ইংরেজিপ্রীতি

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

সবর্স্তরে বাংলাভাষা প্রতিষ্ঠা করতে হবে
ফেব্রæয়ারি ভাষা শহীদের মাস, আন্তজাির্তক মাতৃভাষা দিবসের মাস। ফেব্রæয়ারি বাঙালি জাতির শোকাবহের মাস। ফেব্রæয়ারি মাস এলেই বাংলা একাডেমিতে বইমেলা শুরু হয়। এই বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। এই মেলা একে অপরের মাঝে মেলবন্ধন তৈরি করে। বাংলাদেশের মানুষের গভীর আবেগ, ভালোবাসা ও গ্রন্থপ্রীতি যুক্ত হয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ধীরে ধীরে বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণ আর রুচি নিমাের্ণর এক অনন্য প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পরিগ্রহ করেছে। কয়েক বছর ধরে মেলার আকৃতি বেড়েছে। মেলা সম্প্রসারিত করে একাত্তরের বিজয়গাথা ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানে আনা হয়েছে। ফলে মেলার খোলামেলাভাব যেমন বজায় রয়েছে তেমনি পরিবেশও অনেক সুন্দর হয়েছে। মেলায় প্রকাশকও বেড়েছে, বেড়েছে লেখক ও বইপ্রেমী মানুষ । এই মেলা বাঙালির আবেগ, বাঙালির গবর্। একুশ আমাকে বারবার ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’র কথা মনে করিয়ে দেয়। একুশ আমাকে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দুবার্র আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়। একুশ আমাকে ‘বায়ান্ন’র কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে প্রাণ হারাল সালাম, বরকত, রফিকের মতো বীর ভাষাসৈনিকরা। ঢাকার পিচঢালা পথ শহীদের রক্তে রঞ্জিত হলো। কিন্তু বাঙালি জাতি সব প্রতিবন্ধকতাকে দলে-মুচড়ে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সোচ্চার কণ্ঠে সমস্বরে ধ্বনি তুললÑ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরপরই স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব রোপিত হয়েছিল। সেই রোপিত বীজের নাম ভাষা আন্দোলন, রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাভাষার প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রতিবাদ উঠেছিল। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে এ সম্ভাবনাময় দেশ পৃথিবীর মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামে এক ভ‚খÐের লড়াইয়ে লিপ্ত বাঙালি ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়েছে বাংলাদেশের ভাষাপ্রাণ মানুষ সালাম, রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকেই। মূলত বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনই বাঙালির স্বাধিকার অজের্নর প্রকৃত ভিত্তি। একুশে ফেব্রæয়ারির লক্ষ্য একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং গড়ার পরেও এগিয়ে যাওয়াÑ স্বাধীনতা, মৈত্রী ও সাম্যের লক্ষ্যে। সে আপস করে না, কেননা, সে জানে কোনো আপসই নিজের শতের্ হয় না, হয় নিঃশতের্। ভাষা আন্দোলনের পথই আমাদের প্রকৃত মুক্তির পথ। বাংলাভাষা কতটা প্রচলিত হচ্ছে তার নিরিখে বিচার করলেই বোঝা যাবে গণতন্ত্রের দিকে আমরা কতটা এগিয়েছি, কিংবা এগোইনি। দেশের শিক্ষা মোটেই সবর্জনীন হয়নি এবং শিক্ষিতরাও বাংলা ভাষা চচার্য় যে অত্যন্ত অধিক আগ্রহ দেখাচ্ছেন তা নয়। বীর এখন তিনিই, যিনি ইংরেজি ভালো জানেন। না, উদুর্র পক্ষে এখন কেউ বলবে না; কিন্তু বাংলার পক্ষে আন্তরিকভাবে কথা বলবেন, কাজ করবেন এমন মানুষও সমাজে কম। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, এখনো সবর্স্তরে বাংলাভাষা চালু হয়নি। ভাষার মাস এলেই সবর্ত্র বাংলা ব্যবহারের দাবি ওঠে। সবর্স্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের জন্য সবাই সোচ্চার হয়। সাইনবোডের্ বাংলা ব্যবহার না করার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়। এমন কি এই অপরাধে বুলডোজার দিয়ে গড়িয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোডর্। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো হরহামেশায় নিজেদের নামে, ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করছে। এগুলো দিনে দিনে মানুষের মুখে মুখে পরিচিত হয়ে যাচ্ছে। যা বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির জন্য হুমকি স্বরূপ। বাংলাভাষার মযার্দা রক্ষা করতে হলে যে করেই হোক দেশের সবর্স্তরে বাংলাভাষা চালু করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।