দুই মুদ্রার দেশ কম্বোডিয়া

কম্বোডিয়া কাছের দেশ থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের মতো দ্রæত উন্নতির পথে অগ্রসর না হলেও তাদের মানসিক প্রবণতা ক্রমেই উন্নয়ন আর নিজেদের সামাজিক, আথির্ক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার প্রসারে পযর্টকদের আকৃষ্ট করা। সে জন্য এখানে যেমন ইওনের মতো বিলাসবহুল শপিংমল আছে তেমনি ঢাকার বঙ্গবাজারের মতো সাধারণ বিক্রয়কেন্দ্রও আছে। কম্বোডিয়ার সাধারণ মানুষ পযর্টকদের জন্য আকষর্ণীয়। তারা সরল মন নিয়ে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে।

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ
বিপুল পৃথিবী আবৃত সামাজিক আর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে পূণর্ বলে মানুষের কাছে প্রিয় দশর্নীয় স্থান। এক একটা দেশ মানুষের মনে সঞ্চিত করে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা আর মানবসভ্যতার ইতিহাস। একদিকে থাইল্যান্ড থেকে শুরু করে সিঙ্গাপুর পযর্ন্ত সাবির্ক পরিবতর্ন আর উন্নতির ইতিহাস, অন্যদিকে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন শহর আর সমুদ্রের ওপারে ছোট ছোট জনপদ, মালয়েশিয়ার সমুদ্রে বঁাক দিয়ে অন্য শহরে যাওয়ার ব্যবস্থা, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা-জাভা-বালি দ্বীপের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য আর সিঙ্গাপুর মানুষের তৈরি প্রাকৃতিক সৌন্দযের্র পাশাপাশি অদূরবতীর্ ভিয়েতনাম আর কম্বোডিয়া। ভিয়েতনামে যেতে হয় মালয়েশিয়া থেকে আর কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামের মতো কম্বোডিয়া এত দ্রæত উন্নতি করতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে আছে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে কম্বোডিয়া যেতে খুব বেশি সময় লাগে না। সব দেশে কম্বোডিয়ার কনস্যুলেট নেই বলে ব্যাংকক থেকে সে দেশে যাওয়ার জন্য ভিসা নিতে হয়। ভিসা আফিসও শহর থেকে বেশ দূরে। যাওয়ার সময় গাড়ির পাওয়ার অসুবিধা না হলেও আসার সময় যানবহনের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। ভিসা অফিস বড় না। তবে সকালে ফমর্ জমা দিলে বিকালেই ভিসা পাওয়া যায়। ভিসা অফিসে সবাই বেশ সহযোগিতাও করে। অনেকেই ব্যাংকক থেকে কম্বোডিয়ার সিয়াম রিফে বেড়াতে যাওয়া পছন্দ করেন। সিয়াম রিফ এয়ারপোটের্ পৌঁছানোর পর অনেককে পুলিশের শ্যেন দৃষ্টিতে পড়তে হয়। ইমিগ্রেসনে লাইন দেয়ার সময় একজন পুলিশ অফিসার পাসপোটের্র রং দেখে আমাদের চারজন ও অন্য দুদেশের তিনজনকে ভেতরের ঘরে ডেকে নিয়ে যান। তাদের কোনো কথা জিজ্ঞেস করার পর তেমন উত্তর পাওয়া যায় না। শুধু সবার পাসপোটর্ নিয়ে একজন মহিলা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। তিনি পাসপোটর্গুলো দেখে অফিসিয়াল কাজ সেরে সবার হাতে দিয়ে বাইরে ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দঁাড়াতে বলেন। এখানে অবশ্য কারুর আর কোনো অসুবিধে হয়নি। এখানে আর মিশরের কায়রো এয়ারপোটের্ ভোগান্তির শিকার হতে হয় পযর্টকদের। কম্বোডিয়ায় কোনো অসুবিধে হয়নি কিন্তু কায়রোর এয়ারপোটর্ সব বাংলাদেশিদের সঙ্গে ভারতীয়দের পাসপোটর্ সিল মারার পর ফেরত না দিয়ে পাশের ঘরে নিয়ে যায়। পযর্টকদের কারা স্পন্সর করেছে। তারা কেন আসেনি এমন প্রশ্ন করার পর সবাই যে পযর্টক স্পন্সরের দরকার হয় নাÑ একথা কিছুতেই বুঝতে চায়নি। পরে নিজেরা উত্তেজিত হয়ে কথা বললে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো পযর্টকদের বিব্রত করে ঘুষ নেয়া। সিয়াম রিফ ছোট শহর। তবে এয়ারপোটর্ থেকে শহরের ভেতরে প্রবেশ করার সময় এদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য রাস্তার সুব্যবস্থা চোখে পড়ার মতো। আসা ও যাওয়ার রাস্তা দুই অংশে ভাগ করা। বড় অংশে বড় গাড়ি আর পাশের ছোট অংশে অন্য গাড়ির চলাচলের ব্যবস্থা। তার ফলে ট্রাফিক জ্যাম এড়ানো যায় আর তাড়িতাড়ি রাস্তা অতিক্রম করাও সম্ভব হয়। ছোট শহর বলেই সিয়াম রিফে সব রাস্তার মানুষের চলাচল তেমন নয়। তবে, এখানকার ছোট ছোট হোটেলগুলো পরিচ্ছন্ন আর তিন বেলাই খাবারের সুব্যবস্থা আছে। এখানে পযর্টকদের মূল আকষর্ণ নদীতে বসবাসরত মানুষের আবাসস্থল দেখতে যাওয়া। নদীর পাশে একতলা, দোতলা যন্ত্রচালিত অসংখ্য নৌকা দঁাড়িয়ে থাকে। সেগুলো এককভাবে বা দলগতভাবে ভাড়া করা যায়। নদীর দেশ বাংলাদেশ হলেও এখানকার নদী ও মানুষের প্রতি আকষের্ণর জন্য একটা বোট ভাড়া করে আমার মেয়ে, তার স্বামী, ছোট মেয়ে ও আমি নৌকায় চড়তে দ্বিধাবোধ করিনি। প্রথম দিকে নৌকো প্রাকৃতিক পরিবেশকে পাশে রেখে চলতে থাকে, তারপর অনেকদূর যাওয়ার পর নদীবাসীদের চোখে পড়ে। অসংখ্য নর-নারী ও অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে বিভিন্ন ধরনের নৌকোয় জীবনধারণ করে। অনেক নৌকোর ওপর দোকান সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য দিয়ে, সেজন্য নৌকোবাসীদের আর দূরে গিয়ে বাজার করার প্রয়োজন হয় না। সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলোÑ এখানে ছোটদের শিক্ষাব্যবস্থাও আছে। একটা বড় নৌকোর ওপর স্কুল বসে এবং শিক্ষাথীর্রা প্রতিদিন এখানে ছোট ছোট নৌকো করে পড়াশোনা করতে আসে। শহরবাসী না হলেও এখানকার শিশুরা শিক্ষা বঞ্চিত নয়। নদীর ওপর শুধু এক জায়গার নয়, নদীর বিভিন্ন অংশে একইভাবে দল বেঁধে মানুষ বাস করে। যাদের কোনো ঘর-বাড়ি নেই। পযর্টকরা এই নতুন সভ্যতার নিদশর্ন দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। সিয়াম রিফ ছোট শহর হলেও এখানে আকষর্ণীয় একাধিক দোকান আছে, যেখানে সে দেশের সামগ্রী সাজিয়ে রাখা আছে পযর্টকদের কেনার জন্য। এখানে ছোট একটা বাজারও আছে যেখানে অপেক্ষাকৃত কম দামে সুভেনির কিনতে পাওয়া যায়। সিয়াম রিফ থেকে প্লেনে নমপেন যেতে পনেরো বিশ মিনিটের বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না বলে প্লেনেও ছোট গøাসে শুধু পানি পান করতে দেয়া হয়। নমপেন এয়ারপোটর্ অপেক্ষাকৃত বড়। এখানে বিদেশি পযর্টকদের বিব্রত হতে হয় না। তবে সিয়াম রিফ থেকে এখানে পেঁৗছানোর পর দেখা গেল আমার স্যুটকেসের তালা আর চেনের দুটো অংশ ভাঙা। এই প্রথম বেড়াতে এসে এমন ঘটনা চোখে পড়ল। মনটা খারাপ হয়ে গেল এজন্য যে, আমার অল্প ব্যবহৃত সুন্দর স্যামসোনাইট স্যুটকেসের এমন করুণ অবস্থা দেখে। অবশ্য বাইরে স্যুটকেস ভাঙা হলেও ভেতরের সব জিনিসই অক্ষত ছিল বলে গোদের ওপর বিষফেঁাড়া