এইচএসসি ও সমমানের ফল

উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের ১০টি শিক্ষা বোডের্র অধীন অনুষ্ঠিত চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। এ বছর পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর কৃতকাযের্দর মধ্যে ২৯ হাজার ২৬২ জন জিপিএ-৫ অজর্ন করেছে। গতকাল সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষা বোডর্গুলোর চেয়ারম্যানরা। পরীক্ষায় প্রশ্ন ফঁাসের অভিযোগ না ওঠায় সরকারপ্রধান এবছরের পরীক্ষা পদ্ধতির প্রশংসা করে পুরো পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার কথা ভাবতে বলেছেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষাথীর্ ও ভালো রেজাল্টধারী তৈরির ওপরই বেশি জোর দেয়ার বিষয়টি কয়েক বছর ধরেই আলোচিত। এর পেছনে যেমন সরকারের বাহŸা-কতৃর্ত্ব নেয়ার প্রবণতাকে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা, তেমনি দায়ী বাবা-মা ও অভিভাবকদের ভালো ফলের প্রত্যাশাও। আমরা মনে করি, কেবল ভালো ফল নয়, শিক্ষাথীর্রা কতটুকু শিখছে, জীবন সম্পকের্ তাদের বোধ কতটুকু তৈরি হচ্ছে সেটা নিশ্চিত করাই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। পাশাপাশি উত্তীণের্দর উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতের বিষয়েও যথাযথ গুরুত্ব দেয়া সমীচীন। তবে গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার এবং পূণর্ জিপিএ পাওয়া পরীক্ষাথীর্র সংখ্যা- দুটোই কমেছে। এতে ধারণা করা যায়, মানসম্মত শিক্ষার ওপরও জোর দেয়া হয়েছে। চলতি বছর পাসের হার কম হলেও ফল প্রকাশের পর থেকে সারাদেশের কৃতকাযর্ শিক্ষাথীর্রা আনন্দে মেতেছেন। তথ্য অনুযায়ী, ২ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। তত্ত¡ীয় পরীক্ষা চলে ১৩ মে পযর্ন্ত। আর ১৪ থেকে ২৩ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। এ বছর এইচএসসিতে আটটি সাধারণ বোডের্র অধীনে ১০ লাখ ৯২ হাজার ৬০৭ শিক্ষাথীর্, মাদ্রাসা বোডের্র অধীনে আলিমে ১ লাখ ১২৭ জন, কারিগরি বোডের্র অধীনে এইচএসসি (বিএম)-এ ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৫৪ জন এবং ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজে (ডিআইবিএস) ৯৬৯ জন পরীক্ষাথীর্ অংশ নেয়। এ ছাড়া বিদেশের সাতটি কেন্দ্রে ২৯৯ শিক্ষাথীর্ পরীক্ষায় অংশ নেয়। বলাই বাহুল্য, পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ফঁাস হয়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে বেকায়দায় ছিল শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু এবার নতুন কিছু কড়াকড়ি আরোপের ফলে প্রশ্ন ফঁাসের অভিযোগ ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা শেষ হয়। এবার পরীক্ষা শেষ করার পর ৫৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে পারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি আজকের বাস্তবতায় পরীক্ষার সময় কী করে কমানো যায়, তা খুঁজে দেখার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সময় কমে এলে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে, পরীক্ষাটাও তাড়াতাড়ি হবে, আর নানা ধরনের প্রচার-অপপ্রচারের হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে। শিক্ষাথীের্দর উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন থেকে মনোযোগ দিয়ে পড়লে কৃতকাযর্ হবে। নিজের ইচ্ছায় পড়তে হবে। ছেলেমেয়েদের বকাঝকা করবেন না। কেন খারাপ করল, তা খুঁজে বের করুনÑ সরকারপ্রধান অভিভাবকদের এমন পরামশর্ও দিয়েছেন। স্মতর্ব্য যে, ফল-বিপযর্য় বা উল্লম্ফন কোনোটাই জাতির জন্য স্বস্তিকর নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা যখন ‘সাধ আছে সাধ্য নেই’ পযাের্য়, তখন মানসম্পন্ন শিক্ষাদানও কঠিন। আবার শিক্ষকরা যখন বেতনের জন্য রাস্তায় আন্দোলন করেন, তখন সাধারণ শিক্ষাদানও কতটা ব্যাহত হয় সেটা বিবেচনায় নেয়া সঙ্গত। এবছর পাসের হার কমলেও যে বিপুলসংখ্যক শিক্ষাথীর্ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীণর্ হলো, তাদের জন্য উচ্চশিক্ষার দরজা কতটা খোলা আছে, বা খোলা রাখা প্রয়োজন সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। একদিকে হাজার হাজার স্নাতক তৈরি হয়ে বেকার বসে থাকা, অন্যদিকে চাহিদামাফিক দক্ষ জনশক্তির জোগান দিতে না পারা- দ্বিমুখী জাতীয় ক্ষতি বলেই মনে করি। ফলে উচ্চশিক্ষার বিষয়টিকে জাতীয় পরিকল্পনার অন্তভুর্ক্ত করার বিকল্প নেই। উত্তীণর্রা যথাযথভাবে উচ্চশিক্ষা না পেলে তা কেবল ওই শিক্ষাথীর্ ও অভিভাবকদেরই ক্ষতি নয়, রাষ্ট্র ও সমাজেরও বিরাট লোকসান। ফলে এই লোকসান যত দ্রæত এবং যত বেশি পরিমাণে কমিয়ে আনা যায়, ততই মঙ্গল। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টিকে সবাির্ধক গুরুত্ব দিক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যারা উত্তীণর্ হয়েছে, তাদের সবাইকে অভিনন্দন।