ঢাকা-টোকিওর মধ্যে ৮ চুক্তি স্বাক্ষর সম্পর্ক আরও দৃঢ় হোক

প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো দেশের সম্পর্ক উন্নীত হওয়া কিংবা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাওয়ার মতো বিষয় সন্দেহাতীতভাবেই ইতিবাচক। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক 'কৌশলগত অংশীদারিত্বে' উন্নীত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আগামীতে এ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। তথ্য মতে, বুধবার সন্ধ্যায় টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের শীর্ষ প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে তারা এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া উলেস্নখ্য, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতির আগে তাদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে ৮টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। জানা গেছে, কৃষি, মেট্রোরেল, শিল্প উন্নয়ন, জাহাজ রিসাইক্লিং, শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়, মেধাসম্পদ, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আইসিটি এবং সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। পরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে চুক্তিগুলো বিনিময় করা হয়। আমরা মনে করি, স্বাক্ষরিত চুক্তির বাস্তবায়ন ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। ফলে সুষ্ঠু বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। আমরা এটাও মনে করি যে, চুক্তিগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে। বলা দরকার, ঢাকা-টোকিওর সম্পর্ক 'কৌশলগত অংশীদারিত্বে' উন্নীত হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং আমি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবকিছু নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আনন্দিত যে, বাংলাদেশ ও জাপান সফলভাবে বিদ্যমান সম্পর্ককে 'ব্যাপক অংশীদারিত্ব' থেকে 'কৌশলগত অংশীদারিত্বে' উন্নীত করেছি। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, 'আমি নিশ্চিত আমাদের দুই দেশের জনগণ এবং আমাদের সরকারের মধ্যেকার বিদ্যমান চমৎকার বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা আগামী বছরগুলোতে আরও শক্তিশালী হবে।' অন্যদিকে, যৌথ বিবৃতিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, 'আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক 'কৌশলগত অংশীদারিত্বে' উন্নীত করেছি। আগামীতে এ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।' এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর করতে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে এমনটিও জানা গেছে। আমরা বলতে চাই, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী নানা বিষয়ে আলোকপাত করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা ও সম্পর্ক উন্নীত হওয়ার বিষয় যখন সামনে আসছে- তখন তা আশাব্যঞ্জক। যার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। রোহিঙ্গা ইসু্যতে ফুমিও কিশিদা বলেছেন, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। আর এটি উলেস্নখ করে এই ইসু্যতে সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, উলেস্নখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা বাংলাদেশ একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য। তিনি বলেছেন, তাদের প্রত্যাশা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। বাংলাদেশের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার হওয়ায় জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এটাও বলেছেন যে, জাপান বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। স্বাধীনতার পর প্রথম দিকে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রম্নয়ারি যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে জাপান তাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করার বিষয়টিও তুলে ধরেন। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ঢাকা- টোকিওর মধ্যে ৮টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে- এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হোক। একইসঙ্গে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকুক। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক 'কৌশলগত অংশীদারিত্বে' উন্নীত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। ফলে এটিকে সামনে রেখে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুসংহত এবং দৃঢ় হবে এমনটি আমরা আশা করি। একইসঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আরও বেশি পরিকল্পনামাফিক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।