বাল্যবিয়ে

রোধে কাযর্কর পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাল্যবিয়ে একটি অভিশাপ কথাটি পুরনো হলেও বতর্মান সমাজে এই কথার উপযোগিতা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। গ্রামীণ জনপদে এখনো এই অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছে একশ্রেণির মানুষ। যার প্রধান শিকার সংশ্লিষ্ট নারী এবং তার পরিবার। বাল্যবিয়ে ঠেকানোর ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কিংবা তৎপরতা দেখালেও প্রশাসনের ফঁাক গলে গ্রামেগঞ্জে প্রায়ই বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে। দরিদ্র পরিবারে এই প্রবণতা বেশি হলেও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারেও এর আধিক্য রয়েছে। তারা স্কুলগামী মেয়েদের অবলীলায় অতিউৎসাহে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। ফলে যে মেয়ে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখেছিল, তার সে স্বপ্ন মুহূতের্ ধুলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। এর জন্য অভিভাবকদের রক্ষণশীল মানসিকতাও কম দায়ী নয়। এর পাশাপাশি দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতাও রয়েছে। দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশে অধিকাংশ বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয় বলে অভিজ্ঞজনেরা মন্তব্য করেছেন। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক উন্নতি করেছে। কিন্তু এখনো বাল্যবিয়ে রোধে কাক্সিক্ষত সাফল্য অজির্ত হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয় বাংলাদেশে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এটি রোধে নানা উদ্যোগ গৃহীত হলেও মূলত পঁাচটি কারণে এটি পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেগুলো হলোÑ সিদ্ধান্ত গ্রহণে মেয়েদের মতামতকে কম গুরুত্ব দেয়া, প্রত্যন্ত অঞ্চলে তথ্যপ্রাপ্তির সীমিত সুযোগ, স্থানীয় উন্নয়নে মেয়েদের কম অংশগ্রহণ, পারিবারিক ও সামাজিক বাধা, সবোর্পরি মেয়েদের ভবিষ্যৎ কমর্সংস্থানের বিষয়টি অভিভাবকদের বিবেচনায় না আনার প্রবণতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পঁাচ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলে বাল্যবিয়ে রোধে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, দেশে ৬০ থেকে ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে। এর ফলে তাদের মানসিক, শারীরিক অথৈর্নতিক ও পারিবারিক সমস্যা দেখা দেয়। তার প্রভাব পড়ে সমগ্র জাতি ও রাষ্ট্রের ওপর। তাই বাল্যবিয়ে বন্ধে বাস্তবসম্মত আইন প্রয়োজন। এ কথা সত্য, বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েটি অল্প বয়সে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে হয় মারা যায়, না হয় জন্মদান পরবতীর্ সময়ে অপুষ্টিতে ভুগে মৃতপ্রায় অবস্থায় জীবনযাপন করে। আবার অনেকেই স্বামীর ঘর করতে পারে না অত্যাচার নিযার্তনের কারণে। দেখা যায় বাল্যবিয়ে হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় স্বামীর পক্ষ থেকে যৌতুক দাবি করা হয়। সময়মতো যৌতুক না পেলে স্ত্রীকে পিটিয়ে বাপেরবাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়, কেউ কেউ মৃত্যুর শিকারও হয়। যাদের বাপেরবাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয় তারা পরিবারের বোঝা হয়ে থাকে। বাল্যবিয়ে যে অভিশাপ তখন ওই পরিবারটি উপলব্ধি করতে পারে। অথচ মেয়েকে আত্মনিভর্রশীল করে গড়ে তুলতে পারলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। অন্যদিকে নিরাপত্তার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূণর্। নিরাপত্তাহীনতার কারণে গ্রামাঞ্চলে অনেক মেয়ে বখাটে কতৃর্ক যৌন হয়রানি নিযার্তন অপহরণ ও ধষের্ণর শিকার হয়। কাউকে কাউকে মেরেও ফেলা হয়। সুতরাং স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। নারী জাগরণের পথিকৃত বেগম রোকেয়া চেয়েছিলেন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি। সে জন্য পরিবার ও সমাজে নারীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মোকাবেলা করতে হবে পঁাচটি চ্যালেঞ্জ। রোধ করতে হবে বাল্যবিয়ে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।