এখনো লাইসেন্সবিহীন গাড়ি!

সংশ্লিষ্টদের বোধোদয় ঘটবে কবে

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সড়কের নিরাপত্তার দাবিতে ২০১৮ সালের আগস্টে দেশব্যাপী বৃহত্তর গণআন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আইন সংস্কারসহ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বেশকিছু উদ্যোগ নিলেও তার বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে সড়কে একের পর এক মর্মস্পর্শী দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। কতজনকে পঙ্গুত্ববরণ করতে হচ্ছে তারও হিসাব নেই। সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় বিইউপির শিক্ষার্থী আরবার নিহত হওয়ার পর আবারও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে তারা সড়কে যে সব যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা করেছে তাতে দেখা গেছে বেশির ভাগ গাড়ির বৈধ কাগজপত্র নেই। অন্যদিকে, সুপ্রভাত পরিবহনের যে বাসটি আরবারকে চাপা দিয়েছে, সেই বাসটির বিভিন্ন অনিয়ম ও ত্রম্নটির কারণে ২৭ বার আইনিব্যবস্থা নেয়া হলেও বাসটি কীভাবে রাস্তায় চলল- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ডিএমপি কমিশনার। এতে স্পষ্ট হতে পারে, গণপরিবহন নিয়ে দেশে যা ঘটে চলেছে তা অত্যন্ত আতঙ্কের। বলার অপেক্ষা রাখে না, সারা দেশের গণপরিবহন নিয়ে জনগণের নানামাত্রিক অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীতে চলাচলকারী গণপরিবহনের চালকরা এতটাই বেপরোয়া যে, এদের লাগাম কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে এ কথা যেমন অস্বীকারের সুযোগ নেই, তেমনিভাবে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কাছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নতজানু নীতির বিষয়টিও নানান কর্মকান্ডের ভেতর দিয়ে সামনে চলে আসছে। একটি দেশের গণপরিবহন খাত এভাবে চলতে দেয়া উচিত নয়, এ কথা বহুবারই বলেছেন বোদ্ধারা। এরপরও পরিস্থিতির উত্তরণ না হওয়া সত্যিই পরিতাপের। আমরা লক্ষ্য করেছি, বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো সামনে এসেছে। নানান জরিপ ও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতাও দায়ী দুর্ঘটনার জন্য। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, সংশ্লিষ্টরা কেন এ ব্যাপারে এতটা উদাসীন? একটি দেশে কীভাবে লাইসেন্সবিহীন যানবাহন সড়কে চলাচল করতে পারে, তা জেনে বিস্মিত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। মাঝেমধ্যেই রাজধানীতে ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের খবর পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টদের দেখা যায়, গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করতে। আমরা জানি গত বছরের আন্দোলনের পর সরকার ছয় মাসের সময় চেয়েছিল সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে। এখন যখন জানা যাচ্ছে, দীর্ঘ আট মাসেও অধিকাংশ গাড়ির বৈধ কাগজই নেই, তখন সরকারের সদিচ্ছা ও ভূমিকার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ না হয়ে পারে না। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে যে সব তথ্য উঠে এসেছে তাতে স্পষ্ট হতে পারে পরিস্থিতি একটুও বদলায়নি। আন্দোলনকারীরা বলছেন, এতে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অন্যদিকে ডিএমপি কমিশনার দাবি করেছেন, সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা আন্তরিক। সড়কে পুলিশ খুব আন্তরিক এটা স্বীকার করেই বলতে চাই, আন্তরিকতার ফল যদি 'তথৈবচ' হয় তাহলে সড়কে কীভাবে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে, তা সংশ্লিষ্টদেরই খুঁজে বের করতে হবে। সরকারের কঠোরতার পরও এত অনিয়ম কোথায় তা খতিয়ে দেখে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে তাদেরই। তা না হলে, এই বিশৃঙ্খলার দায় তাদের কাঁধেই বর্তাবে বলে আমরা মনে করি। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা এমন উদ্যোগ নিশ্চিত করবে যাতে 'নিরাপদ সড়ক' বাস্তবেই প্রতিষ্ঠিত হয়। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কম কথা বলা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ফলে যে কোনো মূল্যে সড়ক নিরাপদ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। গাড়িচালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালনা বন্ধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তা থেকে ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন অপসারণ করতে হবে। চালকদের সুনির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। এর জন্য সর্বাগ্রে সচেতনতা জরুরি আর ক্ষেত্র বিশেষে সংশ্লিষ্টদের বিবেক জাগ্রত হওয়া দরকার। একটি স্বাধীন দেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বা জীবন বাজি রেখে যাতায়াত করতে হচ্ছে জনগণকে। এর চেয়ে পরিতাপের আর কি হতে পারে। মনে রাখা দরকার, সড়কে লাশের মিছিল কেউ দেখতে চায় না।