হয়নি। একেবারে যে হয়নি তা নয়, কারণ নমপেন থেকে একটা নতুন স্যুটকেস কিনতে হয়েছিল। একবার আমেরিকা থেকে কানাডায় যাওয়ার সময় আমেরিকার এয়ারপোটের্ই স্যুটকেস খুলে দেখেছিল, সম্ভবত ভেতরে আচারের শিশি ছিল বলে। এয়ারপোটের্ আচারের শিশি খুলে আর বন্ধ করা হয়নি বলে অনেক কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আবার ভদ্রতা দেখিয়ে সেখানে সিকিউরিটির একটা কাগজ রাখা হয়েছিলÑ সেখানে লেখা ছিলÑ কোনো জিনিস হারানো গেলে আমরা দায়ী নই। এর বিপরীত ঘটনা ঘটেছিল লন্ডন থেকে ঢাকায় আসার সময়। দুটো স্যুটকেসের সঙ্গে একটা বড় ব্যাগ ছিল। ভুল করে ব্যাগে তালা দেয়া হয়নি বলে সারা পথ চিন্তা করতে করতে আসতে হলেও ব্যাগের কোনো ক্ষতি হয়নি। কম্বোডিয়া বিচিত্র এক দেশ। নমেপন রাজধানী হলেও এখানে যাতায়াতের জন্য কোনো ট্যাক্সি পাওয়া যায় না। চলাচলের জন্য নিতে হয় থাইল্যান্ডের টুকটুকের চেয়ে একটু ছোট আর ঢাকার সিএনজির তুলনায় একটু বড় যানবাহন। এই শ্রেণির যানে নমপেনের সব জায়গায় যেতে কোনো অসুবিধে হয় না। ভাড়াও খুব বেশি নয়। নমপেনে দেখার অনেক ঐতিহাসিক স্থান আছে। তবে এসব ছাড়া একটা ফল সবার দৃষ্টি আকষর্ণ করে যায়। সেটা হলো বিশাল আকারের ডাব। এত বড় ডাব বোধহয় পৃথিবীর আর কোনো প্রাচ্য দেশে দেখা যায় না। এ ধরনের এক একটা ডাব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তিনটে ডাবের সমান। নমপেনের রাস্তার আশপাশের অসংখ্য দোকানে প্রতিদিনই সাজানো থাকে। কম্বোডিয়ার ইতিহাস খুব প্রাচীন। এক সময় মংখেমের রাজ্য থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের প্রান্ত পযর্ন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। এদের সবচেয়ে উন্নতি হয় এ্যাংগোর আমলে। এখনো এরা এ্যাংগোরের কথা ভুলতে পারেনি বলে অনেক সুভেনিরেই নাম ব্যবহার করে থাকে। এ দেশ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ও নিমর্ম অত্যাচারের সাক্ষী। কম্বোডিয়ার আগের নাম ছিল কাম্পুপিয়া। কাম্পুপিয়ার পরিবতের্ পরে কম্বোডিয়া নামে পরিচিত হয়। কম্বোডিয়ার ইতিহাসে হিন্দু ও বৌদ্ধদের অবদান এখনো জড়িয়ে আছে। এখানকার প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ তার সাক্ষী। নমপেনের অদূরে একাধিক ঐতিহাসিক প্রাসাদ ও স্তূপের ধ্বংসাবশেষ পযর্টকদের প্রধান আকষর্ণ। এখানে প্রতিদিন দলে দলে বিদেশি পযর্টক খানিক সময় কাটিয়ে থাকেন। এখানকার সব ধরনের মানুষ সাদাসিধে ও হাসিখুশি। একবার প্রাচীন একটা প্রাসাদ ও স্তূপ দেখার পর অসম ঢালু রাস্তার জন্য নিচে নামতে পারছিলাম না। আমার দুরবস্থা দেখে নিচে ডাব ও পানীয় বিক্রেতা একজন বারো-তেরো বছরের কিশোরী দৌড়ে উপরে উঠে আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে নিচে নামিয়ে একটা বেঞ্চিতে বসিয়ে দিয়েছিল। আরেকবার আমি খানিকটা ক্লান্ত হয়ে দলের সঙ্গে না গিয়ে ভাড়া করা গাড়ির পাশে দঁাড়িয়েছিলাম। অদূরে একজন মাঝবয়সের সুন্দরী এক নারী বিভিন্ন ধরনের জুস তৈরি করে বিক্রি করছিল। আমি তার কাছে গিয়ে আমের জুস তৈরি করতে বলার পর যতœ করে জুস তৈরি করে আমার হাতে হেসে তুলে দিলেন। একটু দূরেই একজন বৃদ্ধা বসেছিলেন। সারা মুখ কুঁচকানো। আমার দিকে কয়েকবার তাকিয়ে মৃদু হাসছিলেন। জুস