ইয়াবা সংশ্লিষ্টদের আত্মসমপর্ণ

মাদক নিমূর্লই হোক শেষ কথা

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে এ যাবত কম আলোচনা হয়নি। পত্রপত্রিকায়ও মাদকের ভয়াল থাবা থেকে নিষ্কৃতির নানা উপায় নিয়েও আলোচনা করেছেন বিশ্লেষকরা। সরকারও যে এ ব্যাপারে অবগত নয়, তাও নয়। আমরা লক্ষ্য করেছি, মাদক নিমূের্ল সরকারের কঠোরতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা এবং অভিযান। মাদক নিমূের্ল প্রশাসনের অভিযান দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আবার সমালোচনাও কম হয়নি। বিশেষ করে অভিযানে বিচারবহিভ‚র্ত হত্যাকাÐের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে বারবার। অন্যদিকে মাদক নিয়ে জনসচেতনতাও বেড়েছে আগের তুলনায়। এর পরও যদি মাদকের করাল গ্রাস থেকে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ মুক্ত করা না যায়, তা অত্যন্ত পরিতাপের বলেই প্রতীয়মান হয় বৈকি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ঘোষণা শুনেই যে ইয়াবা সেবন ও ব্যবসা থেমে যাবে, এমনটি মনে করারও যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে পত্রপত্রিকায় চোখ রাখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। সম্প্রতি জানা গেছে, কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা টেকনাফের তালিকাভুক্ত ৩৫ গডফাদারসহ শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমপর্ণ করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। বিষয়টি কিছুটা হলেও আশাব্যঞ্জক এবং স্বস্তিকর। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, একদিকে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আত্মসমপর্ণ করছেন; অন্যদিকে পাকস্থলীতে ইয়াবা বহনরত অবস্থায় গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ধরাও পড়ছেন ইয়াবা বহনকারীরা। এটা স্পষ্ট যে, সীমান্ত দিয়েই দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ে সবর্নাশা মাদক। সবর্গ্রাসী এ মরণ নেশার কারণে দেশের লাখ লাখ মানুষ বিশেষ করে তরুণ ও যুব সমাজ বিপথগামী হয়ে পড়ছে। মিয়ানমার থেকে সড়ক ও নৌপথে ইয়াবাসহ নানা মাদকদ্রব্য দেশে ঢুকছে আর সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের তরুণ ও যুব সমাজকে। মাদকের বিষাক্ত ছোবলে অকালে ঝরে পড়ছে তাজা প্রাণ। শূন্য হচ্ছে মায়ের বুক। অভিভাবকরা আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত কখন মাদকের নেশার জালে আটকা পড়ে তাদের প্রিয় সন্তান। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাদক নিমূের্ল সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর অসাধু সদস্যদের ম্যানেজ করেই চলে মাদকের ব্যবসা। আবার এর পেছনে ইন্ধন থাকে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের। জনপ্রতিনিধিদের নামও উঠে এসেছে ইয়াবা গডফাদারদের তালিকায়। সমাজের প্রভাবশালী এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের টিকিটি স্পশর্ করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যে কারণে মাদক নিমূর্ল নিয়ে সংশয় থাকাও অমূলক হতে পারে না। মাদক যেভাবে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কোন পযাের্য় যায় তা নিয়ে অভিভাবকদের পাশাপাশি পুরো জাতিই শঙ্কিত। আমরা মনে করি, সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগই দেশবাশীর এই শঙ্কা দূর করতে পারে। লক্ষণীয় যে, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের চালান ধরা পড়লেও কুশীলবরা থেকে যায় ধরাছেঁায়ার বাইরে। অন্যদিকে মাদক ব্যবসায় যুক্ত থাকার অভিযোগে যাদের আটক করা হয়, তারাও কয়েক দিনের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ওই কারবারে যুক্ত হয়। এটা দেশবাসীর অতীত অভিজ্ঞতা। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি উঠলে সরকারও তৎপর হয়ে ওঠে। আর সরকারের আন্তরিকতা এবং নানামুখী পদক্ষেপের কারণেই ইয়াবার গডফাদাররা আত্মসমপর্ণ করছে বলে প্রতীয়মান হয়। জানা যায়, কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ৩৫ গডফাদার আত্মসমপর্ণ করলেও আরো অনেকে রয়েছেন ধরাছেঁায়ার বাইরে। তবে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকায় বাকিরা আটক হবে এমন আশা করা যেতেই পারে। দেশ থেকে ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক নিমূের্ল আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, এই সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সবোর্পরি, মাদকমুক্ত সমাজই সবাই প্রত্যাশা করে। তা ছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও মাদকের ভয়াবহতা থেকে দেশকে বঁাচাতে হবে। যে সব চিহ্নিত প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সব সদস্য তাদের সহায়ক, সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। মাদক নিমূর্লই হবে শেষ কথা; এটা বিবেচনায় নিয়েই প্রশাসনিক কঠোর অবস্থান, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনসচেতনতাই পারবে ইয়াবার শিকড় উপড়ে ফেলে এর বিস্তার ঠেকাতে।