দুর্নীতি ও নৈতিক মূল্যবোধের অভাব

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে দক্ষ মানবশক্তি প্রয়োজন। যার জন্য স্কুল পর্যায়ে, বিশেষত মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে সাহিত্য, ভাষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় পাঠদান করা হয়। কিন্তু বর্তমানের কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রমে 'নীতিশিক্ষা'র সীমাবদ্ধতা আছে। মানুষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রম্নত হলেও সর্বব্যাপী রূপ নিয়েছে দুর্নীতি। যা টেকসহ উন্নয়নের জন্য বড় বাধা। এই বাধা দূর করার জন্য কেবল দক্ষ মানবশক্তি নয়, বরং নৈতিক ও মানবিক শক্তিরও প্রয়োজন।

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
সমাজ থেকে দুর্নীতির মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে নৈতিকতা শিক্ষাদানের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে আলোচ্য প্রবন্ধটি প্রণীত। মানুষের অনেক অপরাধের মধ্যে দুর্নীতি অন্যতম। সমাজ উন্নয়নে, ন্যায্য ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এটি অন্যতম প্রধান অন্তরায়। দুর্নীতির অনেক কারণের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধের অভাবকে অনেকে দায়ী করে থাকেন। সেজন্য মানুষের দুর্নীতিপরায়ণ প্রবণতার পেছনে নীতিশিক্ষার অভাবের (ঔঁংঃরভরপধঃরড়হ) যাচাই করা প্রয়োজন। এটি এই প্রবন্ধের সাধারণ উদ্দেশ্য। ব্যক্তির দুর্নীতি প্রবণতার পেছনে নৈতিক শিক্ষার অভাব দায়ী কি? যদি তাই হয় তবে শৈশব-কৈশোরে একজন ব্যক্তিকে নীতিশিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি? যদি তা থাকে, তবে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে 'নীতিশিক্ষা' পাঠদানের যুক্তিযুক্ততা রয়েছে কি? সুনির্দিষ্টভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে এই প্রবন্ধে। গবেষণায় দেখা যায় নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের আচরণের অন্যতম প্রভাবক। অল্প বয়সে নীতিশিক্ষা মানুষকে অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে প্রভাবিত করে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পাই যে আমাদের দেশে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে নীতিশিক্ষা সীমিত পরিসরে প্রদান করা হয়। অথচ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করার জন্য আইনের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। আর যেহেতু শৈশব ও কৈশোরে শিক্ষার্থীর মন থাকে কাদামাটির মতো। তাই ওই সময় তার জন্য নীতিশিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে সামগ্রিকভাবে তার জীবনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে সমাজ ও রাষ্ট্র উপকৃত হবে। সাধারণত মানুষের অসৎ ও আইন বহির্ভূত আচরণকে দুর্নীতি বলে। বর্তমানে আমাদের দেশে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক-সামাজিক সর্বক্ষেত্রেই দুর্নীতি অন্যতম সমস্যা এবং সুশাসনের জন্য প্রধান অন্তরায়। এখানে দুর্নীতি বহুমাত্রিক রূপ পেয়েছে ও সমাজ-রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, অফিস, আদালত, গণমাধ্যম সর্বত্র লাগামহীন দুর্নীতি বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। ক্ষমতাবান মানুষ বেশি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে এবং সাধারণ দরিদ্র মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে। এই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও দমনের জন্য দেশে অনেক সরকারি সংস্থা কাজ করলেও ক্রমেই তা বেড়ে চলছে। আমাদের দেশের পত্র-পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রায়শই দুর্নীতির নানা