নতুন কৃষিনীতি দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখবে

জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ অবশ্যই দেশবান্ধব একটি কৃষিনীতিই হবে। পরিবতির্ত জলবায়ু এবং পরিবতর্নশীল বিশে^ টিকে থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে হলে একটি বাস্তবসম্মত কৃষিনীতির বিকল্প নেই। এবারে প্রণীত কৃষিনীতি তারই একটি সফল ও বাস্তব প্রতিফলন বলেই মনে হচ্ছে।

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

ড. মো. হুমায়ুন কবীর
বাংলাদেশ একটি কৃষিনিভর্র অথর্নীতির দেশ। কারণ এখানকার শতকরা প্রায় আশি ভাগ নাগরিকই গ্রামীণ এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। আর সেজন্যই কৃষির উন্নতি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে দেশের সাবির্ক অথর্নীতির একটি সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। সামষ্টিক অথর্নীতি বিবেচনায় যেমনি প্রতি বছর একটি বাষির্ক বাজেট প্রণীত হয়ে থাকে। তেমনি স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি কিংবা দীঘর্ মেয়াদি বিভিন্ন মিশন, ভিশনও ঠিক করা হয়ে থাকে। সেরকমভাবে বাংলাদেশের জন্য রয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা যথা- পঞ্চবাষির্কী পরিকল্পনা, রয়েছে মিশন-২০২১, রয়েছে পরিকল্পনা-২০৩০, ভিশন-২০৪১ এবং আরও রয়েছে আগামী একশত বছরের জন্য ডেল্টা বা বদ্বীপ পরিকল্পনা। এগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কৃষিকে অত্যাধুনিক, যুগোপযোগী ও প্রযুক্তিনিভর্র করতে হলে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু কৃষি নীতির বিকল্প নেই। এ জন্য কিছু দিন পর পর সরকার কতৃর্ক লাগসই কৃষিনীতি প্রণীত হয়ে থাকে। তাই ২০১৩ সালের পর পঁাচ বছরান্তে এ বছর জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ প্রণয়নে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা জানি বতর্মানে জলবায়ু পরিবতের্নর সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে কৃষিখাত। সে জন্য কৃষিতে জলবায়ু পরিবতর্নজনিত ক্ষতিকে নিম্নতম পযাের্য় রেখে অত্যাধুনিক ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোড় দিয়ে কৃষিনীতির খসড়া চ‚ড়ান্ত করেছে মন্ত্রিসভা। এসব নীতিমালার বিবেচ্য বিষয় হিসেবে প্রাধান্য পাচ্ছেÑ কৃষি ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার, প্রতিক‚ল পরিবেশ অঞ্চলের জন্য কৃষি কমর্সূচি গ্রহণ ইত্যাদি। তাছাড়া সংকটাপন্ন অঞ্চলের পানি পানি উত্তোলনের সতকর্তা অবলম্বনের বিষয়গুলোকে যুক্ত করে নতুন জাতীয় কৃষিনীতি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ২০১৩ সালে প্রণীত জাতীয় কৃষিনীতিকে এবারে আরেকটু হালনাগাদ ও সমৃদ্ধ করা হয়েছে। অনেক বিষয় এখানে নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে। বতর্মান কৃষিনীতি বেশ বিস্তারিত এবং সমৃদ্ধ। নতুন কৃষি নীতিতে ২২টি অধ্যায়, ১০৬টি অনুচ্ছেদ ও উপ-অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে। আগে ছিল ১৮টি অধ্যায় এবং ৬৩টি অনুচ্ছেদ। নতুন কৃষিনীতির অধ্যায়গুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরে সঠিকভাবে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে। জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮-এর প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে ভ‚মিকা এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে কৃষি উন্নয়নে গবেষণা। গবেষণার ক্ষেত্রে ১৯টি ক্ষেত্র নিদির্র্ষ্ট করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য অধ্যায়গুলোর মধ্যে রয়েছেÑ কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি উপকরণ, খামার যান্ত্রিকীকরণ, জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষির পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিশেষ আঞ্চলিক কৃষি, বিশেষায়িত কৃষি, নিরাপদ খাদ্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদন, কৃষি বিপণন, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষিতে যুবশক্তি, কৃষিতে বিনিয়োগ, কৃষি সমবায়, কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কৃষি খাতে শ্রম, সমন্বয় ও সহযোগিতা ইত্যাদি। বিবিধ বিষয়ের মধ্যেÑ মেধাস্বত্ব, জিআই (ভৌগোলিক নিদের্শক) এগুলোও রয়েছে। এ ছাড়া আরও রয়েছে কৃষি শিক্ষা, গবেষণা, প্রচার, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রাধান্য এবং উপসংহার অধ্যায়। ন্যানো প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়টি নতুন কৃষি নীতিতে সংযুক্ত করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। তাছাড়া মান ঘোষিত বীজ উৎপাদন, নগরকেন্দ্রিক কৃষি সম্প্রসারণ সেবা; এটিও আগের নীতিতে ছিল না। এ ছাড়া কৃষিকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য শুধু কৃষি মন্ত্রণালয়ই নয় সংশ্লিষ্ট হিসেবে বাণিজ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ও এ লক্ষ্যে কাজ করছে যাদের নীতির মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় কৃষি শুমারি বাস্তবমুখী করতে ১৭০টি কৃষি পণ্যের জন্য তথ্যভাÐার তৈরি করা হচ্ছে। সেই তথ্যভাÐার ব্যবহার করে সেই ১৭০টি কৃষিপণ্য দেশ বিদেশে আমদানি রপ্তানি করার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ইলিশ মাছকে একটি জিআই পণ্যের তালিকায় সংযুক্ত করতে পেরেছে। কাজ চলছে পাটসহ আরও কিছু কৃষিপণ্যের আন্তজাির্তক মানদÐে নিয়ে যাওয়ার। ১৪০টি কৃষিপণ্যের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে নিয়ে জাতীয় কৃষিপণ্য রপ্তানি নীতিমালা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এমনিতেই জানি বতর্মান সরকার কৃষি ক্ষেত্রকে উন্নয়নের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে মনে করেন। কাজেই বতর্মান সরকারের কৃষিনীতি কৃষি ও কৃষক এবং সবোর্পরি দেশের সাবির্ক অথর্নীতিবান্ধব হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ অবশ্যই দেশবান্ধব একটি কৃষিনীতিই হবে। পরিবতির্ত জলবায়ু এবং পরিবতর্নশীল বিশে^ টিকে থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে হলে একটি বাস্তবসম্মত কৃষিনীতির বিকল্প নেই। এবারে প্রণীত কৃষিনীতি তারই একটি সফল ও বাস্তব প্রতিফলন বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের দেশ দ্রæত অথৈর্নতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। এ উন্নয়নের ধারায় একটি পালক লাগাবে এ কৃষিনীতিÑ এটিই সবার প্রত্যাশা। ড. মো. হুমায়ুন কবীর: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শনফযঁসধুঁহ০৮@মসধরষ.পড়স