নারীর ক্ষমতায়ন

অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মানব সভ্যতার উন্নয়ন এবং সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনযাপনের অগ্রগতির প্রশ্নে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে যখন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই নারীর ক্ষমতা বাড়ছে এবং নারী নিজেদের যোগ্যতার নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে, তখন তা অত্যন্ত ইতিবাচক। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেকডর্সংখ্যক নারী নিবার্চনে দঁাড়াচ্ছেন, যা বৈশ্বিক রাজনীতির চেহারাও পাল্টে দিচ্ছে এবং জাতীয় আইনসভায় লিঙ্গ সমতা আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটিয়েছে। আমরা বলতে চাই, যখন আইনসভায় লিঙ্গ সমতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে অগ্রগতির বিষয়টি সামনে আসছে তখন তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মেক্সিকোর সাম্প্রতিক নিবার্চনে দেশটির পালাের্মন্টে দুটি কক্ষেই সমান সংখ্যায় নারী ও পুরুষ এমপিরা নিবাির্চত হয়েছেনÑ যে ঘটনা একটি বড় ‘মাইলফলক’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া স্পেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের পর এই প্রথম দেশটির মন্ত্রিসভায় পুরুষদের চেয়ে বেশিসংখ্যায় নারীদের মনোনীত করা হয়েছে গত জুন মাসে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডানর্ গত ২১ জুন কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি হলেন সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মা হওয়া দ্বিতীয় কোনো নারী। এর আগে দায়িত্ব পালনকালে মা হওয়া প্রথম ব্যক্তি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। আমরা মনে করি, যখন নারীর ক্ষমতায় সমতার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে, তখন এমন আশা করা যৌক্তিকÑ বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের জীবনযাপনকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে এই লিঙ্গ সমতা কাযর্কর প্রভাব রাখবে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ২০১৮ সালে বিশ্বে ১১ জন নারী বিভিন্ন দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই যদিও এখনো কোনো নারী নেতৃত্ব নেই। কিন্তু বতমাের্ন বিশ্বে ১১ জন নারী নেতা রয়েছেন, যারা নিজ নিজ দেশের সরকারপ্রধান। আর এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রধান ব্যক্তিদের নাম যোগ করা হয় তাহলে এই সংখ্যা হবে ২১। ২০১৭ সালে পিউ রিসাচের্র এক গবেষণা মোতাবেক, গত অধর্শতকে অন্তত এক বছর করে হলেও ১৪৬ দেশের মধ্যে ৫৬টি জাতি একজন নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রধান পেয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি দেশের নারীপ্রধানদের শাসনকাল পঁাচ বছর মেয়াদি কিংবা তারও কম সময় এবং ১০টি দেশে কেবল এক বছরের মেয়াদ। তথ্য মতে, বতমাের্ন সবচেয়ে দীঘর্সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নারী সরকারপ্রধান জামাির্নর অ্যাঙ্গেলা মাকের্ল। ২০০৫ সালে এ জামার্ন নেতা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে তার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছেন। এর বাইরে অন্যান্য নারী সরকারপ্রধানদের মেয়াদ পঁাচ বছর বা তারও কম সময়ের। নিউজিল্যান্ডের জেসিন্ডা আরডেনর্ আইসল্যান্ডের নেতা কাটরিন জ্যাকবসডোত্তির এবং সাবির্য়ার আনা বানাির্বক এরা সবাই ২০১৭ সালে নিবাির্চত হন। নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এনার্ সোলবাগর্ নিবাির্চত হন ২০১৩ সালে। নামিবিয়াতে ২০১৩ সালে দায়িত্ব নেন সারা কুগংগেলাওয়া। যুক্তরাজ্যের থেরেসা মে ২০১৬ দেশটির দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম লেখান। একই বছর অং সান সু চি মিয়ানমারে দায়িত্ব নেন। আর ২০১৮ সালে নিবাির্চত ভিওরিকা ড্যান্সিলা রোমানিয়ার ইতিহাসে প্রথম কোনো নারী, যিনি প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। মিয়া মোটলি ২০১৮ সালে বাবাের্ডাজের প্রথম নারীপ্রধান হিসেবে নিবাির্চত হন। বলার অপেক্ষা রাখে না, যখন নারীর ক্ষমতায়নের এই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে, তখন এমন প্রশ্নও সামনে আসছে যে, ২০১৮ সাল কি নারীর ক্ষমতায়নের দিক থেকে সবর্কালের সেরা বছর হতে যাচ্ছে? হোয়াইট হাউসের নেতৃত্বের লড়াইয়ে হিলারি ক্লিনটন হেরে যাওয়া এক বছর পর সেখানে আরও অনেক নারী আছে, যারা সরকারি বিভিন্ন দপ্তর চালাচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা বলতে চাই, মানুষের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য একটি সুন্দর পৃথিবী গঠনে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার ভিত্তিতে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। যদিও নারীর অগ্রগতির ক্ষেত্রে অনেক দেশ এখনো অনেকটাই পিছিয়ে আছে। তবে সামগ্রিকভাবে নারীরা যে এগিয়ে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নারীর ক্ষমতায়ন এবং সাবির্ক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে লিঙ্গ বৈষম্য দূর হোক, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষের বসবাস হোক আরও সুন্দর ও নিরাপদ এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।