খবর প্রকাশিত হয়। এমনকি বিদেশি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক সংবাদ মাধ্যমেও বাংলাদেশের দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ প্রচারিত হয়। বিভিন্ন সংস্থা প্রতি বছর দুর্নীতির ওপর রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। বাংলাদেশে দুর্নীতির মাত্রা কেমন, সারাবিশ্বে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় সে বিষয়ে। এসব রিপোর্ট থেকে আমরা তথ্য জানতে পারি। যদিও এসব রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকে, বিশেষত সরকারি পক্ষ এসব রিপোর্টের নানা দিক নিয়ে আপত্তি করে, অন্যদিকে এসব রিপোর্টের প্রতি সিভিল সোসাইটিসহ সাধারণ মানুষের সমর্থন লক্ষ্য করা যায়। যাই হোক, দুর্নীতির মাত্রা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে দুর্নীতি যে একটি ভয়াবহ সমস্যা সে বিষয়ে সবাই একমত। দুর্নীতির মতো এমন অপরাধের কারণ অনুসন্ধানের জন্য মানব প্রকৃতির বিশ্লেষণ অতিব জরুরি। এই অপরাধমূলক প্রবণতার পশ্চাতে ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রভৃতি কারণ থাকতে পারে যা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। এজন্য একজন ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক গঠন কাঠামো নির্মাণে নৈতিকশিক্ষার গুরুত্বও যাচাই করা উচিত। প্রশ্ন হচ্ছে এই কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম কি আজকের বাংলাদেশের জন্য পর্যাপ্ত? বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বক্ষেত্রে অগ্রগতি দৃশ্যমান। কিন্তু বিজ্ঞানের জয়জয়কারের এই যুগে আজ বিজ্ঞানীরাও আতঙ্কিত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এই অগ্রগতির ভবিষ্যৎ নিয়ে। কারণ তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার ও অনৈতিক ব্যবহার হচ্ছে। যার ফলে মানুষের জীবন হয়ে পড়েছে নিরাপত্তাহীন। অন্যদিকে, মানুষের অর্থনৈতিক বিকাশ যতদ্রম্নত হচ্ছে তার চেয়ে দ্রম্নত ও সর্বব্যাপী রূপ নিয়েছে দুর্নীতি-অন্যায়-অনিয়ম। একটি সমাজের টেকসই বিকাশের জন্য এসবই প্রতিবন্ধক। এই বাধা দূর করার জন্য প্রয়োজন যথোপযুক্ত শিক্ষা। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো বিষয় মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে লক্ষ্য করা যায় না। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা নামের বিষয়গুলো মূলত ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা আলোচনা করা হয়েছে। সব ধর্মের মানুষের জন্য প্রযোজ্য অসম্প্রদায়িক নৈতিক শিক্ষা এখানে নেই। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য ও আনন্দপাঠ পাঠ্যবিষয়সমূহে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গল্পে নৈতিক মুল্যবোধ জাগ্রত করার উপাদান রয়েছে যা একেবারে অপ্রতুল। অর্থাৎ নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কিত কোনো স্বতন্ত্র বিষয় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে নেই। ব্যক্তির চরিত্রবান হবার ক্ষেত্রে স্কুল পর্যায়ে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এখন প্রশ্ন হলো একটি স্বতন্ত্র হিসেবে 'নীতিশিক্ষা' পঠনপাঠনের যৌক্তিকতা কতটুকু। এটা সর্বজনবিদিত যে, শৈশব ও কৈশোরে একজন ব্যক্তির মন থাকে কাদামাটির মতো। মনন ও চরিত্র গঠনের জন্য এটি উপযুক্ত সময়। তাই শিক্ষার্থীকে এই সময় নৈতিকতা সম্পর্কে সঠিক ও পর্যাপ্ত শিক্ষা দিতে পারলে তার মানসিক গঠন কাঠামোর ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। দার্শনিক জন লক মনে করেন জন্মের সময় মানবশিশুর মন থাকে অলিখিত সাদা কাগজের মতো। সেখানে কোনো ধারণা মুদ্রিত থাকে না। পরে আমরা মানব মনে যে বিচিত্র ধারণার