দুধ ও দইয়ে ক্ষতিকর কীটনাশক

জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এবার গাভীর দুধ ও দইয়ে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে বিভিন্ন অণুজীবও। একই সঙ্গে প্যাকেটজাত গাভীর দুধেও মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসার উপস্থিতি পেয়েছে ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি (এনএফএসএল)। সংস্থাটি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আথির্ক সহায়তায় গাভীর খাবার, দুধ, দই ও প্যাকেটজাত দুধ নিয়ে সম্প্রতি এই জরিপ পরিচালনা করে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর সবকটিই মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। অকাযর্কর করে দিতে পারে লিভার ও কিডনি। সৃষ্টি করতে পারে স্নায়বিক দুবর্লতা। এমনকি ক্যান্সারেরও কারণ হতে পারে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে শিশুরা রয়েছে বেশি ঝুঁকিতে। কাজেই খাদ্যে কীটনাশকসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদাথর্ ও ভেজাল প্রতিরোধে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয়। বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এমন কোনো খাদ্যপণ্য নেই যাতে ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি মেলে না। খাদ্যপণ্যে ভেজাল দেয়াটাও যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাবের কথা জানা সত্তে¡ও একশ্রেণির অথের্লাভী মানুষ খাদ্যে ভেজাল দিয়ে আসছেন দীঘির্দন। আর এসব খেয়েই অসংক্রামক রোগের হারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অপরদিকে এসব দেখারও যেন কেউ নেই। বস্তুত, কীটনাশকের পরিমিত ব্যবহার নিয়ে সারা বিশ্বে সচেতনতা সৃষ্টি হলেও আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে তেমনটি লক্ষ্য করা যায় না। শুধু লাভের বিষয়টিই সবার বিবেচনায় থাকে। ফলে মাঝে মধ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেও তেমন কোনো সফলতার মুখ দেখতে যায় না। আমরা মনে করি, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই কীটনাশকের অতিব্যবহার রোধে কাযর্কর ব্যবস্থা নেয়া অপরিহাযর্। অভিযোগ আছে, নিয়মিত নজরদারির অভাবে একদিকে যেমন খাদ্যপণ্যে নানামাত্রিক ভেজাল রোধ করা যাচ্ছে না অপরদিকে এ ব্যাপারে জনসচেতনতাও আশানুরূপ নয়। এর আগে ফলে ফরমালিনের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। তাই সরকারকে খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধের বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা থাকলে সে সমস্যা দূর করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি হেলাফেলার নয়, বরং এটি সবাির্ধক গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ও ভেজাল মিশ্রণকারীদের সঙ্গে কোনো আপস নয়। গবেষকরা যেহেতু বলছেন, প্রায় সব গোখাদ্যে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কীটনাশকও মিলেছে কোনো কোনো খাবারে। সিসা ও ক্রোমিয়ামও আছে। আমরা মনে করি, এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক গ্রহণের কারণে মানুষের রোগ প্রতিরোধ শক্তির ওপর তা সহজেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এগুলো। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য দেখভাল ব্যবস্থাও যে মোটেও ভালোভাবে হচ্ছে না, এটা তারই প্রমাণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তথ্য মতে, গোখাদ্যের ৩০টি নমুনা গবেষণা শেষে কীটনাশক (২ নমুনায়), ক্রোমিয়াম (১৬টি নমুনায়), টেট্রাসাইক্লিন (২২টি নমুনায়), এনরোফ্লোক্সাসিন (২৬টি নমুনায়), সিপ্রোসিন (৩০টি নমুনায়) এবং আফলাটক্সিন (৪টি নমুনায়) গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রা রয়েছে। এসব ক্ষতিকর উপাদান ক্যান্সারেরও অন্যতম কারণ। গাভীর দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় সিসা পাওয়া যায়। ৯৬ শতাংশ দুধে মেলে বিভিন্ন অণুজীব। সঙ্গত কারণে আমাদের জনস্বাস্থ্য যে কতটা ঝুঁকিপূণর্ তা সহজেই অনুমান করা যায়। সবোর্পরি বলতে চাই, সারাদেশে অবাধে কীটনাশকের ব্যবহার যেমন কমাতে হবে, তেমনইভাবে খাদ্যপণ্যে ভেজাল রোধে নিতে হবে কাযর্কর উদ্যোগ। অচিরেই এই অসাধু তৎপরতা বন্ধ করা না গেলে তা ভয়াবহ বিপযর্য়ও ডেকে আনতে পারে, বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কারও যথেষ্ট কারণ হয়েছে। যে খাদ্য গ্রহণ করে একজন মানুষ বঁাচে, সেই খাদ্য নিয়ে এত হেলাফেলা করা কিছুতেই উচিৎত হতে পারে না। ফলে প্রত্যাশা থাকবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিতে আরও আন্তরিক হবে।