তিন সিটির নিবার্চন

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হোক

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নিবার্চন অনুষ্ঠিত হবে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি ক‚টনীতিকদের দৃষ্টি এখন এই তিন সিটির আসন্ন নিবার্চনের দিকে। মাঠ পযাের্য় সরাসরি নিবার্চন পযের্বক্ষণে না থাকলেও তারা সামগ্রিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পযের্বক্ষণ করবেন। ইতোমধ্যে তারা সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন অবাধ ও নিরপেক্ষ নিবার্চন অনুষ্ঠানের জন্য। এ ছাড়া ১৪ জুলাই মাকির্ন রাষ্ট্রদূত মাশার্ বানির্কাট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করে এই সিটি নিবার্চন তিনটি যতটা সম্ভব অনিয়ম না করার আহŸান জানান। বৈঠকে তিনি খুলনা এবং গাজীপুর নিবার্চনের কিছু অনিয়ম তুলে ধরে এসব অনিয়ম নিরসনে সরকারের অবস্থান সম্পকের্ও তিনি জানতে চেয়েছেন বলে খবরে প্রকাশ করা হয়েছে। যেকোনো নিবার্চন নিরপেক্ষ ও সবর্জনগ্রাহ্য করতে সরকার এবং নিবার্চন কমিশনের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্, এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোরও কতর্ব্য হওয়া দরকার ইসিকে সবর্তভাবে সহযোগিতা করা। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে আসন্ন তিন সিটির নিবার্চন নিয়ে শুধু বিদেশি ক‚টনীতিকই নন, দেশের সাধারণ মানুষেরও কৌত‚হল থাকা অমূলক নয়। আমাদের দেশে নিবার্চন রীতিমতো উৎসবের। স্থানীয় সরকার নিবার্চনে জনসাধারণের সংশ্লিষ্টতা বেশি থাকায় এখানে উৎসবের আমেজটাও বেশি পরিলক্ষিত হয়। নিবার্চনে বিরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি না হলে তিন সিটি নিবার্চনও যে উৎসবের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে তা বলাই বাহুল্য। আর নিবার্চন উৎসবমুখর করতে ইসি ও সরকারের ভ‚মিকাও অত্যন্ত স্বচ্ছ হওয়া আবশ্যক। ইসি প্রতিটি নিবার্চনে ব্যাপক প্রস্তুতি এবং কঠোর অবস্থান গ্রহণ করার ঘোষণা দিলেও দুঃখজনক বাস্তবতা হলো নিবার্চন ত্রæটিমুক্ত হচ্ছে না এমন অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে জালভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়াসহ নানান অভিযোগ পাওয়া যায়। অনাকাক্সিক্ষত এসব ঘটনা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চনের অন্তরায় নিঃসন্দেহে। দেশের গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশের স্বাথের্ও এসব অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবেও বিবেচিত। দলীয় সরকারের অধীন নিবার্চন সুষ্ঠু হতে পারে না, বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যখন এমন অভিযোগ বার বার উচ্চারিত হয়, তখন নিবার্চন অনুষ্ঠানের অনিয়মগুলো নিরসনের বিকল্প থাকা উচিত নয়। এবার তিন সিটি নিবার্চনেও সংসদ সদস্যরা প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। বতর্মান আচরণবিধিতে সংসদ সদস্যদের প্রচারে নামার সুযোগ না থাকায় এটি সংশোধনের দাবি তুলেছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তারা বলেছিল, বিএনপি সংসদে না থাকায় তাদের নেতারা প্রচারে নামতে পারছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা প্রচারের সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে নিবার্চনে সবার সমান সুযোগ থাকছে না। তাদের দাবির মুখে খুলনা ও গাজীপুর সিটি নিবার্চনের আগে আচরণবিধি সংশোধনে উদ্যোগী হয় নিবার্চন কমিশন। এর বিরোধিতা করে বিএনপি। তারা বলে, ক্ষমতাসীনদের খুশি করতেই আচরণবিধি সংশোধন করছে নিবার্চন কমিশন। অতঃপর শুধু সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্যদের প্রচারে অংশ নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা রেখে সংশোধিত আচরণবিধির খসড়া তৈরি করে কমিশন এবং অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পর এ নিয়ে আর আগ্রহী হয়নি কমিশন। কমিশন আসলে বিরূপ সমালোচনা এড়িয়ে চলতে চাইছে। বতর্মান পরিস্থিতিতে তাদের এ প্রবণতা অমূলক নয়। যদিও সরকারিপক্ষ সমান সুযোগ মেলেনি বলে অসন্তোষ প্রকাশ করবে। তবু এটি মন্দের ভালো; নিবার্চনে সরকারি দল সুযোগের অপব্যবহার করেছে, এ অভিযোগ তত জোরালোভাবে উঠবে না। যা হোক, প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। বিদেশি ক‚টনীতিকরাও নিবার্চনের সামগ্রিক পরিস্থিতি পযের্বক্ষণ করুণ। সুষ্ঠুভাবে সবাই প্রচারণায় অংশ নিক। সংঘাত নয়, শান্তিপূণর্ প্রচারণা হোক। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই তিনি সিটির নিবার্চন অনুষ্ঠিত হোক। ইসির নিবার্চনকালীন যে ক্ষমতা, তার সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে নিবার্চন অনুষ্ঠান নিয়ে আশঙ্কার কিছু থাকবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তিন সিটির নিবার্চন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকার, নিবার্চন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলো আরও আন্তরিক হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।