সহাবস্থান লক্ষ্য করি এবং যুক্তি ও জ্ঞানের সব উপাদান মনে আসে তা সম্ভব হয় একমাত্র অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। অভিজ্ঞতার পূর্বে তার মনের মধ্যে কোনো ধারণা বা গুণ থাকে না। এ থেকে আমরা বলতে পারি রাজা হিসেবে। যেমন কেউ জন্মগ্রহণ করে না, তেমনই কেউই জন্ম অপরাধী নয়। পারিপার্শ্বিক নানা কারণে একজন ব্যক্তি অপরাধী হয়। একজন ব্যক্তির শৈশব ও কৈশোরের পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ গঠনমূলক ও আনন্দময় হলে পরবর্তী জীবনে এর একটি সুফল পাওয়া যেতে পারে। একজন ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করবে, তার উদ্দেশ্য কি হবে- এসব বিষয়ে তার ব্যক্তিত্বকে পরিশীলিত ও পরিচালিত করে নৈতিক শিক্ষা। নৈতিক মূল্যবোধ হলো একগুচ্ছ নীতিমালা যা সারাজীবন ব্যক্তিকে পরিচালিত করে। এই নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া উচিত কি না সে প্রশ্নে একটি বিতর্ক বহু বছর ধরে চিন্তাবিদদের মধ্যে চলে আসছে। অনেকেই বিশ্বাস করে যে নৈতিক মূল্যবোধ শেখানো যায় না, এটা বরং মানুষ বয়োজেষ্ঠ্যদের কাছে শিখে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথমেই যে প্রশ্নটি উঠতে পারে তা হলো আমরা একটি ভ্রান্ত কাজ থেকে সঠিক কাজকে কিভাবে পৃথক করব যদি না ওই বিষয়ে জ্ঞান থাকে? একটি কাজকে কেউ সঠিক, কেউবা ভ্রান্ত বলে বিবেচনা করতে পারে। কাজেই সমাজে সবাই মিলে বসবাস করার স্বার্থেই নীতিশিক্ষা বা নৈতিক মূল্যবোধের সর্বজনীন মানদন্ড থাকা জরুরি। নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা তাই গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল পর্যায়ে নীতিশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না সে বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও নীতিশিক্ষার গুরুত্বকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। নীতিশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য করলেই আমরা নীতিশিক্ষা পাঠের গুরুত্ব অনুধাবন করতে সক্ষম হবো। প্রশ্ন হচ্ছে যে, শিক্ষার্থীদের নীতিবোধ শেখানোর কোনো সর্বজনীন পদ্ধতি কি আছে? সত্যিকার অর্থে বলা যায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সে রকম কোনো পদ্ধতি পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন উপায়ে ব্যক্তির নৈতিক শিক্ষা লাভ হয়ে থাকে। যেমন : একজন শিশুকে নৈতিক মূল্যবোধ শেখানোর ক্ষেত্রে শিক্ষক ও পিতা-মাতা মূল ভূমিকা পালন করে থাকে। একজন শিশু অসদাচরণ করলে সাধারণত প্রথমেই তার পিতা-মাতা ও শিক্ষককে দায়ী করা হয়। শিশুরা সাধারণত নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য মিথ্যা কথা বলে। শিক্ষকদের উচিত তাদের সঠিক নির্দেশনা ও উপদেশ দেওয়া। শিক্ষকরা শিশুদের সবচেয়ে বড় উৎসাহদাতা। শিক্ষার্থীরা সবসময়ই শিক্ষকদের আদর্শ হিসেবে মনে করে। তাই শিক্ষকদের উচিত নিজেদের নীতিবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেব গড়ে তোলা যাতে শিক্ষার্থীদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া নৈতিক গল্প পড়ার মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীতিবোধ গড়ে উঠে থাকে। নীতিবোধসম্পন্ন ও সংস্কৃতিবান পরিবারের শিশুরাও অনেক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মন্দ পরিবেশের কারণে নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলতে পারে। নৈতিক ভিত্তি একজন ব্যক্তির জন্য প্রয়োজন। এজন্য স্কুল পর্যায়ে নীতিবোধ শেখার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। শৈশবে ইতিবাচক শিক্ষার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির নিষ্ঠুর হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় বলে