পাঠক মত

লাগামহীন চিকিৎসা খাত

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মাহমুদুল হক আনসারী ঢাকা
চিকিৎসা পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সারাদেশে সরকারি বেসরকারি হাজার হাজার মেডিকেল, হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। এসব হাসপাতালে লাখ লাখ ডাক্তার ও কমর্চারী নিয়োজিত আছে। যাদের পেছনে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়। সরকার স্বাস্থ্যসেবাকে তৃণমূল পযাের্য় পেঁৗছে দিতে গ্রামে গ্রামে পযর্ন্ত সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছে। এসব কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে শিশু ও নারীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এসব কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি ওষুধপত্র সরবরাহ করা হয়। কথা হচ্ছে ডাক্তার ও চিকিৎসা নিয়ে সব সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তারের নিয়োগ থাকলেও অনেক ডাক্তার সেখানে উপস্থিত থাকেন না। দেখা যায় তারা শহর ও নগরে ব্যক্তিগত চেম্বার খুলে প্রাইভেট চিকিৎসা দিয়ে থাকে। তাদের কিছু দালাল রয়েছে। ওইসব দালালরা রোগীদের তাদের কাছে পাঠাতে সাহায্য করে। সব সরকারি ও প্রাইভেট ক্লিনিকের ডাক্তারদের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডায়গনোস্টিক ল্যাবের সঙ্গে সম্পকর্ থাকে। বিভিন্ন নামি-বেনামি ওষুধ কোম্পানির এমারদের সঙ্গে তাদের সম্পকর্। ওষুধের মান যাই হোক ডাক্তারের চড়া কমিশন থাকলেই সে ওষুধের রোগীর প্রেসক্রিপশন স্থান পায়। ওষুধের মানের চেয়ে মূল্য বেশি। এ ধরনের মেডিসিনও বেশি লেখা হয়। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কমিশনের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়া হয়। পাস করা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গে বেসরকারি ক্লিনিকের সম্পকর্ বেশি। রোগীর আথির্ক অবস্থা বিবেচনা করে বেসরকারি ক্লিনিকে তাদের রেফার করা হয়। আর বেসকারি ক্লিনিকে ভতির্ হলেই হলো। গলা কঁাটা ক্লিনিক ফি, ডাক্তার ফি চড়াভাবে ওষুধের মূল্য নিয়ে রোগীর পকেট কঁাটা সব বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে। এসব হাসপাতালের চিকিৎসায় অনিয়মের সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলেও প্রতিকার হতে দেখা যায় না। ইচ্ছে মতো ডাক্তার ফি ওষুধের মূল্য ল্যাবের পরীক্ষার অতিরিক্ত ফি নিলেও এসব অনৈতিক ব্যবসার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বেসরকারি হাজার হাজার ক্লিনিক গড়ে উঠেছে শহর নগরের অলি-গলিতে। এসব ক্লিনিকের লাইসেন্স প্রাপ্তি ডাক্তারের সাটিির্ফকেট নিয়েও অনেক অভিযোগ দেখা যায়। মেয়াদোত্তীণর্ ওষুধ অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতা ডাক্তারের অপচিকিৎসার শিকার হয়েছে শত রোগী। কয়েকদিন পত্রিকায় লেখালেখি এবং সামাজিক আন্দোলন হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটু নড়াচড়া করে। কিন্তু বহাল তবিয়তে ওইসব ত্রæটিপূণর্ ক্লিনিকগুলো তাদের ব্যবসা চালিয়ে যায়। রাজনৈতিক চত্রছায়ায় অনেক ক্লিনিক দাপটের সঙ্গে তাদের কাযর্ক্রম চালাতে দেখা যায়। সব বেসরকারি ক্লিনিকের সঙ্গে সরকারি প্রভাবশালীরাজনৈতিক সম্পকর্ দেখা যায়। যতই অন্যায় ও অপরাধ করলেও তারা এসব অপরাধকে কেয়ার করে না। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)ডাক্তারদের সংগঠন। এ সংগঠনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ওতপ্রোত সম্পকর্। বিএমএ নেতারাই এসব ক্লিনিকের সঙ্গে সরাসরি সম্পকির্ত। ফলে অপরাধ অনৈতিক কমর্কাÐ ঘটলেও ক্লিনিকের মালিক ও ডাক্তার পার পেয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালের ত্রæটিপূণর্ লাইসেন্সের কথা জনগণ জানতে পেরেছে। এ ধরনের প্রায় হাসপাতালের অনিয়ম চিকিৎসায় অবহেলার তদন্ত করলেই তাদের অনেক অনিয়ম ও দুনীির্ত ধরা পড়বে। চিকিৎসকের অবহেলায় আড়াই বছরের শিশু রাইফার মৃত্যুর কারণ তদন্ত করতে গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক এসব কথা বলেছে। সাংবাদিকের ছেলের মৃত্যুর কারণে এ সংবাদ সারাদেশে তোলপাড় হয়েছে। এতে বিএমএ-এর নেতারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বাধা প্রদান করেছে। এরপরও গণমাধ্যমের নেতাদের কঠোর অবস্থানের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পিছু হটতে পারছে না। এ ধরনের অনেক অপচিকিৎসার কারণে সারাদেশে ডাক্তার ও ক্লিনিকের বিরোদ্ধে সংবাদ ও অভিযোগের পাহাড় পড়ে আছে। এসব অভিযোগ মাসের পর মাস বছর বছর ধরে ফাইলবন্দি থাকে। ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকদের এতো ক্ষমতায় অন্যায় করেও তারা অন্যায় শিকার করতে রাজি না। তারা নিজেদের আইনের ঊধ্বের্ বলে হয়তো মনে করেন। বেশি সংখ্যক ডাক্তার সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে নিয়োজিত থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও কিন্তু সেখানে তারা রোগীদের তেমন সেবা দেননি। তাদের নামের পেছনে বড় বড় পদবি দেখা যায়। কিন্তু চিকিৎসায় তারা সাফল্য দেখাতে পারে না। ভুল চিকিৎসার কারণে যাদের সামথের্নই তারা ধুকে ধুকে মরে। আর যাদের আথির্ক সামথর্ আছে তারা বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা করে। এতে করে দেশের মূল্যবান অথর্ বিদেশে চলে যায়। তাহলে আমাদের দেশের হাজার হাজার ডাক্তার তৈরিতে রাষ্ট্র ও জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচ করে কী লাভ পাচ্ছে চিকিৎসা খাতে জনগণ সেটায় এখন নিণর্য় করার সময় হয়েছে। চিকিৎসা ওষুধ প্রেসকিপশন সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। জনগণের অথের্ প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল থেকে পাস করে জনগণের বিরুদ্ধে ডাক্তারের ভূমিকা কখনো মেনে নেয়া যায় না। সরকারের সবোর্চ্চ চিকিৎসা খাতের সেবাকে অবশ্যই সহজ করতে হবে। গলা কাটা ফি সবক্ষেত্রেই বন্ধ করতে হবে। ত্রæটিপূণর্ লাইসেন্সধারী যত্রতত্র গড়ে উঠা ক্লিনিকগুলোকে কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নিদির্ষ্ট কমর্স্থলে যোগদান না করলে তার সাটিির্ফকেট ও চাকরি প্রত্যাহার করে নিতে হবে। হাসপাতাল ডাক্তার ক্লিনিকগুলোর অপরাধকে কখনো খাটো করে দেখা সমুচিত নয়। তাদের সঙ্গে জনগণের রোগ নিণের্য়র সেতুবন্ধন। সুতরাং এ সেক্টরের অপরাধ যে বা যাদের মাধ্যমেই হোক না কেন তাদের ছাড় দেয়া যাবে না। আসুন সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ডাক্তার ও মালিকদের অনৈতিক অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।