থামছেই না দুর্ঘটনা

সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করুন

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে বুধবারও দেশের ৯ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ ১৩ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি এক ছাত্রী পা হারিয়েছেন। আর বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কল্যাণপুর, খুলনার রূপসা, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এবং নরসিংদীতে তিন শিক্ষার্থী ও এক শিক্ষক প্রাণ হারান। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বুধবারের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে ৭৫৪ দিনের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিহত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৮১ জনে। এ তথ্য অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এবং অত্যন্ত উদ্বেগজনক এক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সূত্রে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। আর বাংলাদেশেও সড়কে মৃতু্যর মিছিল নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানান বিশ্লেষণে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো সামনে আসে; সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের পর প্রকল্প গ্রহণ করে এরপরও সড়কের নৈরাজ্য যেমন কমে না, সার্বিক দৃশ্যেরও কোনো পরিবর্তন ঘটে না। ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জনগণেরও অসহায়ত্ব ঘোচে না। এভাবে একটি দেশের পরিবহন খাত চলতে দেয়া কিছুতেই উচিত নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সড়ক দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যে দাবি তুলেছেন, তা অত্যন্ত যৌক্তিক। তারা বলছেন, 'জেব্রা ক্রসিংয়ে লাশ, নিরাপত্তা কোথা?' দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষও জেনে গেছে, 'সুপ্রভাত' পরিবহনের যে বাসটি প্রগতি সরণির জেব্রা ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আবরারকে চাপা দিয়েছিল, তার চালকের যাত্রীবাহী বাস চালনার লাইসেন্স নেই। পুলিশ বাসটির চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করেছে। এখন ট্রাফিক সপ্তাহ চলছে। প্রতিদিন ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা আদায়ের খবর জানানো হচ্ছে। লাইসেন্স ছাড়া চালক রাজপথে, ট্রাফিক বিভাগের নজর এড়ালো কী করে? গত বছরের জুলাইয়ে বিমানবন্দর সড়কে দুই শিক্ষার্থীর মৃতু্যর পর দেশের অনেক স্থানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা গাড়ির ফিটনেস, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করে। এর ফল দেখে দেশবাসী হতবাক হয়ে পড়েছিল- সর্বত্র সীমাহীন নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা। আইন প্রণেতাদের অনেকে আইনের বিধান উপেক্ষা করেন। আইন বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা আইন উপেক্ষা করেন। তখন প্রতিশ্রম্নতি দেয়া হয়েছিল- সব ঠিক হয়ে যাবে। বলা হয়েছিল, শিশুরা রাষ্ট্র ও সমাজের চোখ খুলে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবেই সংশ্নিষ্টদের চোখ খুলেছে? আসলে কিছুই বদলায়নি। এবারও শিক্ষার্থীরা দাবি করছে- নিরাপদ সড়ক চাই, বাসচালকের বিচার চাই। চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ চাই। গাড়ির ফিটনেস থাকা চাই। অন্যদিকে সংশ্লিষ্টরা সড়ক ব্যবস্থাপনা ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বড় প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক-উড়ালসড়ক নির্মিত হলেও তাতে জীবনের নিরাপত্তা আসেনি। প্রশ্ন হলো, সড়কে এই ধারাবাহিক মৃতু্যর দায় কে নেবে? আর কত প্রাণহানি ঘটলে সড়কব্যবস্থা নিরাপদ হবে? গতবছর সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পাস হলেও এর বাস্তবায়নে আরও দুই বছর সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা আইনটি শিথিল করতে দাবি তুলেছেন। আইনের অনেক সাজাকে খুব বেশি কঠোর বলছেন তারা। নেতাদের 'চাপে' কার্যকরের আগেই সংশোধন হতে পারে বহুল আলোচিত পরিবহন আইন। বিধিমালাতেও কিছু ছাড় আসতে পারে তাদের জন্য। সুতরাং বিধিমালা না হওয়া পর্যন্ত ৩৬ বছরের পুরনো মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩ দিয়ে চলবে দেশের পরিবহন খাত। নতুন আইনের বর্ধিত সাজা ও জরিমানা ভোগ করতে হবে না দায়ীদের। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কেউ কেউ বলছেন পরিবহন মালিকদের কাছে সরকার নতজানু। সরকারের নির্লিপ্ততা এই ধারণাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করে বলেই প্রতীয়মান হয়। সর্বোপরি বলতে চাই, নিরাপদ সড়ক গড়তে সবার দায়িত্ব আছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। ট্রাফিক নিয়ম মানতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের একটি অংশের মধ্যে মানুষকে জিম্মি করে রাখার যে প্রবণতা, তার অবসান ঘটাতে হবে। সবকিছুর ওপরে রয়েছে সংশ্নিষ্ট বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা। তাদের কাজে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি থাকতেই হবে। উন্নয়নের মহাসড়কে নির্বিঘ্নে চলতে চাইলে অনেক বিষয়ে থাকতে হবে দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকার- নিরাপদ সড়ক ও সড়কে সুশাসন প্রতিষ্ঠা যেন সে তালিকায় অবশ্যই ওপরের দিকে থাকে।