বার্ট্রান্ড রাসেল মনে করেন। এক্ষেত্রে একটি উপায় হতে পারে যেসব মনীষী জীবনে সঠিক পথ অনুসরণ করেছেন তাদের জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা। একই সঙ্গে বিভিন্ন নৈতিক গল্প পাঠ্য-পুস্তকের মধ্যে সন্নিবেশিত করা, যাতে শিক্ষার্থী সেসব অধ্যয়ন করে নীতিশিক্ষা পেতে পারে। আরেকটি উপায় হলো স্কুল পর্যায়ে আলাদা পাঠ্যবই বা কোর্স হিসেবে 'নীতিশিক্ষা' বা এরূপ অন্য কোনো নামে স্বতন্ত্র কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যদি স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নীতিবোধ শেখানো যায তবে ভবিষ্যতে নৈতিক সংকট চিহ্নিত করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। নীতিশিক্ষার তাৎপর্য খুবই ব্যাপক। তাই নীতিশিক্ষা মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। সমকালীন দর্শনের গতিধারায় একটি যুগান্তকারী দিক হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বর্তমানে স্কুলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিশুদের দর্শন শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে শিশুদের জন্য উপযোগী করে খড়মরপ ভড়ৎ শরফং ্‌ ষড়মরপ ভড়ৎ :ববহং শীর্ষক গ্রন্থ এবং অনুরূপ গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানব সভ্যতাকে দিয়েছে জ্ঞানের শক্তি, কিন্তু এই শক্তির দিক নির্দেশনা আসবে নৈতিক আদর্শের দৃষ্টিকোণ থেকে। তা না হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞানের শক্তির প্রয়োগ সভ্যতার জন্য সংকট তৈরি করবে, যেমন ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। তাছাড়া আমরা মনে করি মানুষের অপরাধপ্রবণতা দূর করার জন্য প্রয়োজন ফক কারণে সে অপরাধ করছে তা অনুসন্ধান করা এবং সেই কারণগুলো দূর করার চেষ্টা করা। অর্থাৎ তার অপরাধের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক বা নৈতিক কারণগুলো খুঁজে পেলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সহজ হতে পারে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে দক্ষ মানবশক্তি প্রয়োজন। যার জন্য স্কুল পর্যায়ে, বিশেষত মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে সাহিত্য, ভাষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় পাঠদান করা হয়। কিন্তু বর্তমানের কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রমে 'নীতিশিক্ষা'র সীমাবদ্ধতা আছে। মানুষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রম্নত হলেও সর্বব্যাপী রূপ নিয়েছে দুর্নীতি। যা টেকসহ উন্নয়নের জন্য বড় বাধা। এই বাধা দূর করার জন্য কেবল দক্ষ মানবশক্তি নয়, বরং নৈতিক ও মানবিক শক্তিরও প্রয়োজন। \হকিন্তু নৈতিক মূল্যবোধ দৃষ্টির সহায়ক কোনো স্বতন্ত্র পাঠ্যবিষয় মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাক্রমে না থাকার বিষয়টি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায় যে, কৈশোরে নীতিবোধ জাগ্রত করতে পারলে ব্যক্তি ভবিষ্যতে নৈতিক সংকট চিহ্নিত করে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। তাই গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে স্বতন্ত্র কোর্স হিসেবে নীতিশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। পরিশেষে, এ কথা বলা যায় যে, দুর্নীতিসহ সব ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে নৈতিকতাবোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই যুক্তিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে স্বতন্ত্র পাঠ্য বিষয় হিসেবে নীতি শিক্ষা' অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ডক্টর ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, কলামিস্ট ও গবেষক