দেশ নিয়ে এতটুকু আশা

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:১৩

এ কিউ এম আবু জাফর

বর্তমান সময়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে সবারই মনে অনেক সুখকর চিন্তাভাবনার উদয় হয়। আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক সুখের স্বপ্ন দেখি। হাজার বছরের দুঃখ কষ্টের সময় অতিক্রম করে আমরা এখন একটি সুন্দর আগামীর আশায় সামনে অগ্রসর হচ্ছি। সমগ্র পৃথিবী আমাদের এই অগ্রযাত্রার প্রতি শ্রদ্ধার সঙ্গে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আছে। বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা জাতির দৃষ্টি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের নিশানার প্রতি ঘুরিয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা- দুঃখকে জয় করতে জানে আদর্শকে সত্য মানে দেশের প্রতি ভালোবাসা সদা আছে মনে প্রাণে। দুঃখের পাহাড় পাশে ঠেলে ধরলো দেশের হাল বাংলাদেশ দেখতে পেল নূতন এক সকাল। কোনো ব্যক্তি নিজের জন্য স্বপ্ন দেখতে চাইলে তা খুব সহজ কাজ। কিন্তু কোনো জাতিকে স্বপ্ন দেখানো খুব কঠিন কাজ। যিনি স্বপ্ন দেখাবেন তিনি চিন্তা চেতনায় নিজের মধ্যে থাকেন না, নিজেকে অতিক্রম করে দেশ ও জাতির চিন্তায় তিনি সারাজীবন বিভোর থাকেন। এই বিষয়টা আমরা জাতির জনক শেখ মুজিবর রহমানের জীবনের প্রতি তাকালেই বুঝতে পারি। শেখ হাসিনার বর্তমান জীবন চলা জাতির পিতার যাপিত মহৎ জীবনেরই প্রতিচ্ছবি বলে মনে হয়। আমাদের এক দুঃখিনী মায়ের নাম 'বাংলাদেশ'। এই দুঃখিনী মা-কে উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এত মহৎ একটি স্বপ্নের কথা চিন্তা করা ও বাস্তবায়নের পথে যাত্রা করার জন্য বিশাল পাহাড়ের সমান সাহসিকতার প্রয়োজন। এমন অভাবনীয় সাহসিকতা শেখ হাসিনা কোথায় পেলেন? নিশ্চিতভাবেই তিনি বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশের জনগণ তার কথায় আস্থাশীল এবং তিনিও জনগণকে শ্রদ্ধা করেন ও ভালোবাসেন। এই পারস্পরিক আস্থা ও ভালোবাসাই শেখ হাসিনাকে সাহস যোগাচ্ছে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। নেতৃত্ব ও জনতার সমন্বিত মহৎ কর্মের ফলে কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জন সহজই হবে। একটি দেশের জনগণের জীবন মান কোন পর্যায়ে পৌঁছালে ওই দেশকে উন্নত দেশ বলা হবে সে বিষয়টি অর্থনীতি-রাজনীতি সমাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে পন্ডিত ব্যক্তিগণই বলতে পারেন। আমরা অতি সাধারণ দৃষ্টিতে দেখতে পাই যে বর্তমান পৃথিবীর সব উন্নত দেশ সব বিষয়ে সমান অবস্থানে নেই, সার্বিক বিবেচনায় তারা উন্নত দেশ কিন্তু সব বিষয়ে নয়। বর্তমান সময়ের উন্নত দেশগুলো কয়েক যুগ আগেও অনুন্নত ছিল। তবে সুযোগ্য নেতৃত্ব, জাতীয় ঐক্য, জাতীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহার, বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় উদ্ভাবনী সাফল্য এবং গভীর দেশ প্রেমের কারণেই ওইসব দেশ অতীতকে পেছনে ফেলে বর্তমানে উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। বাংলাদেশের জনগণের জীবন মান সার্বিকভাবে কত উন্নত হলে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ বলা হবে সে বিষয়টি চিন্তা করার পূর্বে বর্তমান পৃথিবীর কয়েকটি উন্নত দেশ নিয়ে কিছু কথা বললে ভালো হয়। