যুদ্ধে বছরে ১ লাখ শিশুর মৃত্যু

এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী শিশু নিযার্তন ও হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গিয়েছে। বিশ্বে শিশুরা কোনোভাবেই আর নিরাপদ নয়। বিশ্বে যুদ্ধ এবং এর প্রভাবে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ শিশু মারা যায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পযর্ন্ত মারা গেছে প্রায় সাড়ে পঁাচ লাখ শিশু। শুক্রবার এ তথ্য দিয়েছে সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনাল। জামাির্নর মিউনিখ নিরাপত্তা কনফারেন্সে একটি বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করে সংস্থাটি। পঁাচ বছরে যে পঁাচ লাখ শিশু মারা গেছে, তার কারণ যুদ্ধ এবং এর পরবতীর্ প্রভাব যেমন- খাদ্যাভাব, চিকিৎসার অভাব, স্বাস্থ্য সুবিধার অভাব, স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব এবং ত্রাণসামগ্রীর অভাব। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীগুলো শিশুদের অপহরণ করে যৌন নিযার্তন এবং হত্যা ও বিকলাঙ্গ করে দেয়ার হুমকি দেয়। বতর্মানে গড়ে প্রতি পঁাচটি শিশুর মধ্যে একটি শিশু যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা কিংবা এর আশপাশে বসবাস করছে। যা গত দু’দশকের চেয়ে বেশি। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, শিশুহত্যা এবং এদের বিকলাঙ্গ করে দেয়ার পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। এ কাজে সহায়তা হিসেবে যুদ্ধের অস্ত্র ব্যবহারও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যদিও বারবার বলা হচ্ছে, যুদ্ধে শিশু এবং বেসামরিকদের কখনো লক্ষ্যবস্তু করা ঠিক নয়। এই সাধারণ নীতিটি ২১ শতকে এসেও মানা হচ্ছে না। যা সাবির্কভাবেই উদ্বেগজনক বিষয়। এই মমর্ন্তুদ ঘটনা থেকে এটাই প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় যে, আমরা বিশ্ববাসী শিশুর নিরাপত্তা আজও নিশ্চিত করতে পারিনি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আজকের শিশু আগামী বিশ্বের ভবিষ্যৎ। আজকের শিশুরাই একদিন কেবল নিজের দেশকেই নয়, বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। অথচ দুঃখজনক বাস্তবতা যে ঠুনকো কারণে যেমন শিশুরা নিযার্তন ও হত্যার শিকার হচ্ছে, ঠিক তেমনি যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে অবলীলায় লাখ লাখ শিশুর জীবন চলে যাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। শিশুর জীবন নিশ্চিত করা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এই দায়িত্ব অবহেলা করা বা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তা হলে বিবেকের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমরা কখনোই যুদ্ধের পক্ষে নই, যুদ্ধ বরাবরই ধ্বংস ও মৃত্যু ডেকে আনে। যার পরিণাম ভোগ করে দেশ মানুষ তথা বিশ্ব। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুরা এর অসহায় শিকার হয়, যা বিবেককে কেবল দংশন করে। প্রতিবছর যুদ্ধে এক লাখ শিশুর মৃত্যুকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। যুদ্ধে শিশুদের কখনই লক্ষ্যবস্তু করা সমীচীন নয়, যদিও যুদ্ধবাজরা এটা মানে না, বোঝে না। নগরপুড়িলে দেবালয় যেমন রক্ষা পায় না, একইভাবে যুদ্ধে শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব-সমাজের কি কোনো ভ‚মিকা নেই? বিশ্বব্যাপী শিশুদের সুরক্ষা দিতে হলে দেশে দেশে যুদ্ধ বন্ধ করা ছাড়া অন্য বিকল্প নেই। আমরা মনে করি শিশুদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে তাদের কল্যাণ ও নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশ্বকে আরও বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালন করা উচিত। কবি সুকান্তের ভাষায় বলবো, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’ আমরা আশা করবো শিশুদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তাদের নিরাপত্তা রক্ষায় বিশ্ব নেতৃত্ব কাযর্কর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।