আলু উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি

দাম কমাতে হবে

প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক

ভাতের বিকল্প হিসেবে আলুর কথা একসময় খুব ভাবা হতো। বলা হতো, 'ভাতের পরিবর্তে আলু খান ভাতের ওপর চাপ কমান।' খাদ্যমান ও পুষ্টিগুণের দিক থেকে আলুর কদর অনেক বেশি। আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বহাইড্রেড রয়েছে। আলুর সাহায্যে নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি হয়। তরকারিতে আলু একটি অপরিহার্য দ্রব্য। এছাড়া আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে সপ্তম। এ সাফল্য বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ দশ দেশের কাতারে। স্বীকৃতিটি দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। এই ধরনের সংবাদ আমাদের আশাবাদী করে তোলে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের হিসাব মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টন (উৎপাদনের ২৫ ভাগ আলুর বীজ ও অপচয় ধরা হয়েছে)। ১৫ লাখ রোহিঙ্গা এবং ৩ লাখ বিদেশিসহ মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ২৯ লাখ ৮৬ হাজার ৩৭২ জন হিসাবে আলুর চাহিদা ৮৯ লাখ ৯২ হাজার টন থেকে সর্বোচ্চ ৯১ লাখ ৯ হাজার টন। সে হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকে অন্তত ২০ লাখ টন। কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষিত আলুর রয়েছে ২৬ লাখ ৫৩ হাজার টন। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশে ক্রমশ আলুর ফলন ও উৎপাদন বাড়ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে হেক্টরপ্রতি ফলন ছিল ২১ দশমিক ৮৬ টন। আর ওই বছর মোট উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে হেক্টরপ্রতি ফলন ছিল ২৪ দশমিক ৫৭৫ টন। শুধু দেশের চাহিদা পূরণই নয়; আলু উদ্বৃত্ত থাকায় প্রতি বছর আলু রপ্তানিও করছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সাল থেকে এটিডিপি'র (অ্যাগ্রোবেজড টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) উদ্যোগে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ১২৬ টন ফ্রেশ আলু রপ্তানি হয়। ২০০৭ সালে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার টনে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে সাতটি প্রাইভেট কোম্পানির মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার টন আলু রপ্তানি করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশ থেকে মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, নেপাল, সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৮০ হাজার টন গোল আলু রপ্তানি করা হয়েছে। ২০২৪ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার টন এবং ২০২৫ সালে ২ লাখ ৫০ হাজার টন আলু রপ্তানি করা সম্ভব হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে কেন আলুর দাম বাড়বে। খুচরা বাজারে ৪০ টাকার নিচে আলু পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ কিছুদিন আগেও প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ২০ টাকা। ব্যবসায়ীদের মানসিকতা এমন যে, অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে; সুতরাং আলুর দামও বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্যই কেবল নয়, আলু এখন দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসলও। অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও। যেহেতু আলু উদ্বৃত্ত থাকে অন্তত ২০ লাখ টন সেহেতু দেশে আলুর সংকট নেই। উল্টো আলু বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। সুতরাং আলুর দাম কমাতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ জরুরি।