পিলখানা হত্যাকান্ড

কলঙ্কিত অধ্যায়ের ১০ বছর

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পিলখানা হত্যাকান্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত, লোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রম্নয়ারির এ ঘটনা বাংলাদেশকে বিদীর্ণ করে। কী নৃশংসভাবে ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়েছিল, তা ভাবলে সচেতন ব্যক্তিমাত্রেরই গা শিউরে ওঠার কথা। সময়ের বিবর্তনে আবারও আমাদের মধ্যে ফিরে এসেছে সেই বেদনাবিধুর দিন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, স্বাধীনতার পর দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার যে ষড়যন্ত্র, সেই সূত্রেই পিলখানা ট্র্যাজেডি বা তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের নামে সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছিল। পিলখানা হত্যাকান্ডের পেছনের উদ্দেশ্য যে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করা এবং প্রশাসনের মধ্যে এক ধরনের বিরোধ উস্কে দেয়া- তা বলা বোধ করি অতু্যক্তি হয় না। পিলখানা হত্যাকান্ডের দশ বছর পর আজকের দিনে শোকের মধ্যেও নির্মোহভাবে পেছনে ফিরে দেখতে হবে যে সেদিন আসলে কী ঘটেছিল, কেন ঘটেছিল। বিশেষভাবে ভাবতে হবে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে রাষ্ট্র কতটুকু সচেতন এবং সংহত। আমরা জানি, বাংলাদেশের ইতিহাসে সৈনিক বিদ্রোহ বা অভু্যত্থান-পাল্টা অভু্যত্থান বিরল নয়। আমরা অতীতে দেখেছি, কিছু বিপথগামী, উচ্ছৃঙ্খল সৈনিক বা অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর কিছু সদস্যের হাতে দেশ ও জাতি জিম্মি হয়েছে। তাদের সাময়িক কৃতকর্মের কুফল দীর্ঘকাল ভোগ করতে হয়েছে গোটা জাতিকে। আমরা দেখেছি, যার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছিল, স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের দুজন বাদে সব সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মাত্র কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য এই জঘন্য অপকর্ম করেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি ও সমাজজীবনে যে ধসের সূচনা হয়েছিল, তা আজও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। বাংলাদেশে হত্যাকান্ডের রাজনীতির সূচনাও হয়েছিল বিপথগামী সেনাসদস্যদের ওই অবিমৃষ্যকারিতার মধ্যদিয়ে। উলেস্নখ্য, সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমরা দেখেছি, মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেনাবাহিনী পিলখানার বাইরে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। কিন্তু অভ্যন্তরে যেহেতু অনেক সামরিক ও বেসামরিক মানুষ জিম্মি ছিলেন, তাদের পরিবার-পরিজন, নারী ও শিশু আটক ছিলেন- তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হয়েছে। ওই সময় সামরিক অভিযান পরিচালিত হলে পিলখানার ভেতরে ও বাইরে সামরিক ও বেসামরিক প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা ছিল। ফলে ওই সময় সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর নীতিনির্ধারকরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা যথাযথ ছিল বলেই মনে করা যায়। আমরা বলতে চাই, পিলখানার বেদনাদায়ক ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি সশস্ত্র বাহিনীর সৈনিক থেকে সর্বোচ্চ কর্মকর্তা পর্যন্ত শৃঙ্খলা, নৈতিকতা ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। সৈনিক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতার পাশাপাশি পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভ্রাতৃত্ববোধও প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সৈনিকদের মধ্যে যেমন তার কমান্ডারদের প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য প্রয়োজন, তেমনি কর্মকর্তাদের কর্তব্য হবে তার অধীন সৈনিকদের আন্তরিকতার সঙ্গে দেখভাল করা। তাদের যে কোনো সমস্যা, তা সামষ্টিক বা ব্যক্তিগত হোক- নিয়মের মধ্যে থেকে সমাধানের আন্তরিক ও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাওয়া। সৈনিকরা তাদের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এই অভিভাবকত্বই আশা করে। এটা পেলে তাদের মধ্যে অসন্তোষের আশঙ্কাও থাকে না। পিলখানা হত্যাকান্ডের পর আমরা দশ বছর পার করছি। বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িতদেরও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিডিআর তার বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে পুনর্গঠিত হয়েছে বিজিবি নামে। এই বাহিনীর প্রতি বাংলাদেশের জনসাধারণের প্রত্যাশা-নির্ভরতা অনেক। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বিজিবিকে আমরা দেখতে চাইব উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের গর্বিত অংশীদার হিসেবে। পিলখানা বিদ্রোহ আমাদের জাতীয় জীবনের একটি দুঃস্বপ্ন হিসেবে রয়ে যাবে। ওই দিনের ঘটনাবলি আমরা ফিরে দেখতে চাই; কিন্তু তার পুনরাবৃত্তি চাই না।