স্বাস্থ্য খাতে দুনীির্ত চিহ্নিত

সুপারিশগুলো আমলে নেয়া জরুরি

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
‘দুনীির্ত’ আমাদের দেশে বহুল আলোচিত বিষয়ের একটি। দুনীির্তর কারণে আমাদের দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, আমরা পিছিয়ে পড়ছি- এমন তথ্য প্রায়ই উঠে আসে গণমাধ্যমে। অন্যান্য খাতের মতো দেশের স্বাস্থ্য খাতও দুনীির্তর বাইরে নয়। কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিদশর্ন শেষে ডাক্তার ও নাসের্দর কতর্ব্য-কমের্ অবহেলার বিষয়ে সতকর্ করাসহ এ খাতের দুনীির্তর বিষয়েও হুশিয়ারি দেন। তখন থেকে স্বাস্থ্য খাতে নানাবিধ দুনীির্তর বিষয়টি আলোচিত হতে থাকে। এবার স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ ১১টি খাতে দুনীির্ত বেশি হয় বলে দুনীির্ত দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনে চিহ্নিত হয়েছে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে শুক্রবার। বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাস্থ্য খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন একটি রাষ্ট্রের জন্য ভীষণ জরুরি। দেশের জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব রাষ্ট্র অস্বীকার করতে পারে না। সঙ্গত কারণেই এ খাত থেকে সব ধরনের দুনীির্ত অপসারিত হবে এটাই প্রত্যাশিত। গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, দুদকের পযের্বক্ষণে উঠে এসেছে- স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগ-বদলি ও পদোন্নতিতে ব্যাপক দুনীির্ত ও অনিয়ম রয়েছে। ডাক্তাররা সাধারণত প্রত্যন্ত এলাকায় থাকতে চান না। সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতি ও প্রশিক্ষণাথীর্ বাছাইয়ে কোনো নীতিমালা মানা হয় না। উঠে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কমর্চারীদের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ দালালচক্র গড়ে ওঠার বিষয়টি। এরা বেআইনিভাবে অতিরিক্ত অথর্ আদায় করে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পযাের্য়র ক্রয় কমিটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নিরপেক্ষ ও দক্ষ কমর্কতার্ সংযুক্ত না থাকায় অতি সহজেই সরকারি টাকা আত্মসাতের সুযোগ তৈরি হওয়াসহ ১১টি খাতের দুনীির্ত দুদকের অনুসন্ধানে চিহ্নিত হয়েছে। এসব কারণে দেশের গরিব রোগী কম মূল্যে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। দুদক আরও দেখেছে, সমাজের একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি যথাযথ সরঞ্জাম না থাকা সত্তে¡ও সিভিল সাজর্ন কাযার্লয়ের সহযোগিতায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করে থাকেন। তারা নানা উপায়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ কমর্চারীদের প্রভাবিত করে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগী পাঠাতে বলেন। বিনিময়ে কমিশন দেন। আর এ ব্যবস্থার কবলে পড়ে সাধারণ রোগীরা অযথা আথির্ক দুভোের্গর শিকার হয়ে থাকেন। আর এভাবে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনাও বেড়ে যায়। গণমাধ্যমে প্রায়ই এ ধরনের খবর আসে। আমরা মনে করি, একটি দেশের সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবা খাত এভাবে কিছুতেই চলতে দেয়া উচিত হতে পারে না। দীঘির্দন ধরেই দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের এহেন অরাজকতার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। এবার দুদকের পযের্বক্ষণে দুনীির্তর খাতগুলো চিহ্নিত হওয়ায় আমরা মনে করি, এখন এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। আমরা বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর দূরদশীর্ পরিকল্পনায় দেশ যেভাবে অথৈর্নতিকভাবে এগিয়ে চলেছে, তেমনিভাবে এই উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ছেঁায়ায় স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিতে হবে। দূর করতে হবে এ খাতের সব ধরনের দুনীির্ত। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় চিকিৎসা খাতের গুরুত্বপূণর্ অবদান ও ভ‚মিকার বিষয়টি সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা অস্বীকার করতে পারেন না। প্রত্যাশা থাকবে, সরকার এমন উদ্যোগ নিশ্চিত করুক যাতে, স্বাস্থ্য খাতের সব ধরনের নৈরাজ্য বন্ধ হয়। সবোর্পরি বলতে চাই, দুদক স্বাস্থ্য খাত পযের্বক্ষণ শেষে ১১টি দুনীির্তর স্তর চিহ্নিত করার পাশাপাশি এ খাতের দুনীির্ত প্রতিরোধে ২৫টি সুপারিশ করেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতর্ব্য হওয়া দরকার দ্রæতই সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে কাযর্কর উদ্যোগ নেয়ার। দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, দুদকের প্রতিবেদনের আলোকে মন্ত্রণালয় কাযর্কর উদ্যোগ নিলে দুনীির্ত প্রতিরোধে সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে বলে দুদক বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন। পাশাপাশি প্রশাসনিক সুবিধাথের্ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভেঙে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিদপ্তর নামে পৃথক দুটি অধিদপ্তর করারও সুপারিশ রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, বিষয়টি রাষ্ট্রের নীতি-নিধার্রণীমহল বিবেচনায় নিয়ে পরবতীর্ পদক্ষেপ নিশ্চিত করুক।