গাজীপুরে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে দয়াল কুমার বড়ুয়া
আমরা আশা করব, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজেদের সক্ষমতার যে প্রমাণ নির্বাচন কমিশন রেখেছে তা অনুষ্ঠেয় খুলনা, রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশালেও অনুভূত হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে তা ভূমিকা রাখবে।
প্রকাশ | ৩১ মে ২০২৩, ০০:০০
দয়াল কুমার বড়ুয়া
গাজীপুরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। নির্বাচনে মেয়র পদে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা গৃহিণী জায়েদা খাতুন ১৬ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকার প্রার্থী আজমত উলস্না খান।
নির্বাচনের ৪৮০ কেন্দ্রের যে বেসরকারি ফল রিটার্নিং অফিসার ঘোষণা করেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, জায়েদা খাতুন পেয়েছেন দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট আর আজমত উলস্না খান পেয়েছেন দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। এই নির্বাচনে রাজপথের প্রধান বিরোধী দলসহ কয়েকটি দল অংশ না নিলেও ভোট দিতে ভোটারদের উৎসাহের কমতি ছিল না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এটাই প্রথম নির্বাচন নয়।
টঙ্গী ও গাজীপুর পৌরসভাসহ প্রায় ৩৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। ওই বছরের ৬ জুলাই নির্দলীয় প্রতীকে হয় প্রথম নির্বাচন। দ্বিতীয় নির্বাচন হয় ২০১৮ সালের ২৬ জুন। এবার ২৫ মে ছিল এই সিটির তৃতীয় নির্বাচন।
এবার মোট ১১ লাখ ৭৯ হাজার ভোটারের এই সিটিতে ভোট করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গতবারের চেয়ে এবার গাজীপুর সিটিতে প্রায় ৪২ হাজার ভোটার বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলাকালে কোথাও অনিয়ম বা গোলযোগের ঘটনা ঘটেনি। ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রেই ছিল ভোটারদের দীর্ঘ লাইন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী, অসুস্থ, অতি বয়স্ক ভোটারদেরও ভোট দিতে দেখা গেছে। নতুন ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল উলেস্নখযোগ্য সংখ্যায়। সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সকাল থেকেই ঢাকার নির্বাচন ভবনে নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোটের পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। পরে বিকালে এক প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধভাবে হয়েছে। ভোটে যারা অংশ নিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা, বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীরা বলেছেন, নির্বাচনী পরিবেশ ও ব্যবস্থায় তারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট।
১১ লাখ ৭৯ হাজার ভোটার অধু্যষিত এত বড় একটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন এত সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে পারাটাও কম কথা নয়। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ দিতেই হবে। টান টান উত্তেজনার মধ্যেও আগাগোড়া নির্বাচনী কর্মযজ্ঞকে শান্তিপূর্ণ রাখতে পারা অবশ্যই একটি বিশাল ও প্রশংসনীয় ব্যাপার। আর এর কৃতিত্ব পুরোটাই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর। তাদেরও ধন্যবাদ। আর ধন্যবাদ গাজীপুর এলাকাবাসীকে, নাগরিক সচেতনতা নিয়ে পুরো প্রক্রিয়ায় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য।
সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকারের একটি কাঠামো। আমরা আশা করি, নতুন মেয়রের যোগ্য নেতৃত্বে গাজীপুর সিটি করপোরেশন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে যাবে।
দেশের জাতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও তাতে দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো সাড়া পড়েনি। জ্যৈষ্ঠের খরতাপে ইভিএমের ভোটে ধীরগতি সত্ত্বেও প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উলস্নার পরাজয় প্রার্থী বাছাইয়ে ক্ষমতাসীন দলের ব্যর্থতারই পরিচয়। বিজয়ী প্রার্থী জায়েদা খাতুন জয়ী হয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের জননী হিসেবে। সহানুভূতি ভোট তাকে জিতিয়ে এনেছে। শিল্পনগরী গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে হারলেও ক্ষমতাসীনদের জন্য সান্ত্বনা এতটুকু প্রদত্ত মোট ভোটের সিংহভাগই পেয়েছেন সরকারপক্ষীয় দুই প্রার্থী। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন দেশবাসীর কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
আমরা আশা করব, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজেদের সক্ষমতার যে প্রমাণ নির্বাচন কমিশন রেখেছে তা অনুষ্ঠেয় খুলনা, রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশালেও অনুভূত হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে তা ভূমিকা রাখবে।
এর গাজীপুরের ভোটযুদ্ধ সম্পর্কে বলেছিলাম স্থানীয় সরকার হলো জনগণের সরকার। নির্বাচন হলো জনগণের উৎসব। আশা করেছিলাম, গাজীপুরের নির্বাচনে দল বা প্রার্থী নয়, সুষ্ঠু ভোটযুদ্ধের মাধ্যমে যেন গণতন্ত্রের জয় হয়। শুধু গাজীপুরের মানুষ নয়, এটি ছিল দেশবাসীর প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থী, ভোটার, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের ঐকান্তিকতায়। আমরা গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে জয়ী মেয়র ও কাউন্সিলরদের অভিনন্দন জানাই। তারা ভোটারদের দেওয়া প্রতিশ্রম্নতি পালনে যত্নবান হবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।
দয়াল কুমার বড়ুয়া : কলামিস্ট ও জাতীয় পার্টি নেতা, সভাপতি, চবি অ্যালামনাই, বসুন্ধরা