প্রস্তুতকারী নারীর কাছে গিয়ে বৃদ্ধার কথা জিজ্ঞেস করার পর তিনি হেসে বললেন, উনি আমাদের গ্রামের সচেয়ে বেশি বয়সের একজন নারী। আমি তাদের ফটো তোলার কথা বললে তিনি হেসে সম্মতি জানালেন। জুস খাওয়া শেষ হলে নিজেই আমার কাছে এসে খালি কনটেনারটা নিয়ে গেলেন। এই ছোট ঘটনাও অনেকের কাছে এরকম মানুষকে স্মৃতির মধ্যে বন্দি করে রাখে। কম্বোডিয়ার নিজস্ব কারেন্সি থাকলেও সারাদেশে চলে আমেরিকান ডলার। প্রকৃতপক্ষে এরা সব হিসাব করে ডলারে, নিজেদের কারেন্সিতে নয়। শুধু শহরে নয়, পযর্টন স্পটেও ডলারের বিনিময়ে সবকিছু কেনা যায়। অবশ্য ডলারের পরিবতের্ কম্বোডিয়ার কারেন্সিও ব্যবহার করা যায়। কম্বোডিয়ার চার হাজার মুদ্রা এক ডলারের সমান। একটা ডাব কিনতে হলে দাম বলা হয় এক ডলার। এভাবে অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও বলা হয় ডলারে। নমপেনে জাপানিদের অথার্য়নে তৈরি বড় একটা শপিং সেন্টার হলো ইওন। এখানে জাপানিদের বেশ কয়েকটা দোকান ছাড়াও পৃথিবীর বিখ্যাত ব্র্যান্ডের অনেক দোকান আছে যেখানে প্রয়োজনীয় সবকিছুই পাওয়া যায়। নমপেন শহর বতর্মানে বাড়ানো হচ্ছে পুরনো ঢাকার ধানমÐি, গুলশান আর বনানীর মতো। এখানে বিচ্ছিন্নভাবে নতুন মডেলের বাড়ি সবার দৃষ্টি আকষর্ণ করে। ভবিষ্যতের অথর্নীতির কথা চিন্তা করে এখানেও বড় আকারের দ্বিতীয় শপিংমল ইওন তৈরি করা হয়েছে। এই অত্যাধুনিক মলে ব্র্যান্ড দোকানের যেমন অভাব নেই, তেমনি ক্রেতারাও প্রতিদিন ভিড় জমাতে ভোলেন না। এই মলের একটা আকষর্ণীয় দোকান হলো স্পোটর্স সামগ্রীর দোকান। এখানে পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের জিনিসের বিপুল সম্ভার অপেক্ষাকৃত কম দামে পাওয়া যায়। এখানে শুধু খেলার সামগ্রী নয়, পরিধানেরও সব ধরনের পোশাক পাওয়া যায়। নমপেন থেকে প্রায় তিরিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অঞ্চলে পযর্টকরা ছুটে যান এখানকার সবচেয়ে ঐতিহাসিক সিহানুক জেনোসাইডাল সেন্টার দেখতে। এ দেশের ইতিহাসে অসংখ্য নৃপতি ও শাসকদের সঙ্গে সিহানুকও পোল পুটের নামও জড়িত। সিহানুকের আমলে সরকারের বিরোধীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে এই অংশে ফেলে দেয়া হয়। পরবতীর্কালে এই অংশে স্মৃতিস্তূপ তৈরি করে নিহতদের দেহের অংশবিশেষ সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এই স্তূপে দশর্নাথীের্দর প্রবেশের আগে সবাইকে একটা করে অডিও সরঞ্জাম দেয়া হয় এবং দশর্নাথীর্রা কানে লাগিয়ে বিভিন্ন অংশে কীভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল তার রেকডর্ করে শোনানোর ব্যবস্থা থাকে। স্মৃতিস্তূপের উনিশটা অংশে হত্যা ও অত্যাচারের নিদশর্নও বণর্না আছে। সংক্ষেপে এগুলো যেভাবে সাজানো হয়েছে এখানে তার বণর্না লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে: হত্যা ও নিযার্তন পরিকল্পনাকারীদের অফিস, কেমিক্যাল সংরক্ষণের স্থান, ৪৫০ জন হত্যার গণকবর, হত্যার সরঞ্জাম, নিহতদের দঁাত ও হাড় সংরক্ষণ স্থান, যে পথ দিয়ে হত্যা করার জন্য মানুষকে নিয়ে যায় হয়, বেঁচে যাওয়া মানুষের বিবরণÑ হত্যা সময়ের প্রত্যক্ষদশীর্Ñ প্রথম দিনে যেভাবে জোর করে মানুষকে গৃহত্যাগে বাধ্য করা হয়Ñ অপরিচিত ব্যক্তির আত্মত্যাগে