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে প্রায় সমমানের উন্নত বলা যায়, সামরিক শক্তিতেও তারা অনেকটা সমানে সমান, উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তিধর কিন্তু তবুও পরস্পর পুরোপুরি সমান নয়। উলিস্নখিত দেশ দুটির চাইতে জার্মানি উন্নতির সব বিষয়ে এগিয়ে। অন্যদিকে জার্মানি রাশিয়ার চাইতে অনেক বিষয়েই পিছিয়ে আছে। অপরদিকে রাশিয়া পরাশক্তি হয়েও বহু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে বেশ পেছনের অবস্থানে রয়েছে। বর্তমান সময়ের দোর্দন্ড প্রতাপে সামনে অগ্রসরমান অর্থনৈতিক পরাশক্তি চায়না উন্নত দেশ হয়েও অনেক বিষয়ে অন্যান্য অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বেশ পিছিয়ে আছে। এসব বিবেচনা করলে বলা যায় যে, যখন বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে বলার সময় হবে তখন বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বোচ্চ উন্নত দেশের সমান হবে না অথবা এ কথাও বলা যায় যে, বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের অনেক পেছনে থাকবে। কারণ উন্নয়নের চূড়া স্পর্শ করা কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়। এখানে বলা যায় যে, বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে বললে আমরা বুঝে নেব যে, "দুঃখিনী মায়ের" চরম দুঃখের দিন শেষ হওয়ার পর মলিন বদন সতেজ হয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায় যে, বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে এই কথাটি জনগণ তখন বিশ্বাস করতে শুরু করবে যখন তারা দেখবে:- : শিক্ষাগ্রহণ সহজলভ্য, সার্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, : সমাজ থেকে বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ দূরীভূত হয়েছে, : দেশে কোনো ধরনের নারী নির্যাতন নেই, : যৌতুক নামক সামাজিক ব্যাধি বিলুপ্ত হয়েছে, : নিকটতম পারিবারিক সদস্য ও পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে সবাই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে, : শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের মধ্যস্থতায় গ্রামীণ সমস্যাসমূহ আপসের মাধ্যমে মীমাংসা হয়ে যাচ্ছে, : সম্পদের সুষম বণ্টন ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে সমাজ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি দূর করা হয়েছে, : নদী ভাঙনের ফলে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠীসহ গৃহহীন সবার জন্য মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেয়া হয়েছে এবং কাউকে বস্তিতে থাকতে হয় না, : সাগর পাড়ের জেলেদের স্বাবলম্বী করার জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেয়া হয়, জেলেরা যেন মহাজনদের দাদনের জালে আটকা না পড়ে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে, : আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় ভূমির পরিমাণ খুবই কম। তাই ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা করা হয়েছে, : উদীয়মান অজগর স্বভাবের পুঁজিপতিদের হাত থেকে সব ধরনের সরকারি জমি রক্ষা করা হচ্ছে, শিল্পায়নের নাম করে সরকারি বনভূমি, চর অঞ্চল, নদীর ঢাল এলাকা, হাওর অঞ্চল ইত্যাদি লিজের নাম করে কুক্ষিগত করে ফেলতে পারে না। "খুশি মনে থাকবে সবাই হতাশার হবে শেষ, বিদায় নিবে দুঃখ-দৈন্য উন্নত হলে বাংলাদেশ" "সুশাসন-সুবিচার সকলেই যেন পাই সুশিক্ষা-সুস্বাস্থ্য সহজেই পেতে চাই।" জীবনের নিরাপত্তা যদি সব নাগরিক পায় উন্নত হয়েছে এ দেশ সহজেই বলা যায়। এ কিউ এম আবু জাফর: কলাম লেখক