যুক্তরাষ্ট্রে রিজাভর্ চুরির মামলা

এই উদ্যোগ ইতিবাচক

প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজাভর্ চুরি দেশের ব্যাংকিং খাতে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় অথর্ কেলেঙ্কারির ঘটনা। সাইবার অপরাধের মাধ্যমে নিউইয়কের্র ফেডারেল রিজাভর্ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনাকে তখন নজিরবিহীন উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। আর রিজাভর্ চুরির অথর্ ফেরত আনতে বহু দেন দরবার হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অবশেষে চুরির ঘটনার তিন বছর পর বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক এবং এর পদস্থ কমর্কতার্সহ কয়েক ডজন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা দায়ের করল বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, রিজাভের্র অথর্ চুরি করতে ‘অনেক বছর ধরে বড় আকারের ও অত্যন্ত জটিল পরিকল্পনা’র সঙ্গে ব্যাংক এবং ওইসব পদস্থ ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। দেশের অথর্ ফেরত আনার এ উদ্যোগের জন্য সংশ্লিষ্টদের এ উদ্যোগ ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, হ্যাকাররা ‘নেসট্যাগ’ ও ‘ম্যাকট্রাক’ নামক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে ব্যাংকের নেটওয়াকের্ ঢুকতে সক্ষম হয়। পরে হ্যাকারদের অযাচিত ও অজ্ঞাত কিছু উত্তর দেয়ায় এই অথর্ তারা সরিয়ে নিতে পারে। চুরি হওয়া অথর্ নিউইয়কর্ ও ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে স্থানান্তর করা হয়। পরে এই অথর্ ক্যাসিনোর মাধ্যমে বেহাত হয়ে যায়। অন্যদিকে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক কতৃর্পক্ষ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়ের করা মামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে মামলাকে তারা স্বাগত জানিয়েছে। কারণ তারা মনে করে, এটা রেকডর্ করার সুযোগ এসেছে যে, বাংলাদেশে কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি যে কাযর্ক্রমের সূচনা করেছিল তার ভিকটিম হয়েছে ওই ব্যাংক। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে নিউইয়কর্ ফেডারেল রিজাভর্ ব্যাংক একটি স্বয়ংক্রিয় আদেশ পায় ৮১ মিলিয়ন ডলার ছাড় করার জন্য। পরে এই অথর্ ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজাল ব্যাংকের শাখায় চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্টে যায় এবং সেখান থেকে দ্রæত অথর্ উত্তোলন করা হয়। তবে অনেক দেন-দরবারের পর চুরি হওয়া অথের্র মধ্যে ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার ফেরত এসেছে। আর চুরি পর থেকেই ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল ব্যাংক বলে আসছে চুরির ঘটনাটি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তর থেকেই হয়েছে। তিন বছর আগে চুরি হওয়া ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কার একটি অ্যাকাউন্টে পাঠানো হলেও বানান ভুলের কারণে তা আবার ফেরত আসে। আমরা জানি, রিজাভর্ চুরির বিষয়টি আন্তজাির্তকভাবে আলোচিত হলে এক ক্যাসিনো মালিকের দেয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেয় ফিলিপাইন। এ ঘটনায় রিজল ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার জরিমানাও করে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জরিমানার ওই অথর্ তারা পরিশোধ করলেও বাংলাদেশের বাকি অথর্ ফেরতের দায় নিতে তারা রাজি হয়নি। ওই সময়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজাভর্ চুরির ঘটনায় ঢাকায় মামলা করা হয়। বাস্তবতা হলো, পুরো বিশ্বে আলোচিত এই সাইবার চুরির পেছনে কারা ছিল তা আজও উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। এসব ঘটনায় রিজল ব্যাংকের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি সামনে আসে। কেননা, এতবড় অঙ্কের লেনদেনগুলো ব্যাংকের বিধিবিধান অনুযায়ী সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করার কথা এবং এই অথর্ জব্দ করার নিয়ম থাকলেও তা পালন করেনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এসব ঘটনার ভেতর দিয়ে অবশেষে এই মামলা দায়ের করল বাংলাদেশ কেন্দ্রিয় ব্যাংক। বাদী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজাভর্ ও সুইফট কতৃর্পক্ষও রয়েছেন। আমরা মনে করি, রিজল ব্যাংকের এই নীরবতা অনেক কিছুরই উত্তর বহন করছে। বিশেষজ্ঞরাও এমনটি আলোচনা করেছেন। যখন রিজাল ব্যাংকের যে শাখার মাধ্যমে অথর্ সরিয়ে ফেলা হয়েছিল সেই ব্যাংকের একজন কমর্কতার্ মায়া দেগুইতোকে গত বছর দোষী সাব্যস্ত করে ৩২-৫৬ বছরের জেল ও ১০১ মিলিয়ন ডলার অথর্দÐের আদেশ দিয়েছিল আদালত। আবার সম্প্রতি ওই ব্যাংক ও সংশ্লিষ্টদের নামে মামলা করা হলেও তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বিষয়টি সন্দেহজনক বৈকি। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তিন বছর আগে চুরি হওয়া অথর্ ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের যা যা করণীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেসব পথই অবলম্বন করবে।