অন্যকে উদ্ধার- নারীদের নারীত্বহরণ, ১৬৬ জনের মস্তকবিহীন দেহ, নিহতদের বস্ত্রসামগ্রী, স্তূপের শেষ প্রান্তে অসংখ্য খুলি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কম্বোডিয়ার বিভিন্ন অংশে তিনশ হত্যা স্থান আছে। আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়েও কম্বোডিয়ার জেনোসাইড প্রোগ্রাম ওয়েবসাইটে দেখার ব্যবস্থা আছে। কম্বোডিয়ার বিভিন্ন দশর্নীয় স্থানের বাইরে পযর্টকদের খাওয়ার জন্য ভালো রেস্তোরঁা আছে। এখান থেকে নিজেদের সহজভাবে গন্তব্যস্থানে ফেরার জন্য সব সময় অটোরিকশা পাওয়া যায় বলে পযর্টকদের কোনো অসুবিধে হয় না। নমপেন শহরের মধ্যেই রাজবাড়ী পযর্টক ও শহরবাসীদের অন্যতম আকষর্ণীয় স্থান। বতর্মান রাজা প্রাসাদের একাংশে বসবাস করেন এবং অবশিষ্ট অংশ দশর্নাথীের্দর জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। বধ্যভ‚মি ও প্রাসাদ দেখার জন্য প্রবেশমূল্য দেশের রাজস্ব খাতে অনেক সহায়তা করে। রাজবাড়ী বিরাট অংশজুড়ে অবস্থিত এবং এখানে বিভিন্ন আকষর্ণীয় মন্দির, দেব-দেবীর মূতির্ ও ছোট-বড় আকারের অসংখ্য সুন্দর কক্ষ আছে। সকাল থেকেই রাজবাড়ী দেখার জন্য দশর্নাথীের্দর ঢল নামে। কম্বোডিয়ার মুদ্রার মান ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার বা ভিয়েতনামের মতো। একশ আমেরিকান ডলার ভাঙালে ৩৮০ হাজার খেমর রুজ মুদ্রা পাওয়া যায়। হাতে এত মুদ্রা থাকলেও ব্যবহারে কোনো অসুবিধে হয় না। কারণ এখানে এখানকার মুদ্রা ও আমেরিকান ডলার দুভাবেই হিসাব করা হয়। অনেক সময় বড়মানের কম্বোডিয়ার নোট দেয়ার পর দোকান বা অন্যত্র নিজেদের মুদ্রা না দিয়ে ডলার ফেরত দেয়। এখানে নিজেদের মুদ্রার পাশাপাশি ডলারের মাধ্যমে বেচাকেনা হয় বলে পযর্টকদের খানিকটা সুবিধে হয়। পাশ্চাত্যে পযর্টকদের কাছে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, মিয়ানমার আকষর্ণীয় হলেও ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া দিন দিন অনেক বেশি আকষর্ণীয় স্থান হয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান, প্রমোদ ভ্রমণের সুব্যবস্থা, সহজপ্রাপ্য যানবাহন, পছন্দনীয় খাদ্যপ্রাপ্তি ও ব্র্যান্ড জিনিস অপেক্ষাকৃত কম দামে পাওয়ার কারণে। থাইল্যান্ডে টুকটুক ও ট্যাক্সি মিটার ছাড়া যেভাবে ভাড়া চায়, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় গাড়িচালকদের মধ্যে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় না বলে পযর্টকরা এসব দেশের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। কম্বোডিয়া কাছের দেশ থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের মতো দ্রæত উন্নতির পথে অগ্রসর না হলেও তাদের মানসিক প্রবণতা ক্রমেই উন্নয়ন আর নিজেদের সামাজিক, আথির্ক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার প্রসারে পযর্টকদের আকৃষ্ট করা। সে জন্য এখানে যেমন ইওনের মতো বিলাসবহুল শপিংমল আছে তেমনি ঢাকার বঙ্গবাজারের মতো সাধারণ বিক্রয়কেন্দ্রও আছে। কম্বোডিয়ার সাধারণ মানুষ পযর্টকদের জন্য আকষর্ণীয়। তারা সরল মন নিয়ে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ: কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক