নোবিপ্রবির প্রতিষ্ঠাবাষির্কী

অজর্ন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, পানির সমস্যা এবং যানবাহনের অপ্রতুলতা সমাধান আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। যাবতীয় অবকাঠামো উন্নয়নে পেশাদার ও প্রæতিশ্রæতিশীল ঠিকাদার এখানে পাওয়া যায় না।

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

ইফতেখার হোসাইন
বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পযাের্য় উচ্চশিক্ষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে যে সব প্রতিষ্ঠান এগিয়ে চলছে তন্মধ্যে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) অন্যতম। উপক‚লের অক্সফোডর্খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টি উন্নত অবকাঠামো এবং একাডেমিক ও গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য একটি নাম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনিভর্র বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা নোয়াখালীর প্রকৃতি ও জনপদে বিশ্বমানের শিক্ষাবিস্তারের লক্ষ্যে দ্রæততার সঙ্গেই অগ্রসর হচ্ছে নোবিপ্রবি। মূলত জাতীয়পযাের্য় নতুন জ্ঞান তৈরি এবং গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির জন্যই ২০০১ সালে নোয়াখালীতে একটি পূণার্ঙ্গ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধন্ত গৃহীত হয়। তার আলোকে ২০০১-এর ১৫ জুলাই সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা আইন জারি হয়। ১৫ জুলাই ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবাষির্কী (বিশ্ববিদ্যালয় দিবস)। প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর এই দিনে প্রতিয়মাণ হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সারাদেশের শিক্ষাথীের্দর জন্য যুগোপযোগী শিক্ষালাভের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। দেশের বাজারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে নতুন গতিবেগ সঞ্চারিত হয়েছে। পাশাপাশি বহিবিের্শ্বর বাজারেও দক্ষ জনবল সরবরাহে গুরুত্বপূণর্ অবদান রেখে আসছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর সোনালি দিন হলো নোবিপ্রবির বতর্মান সময়ের অজর্নকে আরও বেগবান, সফলতার পথে বাধা দূরীকরণ ও ভবিষ্যৎ কমর্পরিকল্পনা পুননির্ধার্রণ করে সামনে চলার প্রত্যয় গ্রহণের দিন। অজর্ন : ২০১৫ সালের ২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্ হিসেবে যোগদান করেন প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান। যোগদানের পর থেকে নোবিপ্রবিকে একটি উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নানামুখি কমর্কাÐ পরিচালনা করছেন তিনি। শিক্ষাথীের্দর উন্নত পাঠদান ও বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে উচ্চতর ডিগ্রি পিএইচডি, এমফিল, এমএস ও পোস্টডকধারী শিক্ষকদের নিয়োগ দেন। বিগত ৩ বছরে (২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮) নতুন ১৪৬ জন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছে। এর মধ্যে ৩৫ জনই আছেন পিএইচডিসহ উচ্চতর ডিগ্রিধারী। তিন বছরে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ মেধাবী শিক্ষাথীর্ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতির্ হয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও বেশি শিক্ষাথীের্দর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দিতে নতুন ৩টি অনুষদ, ১২টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট খোলা হয়। শিক্ষাথীের্দর মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে সচেতন করতে ‘বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়ন’ বিভাগ খোলা হয়। যুগোপযোগী ক্যারিকুলামে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস নামক কোসর্ এখানকার সব শিক্ষাথীর্র জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও ল্যাবরেটরিগুলোর আধুনিকায়ন করার ফলস্বরূপ এখানকার শিক্ষকরা গত তিন বছরে ২০৮টি মৌলিক গবেষণা সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। বাংলাদেশে গবেষণা ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক হিসেবে পমেটো উদ্ভাবন, ক্যালসিয়ামযুক্ত ও বিষমুক্ত ‘এনএসটিইউ ঢেঁড়স-১’সহ ডায়েবেটিক মুক্ত উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন গবেষক। প্রাণিজগতে ৪টি নতুন অমেরুদÐী প্রাণী ‘নেপথাইস বাংলাদেশ’ বিক্টোরিওপি ব্রæনেইসিস, নিউমোনিয়া নোবিপ্রবি এবং অ্যাররেনারুস স্মিটি’ আবিষ্কারসহ দেশীয় ছোট মাছ বউরানী ও গুতুম মাছের কৃত্রিম প্রজনন, রেণুপোনা লালন-পালন এর সফল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষা সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে যাতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাথীর্রা ওইসব দেশের প্রায়োগিক জ্ঞান ও গবেষণায় সঙ্গী হতে পারে। এসময় জাতীয় ও আন্তজাির্তক পযাের্য় একশজন শিক্ষক ও কমর্কতার্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষাথীের্দর একাডেমিক ও প্রায়োগিক জ্ঞান এবং গবেষণাকে সমৃদ্ধ করতে নোবিপ্রবি গ্রন্থাগারে প্রায় ১৪ হাজার বই, ৪৪৬ জানার্ল, ছয়ত্রিশ হাজার ইলেকট্রনিক বই, ৪ লাখ ৫০ হাজার ইলেকট্রনিক জানার্ল সন্নিবেশ করা হয়েছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনিমাের্ণর প্রত্যয়কে বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাবগুলোয় কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ, এ ছাড়া পুরো ক্যাম্পাসকে আনা হয়েছে হাইস্পিড ইন্টারনেট-বিডিরেন ওয়াইফাইয়ের আওতায়। ২০১৮-১৯ অথর্বছরের সম্ভাব্য প্রধান অজর্নগুলোর মধ্যে রয়েছে সাতটি বিভাগে মাস্টাসর্ চালুকরণ, শিক্ষাথীের্দর জন্য দুটি বাস ক্রয়, আইসিটি ল্যাব ও বিজ্ঞান গবেষণাগারগুলোয় বরাদ্দ বৃদ্ধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারকম সুবিধা চালুকরণ। এ ছাড়া আরও রয়েছেÑ একশ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন স্থাপন, ৩ তলা ভিতে মেডিকেল সেন্টার, ১০ তলা ভিতে হাউস টিউটর ও প্রভোস্ট কোয়াটার্সর্, ৩ তলা ভিতে কেন্দ্রীয় মসজিদ, উপাসনালয়, ১০ তলা ভিতে স্টাফ কোয়াটার্সর্ নিমার্ণ কাজ করা। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে দেশের সবর্বৃহৎ ৪০ হাজার ৩৩৫ বগির্মটার আয়তনের সুবিশাল একাডেমিক কাম ল্যাব ভবনের পাইলিং কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক উকিল হলের (ছাত্রী) নিমার্ণ কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষক-কমর্কতার্ কোয়াটার্সর্ (১০ তলা ভিতে ১০ তলা) ভবনের পাইল ক্যাপ, লাইব্রেরি ভবন (১ম-৪থর্ তলা), অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস ভবনের (৩য়-৫ম তলা), একাডেমিক ভবন-২ (৫ম-১০ম তলা) এবং ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন কাজ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো : সরকারের ভিশন ২০৪১ সালে একটি উন্নত আত্মমযার্দাশীল বাংলাদেশ গড়ার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে দেশের টেকসই সমুদ্র অথর্নীতি-সাস্টেইনএবল বøু ইকোনোমি প্রসারের লক্ষ্যে ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট স্থাপন’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। একাডেমিক গবেষণাকে ত্বরান্বিত করতে নোবিপ্রবিতে ডেল্টা প্ল্যান গঠন, মহাকাশ বিষয়ে গবেষণা, এনভায়রনমেন্ট অনুযায়ী ইকোলজি বিষয়ে পঠন-পাঠন ও ব্যবস্থাপনার কাজ করা হবে। এ ছাড়া রোবোট্রিক্স ও মেকাট্রোনিক্সের মতো যুগোপযোগী বিভাগের দ্বার উন্মোচন করা হলো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ কমর্পরিধি। গবেষণার মান বৃদ্ধির জন্য উপক‚লীয় অঞ্চলে গ্রিন হাউস গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। যেখানে সিনিয়র/জুনিয়র রিসাচর্সাররা যৌথ গবেষণা করবেন। সেখানে ৫ তলা ভিতে ল্যাবরেটরি ভবন তৈরি করা হবে। নিকট ভবিষ্যতে মেরিন স্টেশন নিমাের্ণর জন্য ৩০০ একর ভ‚মি অধিগ্রহণ করা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল পরিকল্পনার অন্যতম। সমুদ্র তীরে সেখানে জেটির অবকাঠামো তৈরি করা হবে, হ্যাচারি এবং মিনি পন্ড কমপ্লেক্স নিমার্ণ করা হবে। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় গভীর সমুদ্রগামী গবেষণা জাহাজ এবং একটি উপক‚লীয় গবেষণা জাহাজ ক্রয় করবে। এ ছাড়া ২ তলা স্পেইস রিসাচর্ সেন্টার নিমার্ণ, ক্যাম্পাসে ০১টি হেলিপ্যাড নিমাের্ণর পরিকল্পনাও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ। শিক্ষাথীের্দর শ্রেণিকক্ষের অপ্রতুলতা নিরসনে আগামীতে দেশের সবর্বৃহৎ ২০ তলা একাডেমিক ভবন নিমার্ণ করা হবে। আর পযার্প্ত আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে নিমার্ণ করা হবে ২০ তলা ভিতে আলাদা ছাত্র ও ছাত্রী হল। বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষাথীের্দর জন্য ১০ তলা ভিতে আন্তজাির্তক হল নিমার্ণ করা হবে। ভৌত ও একাডেমিক সুবিধা বৃদ্ধিকরণ শীষর্ক প্রকল্পের আওতায় আগামীতে ৩ তলা ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিমার্ণ, ক্যাম্পাসে চাইল্ড কেয়ার সেন্টার ও টিএসসি ভবন তৈরি, আনসারদের জন্য ব্যারাক নিমার্ণ, আরও দুটি সাব-স্টেশন বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে সুবণর্চর এলাকায় ২০ তলা নতুন ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে। চ্যালেঞ্জগুলো : বিশ্ববিদ্যালয়টির ভৌগোলিক অবস্থান উপক‚লে ও নোয়াখালী জেলা শহর থেকে দূরবতীর্ হওয়ায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতা রয়েছে এখানে। রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম সড়ক পথ, রেলপথ সুবিধা অপ্রতুল আর বিমান যোগাযোগ নেই। ফলে অভিজ্ঞ যোগ্যতাসম্পন্ন উচ্চ ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের এখানে নিয়োগ দেয়া, একাডেমিক সভা, সেমিনারে তাদের নিয়ে আসা দুরূহ হয়ে পড়ে। বৃহত্তর নোয়াখালীর শিক্ষাথীর্রা ছাড়া অন্যজেলার মেধাবী শিক্ষাথীর্রা এখানে ভতির্ হওয়ার ক্ষেত্রে দোদুল্যমান থাকে। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে আথির্ক বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, যতটুকু বরাদ্দ পাওয়া যায় তার সুষম বণ্টন হয় না। গবেষণার ক্ষেত্রে অপযার্প্ত সুযোগ-সুবিধা ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ ছাড়া চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষক-কমর্কতাের্দর পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশীয় ও আন্তজাির্তক প্রশিক্ষণ সুবিধার অপযার্প্ততা। একশ একরের ওপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনে দিনে শিক্ষক-শিক্ষাথীর্, কমর্কতার্-কমর্চারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু তদানুযায়ী একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও হলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তার ওপর রয়েছে স্থান স্বল্পতা, তাই নতুন জায়গা অধিগ্রহণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিটিসিএলের টেলিফোন/ইন্টারনেটের নিরবচ্ছিন্ন সেবার অসুবিধা দূরীকরণ সময়ের দাবি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, পানির সমস্যা এবং যানবাহনের অপ্রতুলতা সমাধান আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। যাবতীয় অবকাঠামো উন্নয়নে পেশাদার ও প্রæতিশ্রæতিশীল ঠিকাদার এখানে পাওয়া যায় না। ইফতেখার হোসাইন: জনসংযোগ কমর্কতার্