বেকারত্বের অবসানে কমর্সংস্থানের বিকল্প নেই

প্রতি বছর যে পরিমাণ শ্রমশক্তি যুক্ত হচ্ছে কমর্সংস্থানের বাজারে, তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে বেকার থাকতে হচ্ছে। দেশে বেকারের সংখ্যা এখন ২৬ লাখ ৮০ হাজার। যা মোট জনসংখ্যার দেড় শতাংশেরও বেশি। বাংলাদেশের মোট বেকার সংখ্যা বিশ্বের বহু দেশের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি।

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অ্যাডভোকেট শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ
দেশের লাখ লাখ মানুষ বেকার বা অধর্ বেকার। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আগ্রাসীভাবে বাড়ছে। এর পাশাপাশি রয়েছে বিপরীত চিত্র। দক্ষ কমীর্র অভাবও দেশে প্রকট। যে অভাব পূরণে দেশি বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় হাজার হাজার বিদেশি কাজ করছেন। দক্ষ লোকের অভাব থাকায় উদ্যোক্তারা বিদেশি কমীের্দর ওপর ভরসা করতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৬টি দেশের নাগরিকরা এক বছরে বৈধ উপায়ে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছেন ২০১ কোটি ৩০ লাখ মাকির্ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। বিপুল এই অথের্র সবচেয়ে বেশি গেছে চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামে। বাংলাদেশে বতর্মানে কমবেশি প্রায় ১০ লাখ বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। আর আথির্ক খাত সংশ্লিষ্টদের মতে বৈধ পথের বাইরে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে রেমিট্যান্স হিসেবে চলে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাওয়ার হার ও পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়ছে। কারণ প্রতিদিন গড়ে বাংলাদেশে আসা ৮ হাজার বিদেশি নাগরিকের প্রায় অধের্কই দীঘের্ময়াদে অথর্ উপাজের্নর সঙ্গে জড়িত হচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শীষর্স্থানীয় পদগুলো চলে যাচ্ছে বিদেশিদের দখলে, তেমনি বাংলাদেশের কষ্টাজির্ত বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে সীমানার বাইরে। সরকার বেকারত্ব দূরীকরণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে এবং আগামী পঁাচ বছরে দেড় কোটি মানুষের কমর্সংস্থানের প্রতিশ্রæতিও দেয়া হয়েছে সরকারের নীতিনিধার্রকদের পক্ষ থেকে। তবে এ সংক্রান্ত কমর্পরিকল্পনা কতটা জুতসই তা সংশয়ের ঊধ্বের্ নয়। পূণার্ঙ্গ কমর্সংস্থান নীতিমালা ছাড়া এ ক্ষেত্রে কতটা সফল হওয়া যাবে তাও ভাবার বিষয়। প্রতি বছর যে পরিমাণ শ্রমশক্তি যুক্ত হচ্ছে কমর্সংস্থানের বাজারে, তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে বেকার থাকতে হচ্ছে। দেশে বেকারের সংখ্যা এখন ২৬ লাখ ৮০ হাজার। যা মোট জনসংখ্যার দেড় শতাংশেরও বেশি। বাংলাদেশের মোট বেকার সংখ্যা বিশ্বের বহু দেশের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপে বেকারত্ব বৃদ্ধির জানান দিয়ে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অথর্বছরে দেশে ১৪ লাখ শ্রমশক্তি যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এ সময় দেশের অভ্যন্তরে নতুন কমর্সংস্থান হয়েছে মাত্র ১৩ লাখ। ফলে এক বছরেই প্রায় এক লাখ বেকার বেড়েছে। সব মিলিয়ে দেশে বেকার সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার। বেকারত্বের হার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার বাড়ছে। ২০১৫-১৬ অথর্বছরে তরুণ বেকারদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিতের হার ছিল ১২ দশমিক ১১ ভাগ। ২০১৬-১৭ অথর্বছর এই হার দঁাড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ভাগে। সংখ্যার হিসাবে ৩ লাখ ৯০ হাজার তরুণ উচ্চশিক্ষিত বেকার রয়েছে যাদের বয়স ৩০ বছরের নিচে। তাদের মধ্যে ১১ দশমিক ২ ভাগ ২ বছরের বেশি সময় ধরে বেকার রয়েছেন। আন্তজাির্তক শ্রম সংস্থার সংজ্ঞানুযায়ী যারা সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা কমের্ নিয়োজিত তারা বেকার নন। বাংলাদেশে সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজ করতে পারেন না এমন বেকারের সংখ্যা বেড়ে ২৬ লাখ ৮০ হাজারে দঁাড়িয়েছে। প্রকৃত বেকারের সংখ্যা আরও বিশাল। এ সংখ্যা ৪১ লাখ ৮০ হাজার বলে মনে করা হচ্ছে। দেশে উচ্চশিক্ষার হার দ্রুত বাড়লেও সে হারে কমর্সংস্থান বৃদ্ধি না পাওয়ায় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। কমর্মুখী শিক্ষার অভাবে চাহিদা থাকা সত্তে¡ও বহু প্রতিষ্ঠান যোগ্যকমীর্ খুঁজে পাচ্ছে না। বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাজার হাজার বিদেশি কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষ কমীর্র অভাব থাকার কারণে। বেকারত্বের হার বৃদ্ধি দেশের যুব সমাজের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে। উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কম বেতনে তাদের কাজে লাগানোর প্রবণতায় ভুগছেন নিয়োগকারীরা। বেকারত্বের অবসানে কমর্সংস্থানের কোনো বিকল্প নেই। দেশে নতুন নতুন কলকারখানা ও শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। স্থিতিশীলতার স্বাথের্ই বেকারত্ব মোচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। আমাদের মতে, বেকারত্ব কমাতে কমর্মুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। এ ব্যাপারে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টিও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ: অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটর্ ও সভাপতি সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়াসর্ ফোরাম