃভাষার জন্য গবের্বাধ করে। আঞ্চলিক ভাষা উচ্চারণের মাধ্যমে মানুষ তার মাতৃভাষারই প্রকাশ ঘটায়। সুতরাং এখন যদি কেউ জ্ঞাত বা অজ্ঞানে কোনো আঞ্চলিক শব্দগুলো উচ্চারণে ত্রæটি ঘটায় তা যদি জ্ঞাতসারে হয় তাহলে হবে অপরাধ আর অজ্ঞাতসারে হলে এই ভাষার উপর চচার্ করে অজ্ঞানতা দূর করতে হবে। কিন্তু তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না কোনো আঞ্চলিক ভাষাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা বাঙালিদের যেমন অধিকার রয়েছে তেমনি অধিকার রয়েছে তার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার। মানুষের এই অধিকার নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রƒপ করা যাবে না আর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললে কোনো মানুষ মূখর্ হয় না। প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এ দেশের প্রতিটি মানুষেরই নৈতিক দায়িত্ব। শাহ মো. জিয়াউদ্দিন: কলাম লেখক