স্বাধীনতা দিবসে প্রাপ্তি ও তৃপ্তি

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

মাহমুদুল হক আনসারী ঢাকা
মহান স্বাধীনতার উত্তাল মার্চ মাস। বাঙালি জাতি স্বাধীনতার স্থপতি শহীদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে এ মাসে হানাদার পাকিস্তানি জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতন ও শোষণ থেকে আজকের বাংলাদেশ ১৯৭১-এ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা অর্জন করে। দীর্ঘ নয় মাস তুমুল সংগ্রাম, আন্দোলন আর যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীন মানচিত্র ছিনিয়ে আনে। সে অনেক ঘটনাপ্রবাহের কথা। অসংখ্য সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং আর জেল-জুলুমের করুণ ইতিহাস পৃথিবীর ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছে। সেদিন একটি পক্ষ স্বাধীনতার বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। সব ধরনের জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তাজা রক্ত আর মা-বোনের ইজ্জত আব্রম্ন বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতার লাল-সবুজের পতাকা এ জাতি অর্জন করে। সালাম ও সশ্রদ্ধা ভরে তাদের আত্মার স্মরণ করছি আজকের এ দিবসে। হাজারো জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী বেইমান, মুনাফেক অসংখ্য অপচেষ্টা করেও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দামিয়ে রাখতে পারেনি। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে হয়তো এত সহজে এ স্বাধীনতা অর্জন করা যেত না। মহান এ নেতার আত্মত্যাগ সপরিবারে তাকে শহীদ করার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী সে বেইমানগোষ্ঠী আরেকটি কালো অধ্যায়ের ইতিহাস রচনা করে গেছে। আজকের এই দিনে ওই কুখ্যাত খুনিদের ধিক্কার জানিয়ে বাংলার আপামর জনতার নেতা স্থপতি বঙ্গবন্ধুর প্রতি অজস্র সালাম ও শ্রদ্ধা। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে আজ জাতি পা রাখছে। অর্ধ শতকের এ সময়ে বাঙালি জাতির অর্জন প্রাপ্তি ও তৃপ্তি নিয়ে দুটি কথা না বলে পারছি না। এ সময়ে বাংলাদেশে স্বাধীনতার পক্ষ আর বিপক্ষ দেশ শাসন করেছে। শাসন আর শোষণের হিসেব-নিকেশ পর্যালোচনা করলে দেশ যেভাবে সার্বিকভাবে উন্নয়ন অগ্রগতি অর্জন করার কথা ছিল জাতি তা দেখেনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, মামলা-হামলা, জেল-জুলুমের ষড়যন্ত্রে দেশের আমজনতার কাঙ্ক্ষিত সফলতা হয়নি। হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ, অসহযোগ আন্দোলনের নামে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ যেভাবে বিশ্বের কাছে মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল তা জাতি অনেকদিন আবলোকন করতে পারেনি। তৃপ্তি ও আনন্দের কথা হলো মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে আজকের বাংলাদেশ শিক্ষা-দীক্ষা উন্নয়ন অগ্রগতিতে রেমিট্যান্সের আয় আসাধারণ সফলতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। আজ উন্নয়নের সঙ্গে শহর, গ্রাম সবখানে শিক্ষার মশাল ঘরে ঘরে জ্বলছে। দেশের খেটে খাওয়া কৃষক, জেলে, কামার, কুমারের সন্তানরা শিক্ষার আলো ছড়িয়ে মশাল জ্বালাচ্ছে। উন্নয়নের অব্যাহত গতি শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। লাখো কোটি টাকার বাজেট স্বাধীন বাংলাদেশ আজ পবিত্র সংসদে পাস করছে। উন্নয়নের জোয়ারে সারাদেশ অট্টহাসিতে উদ্বেলিত। ঘরে ঘরে বিদু্যৎ, শহর আর গ্রাম কোনো পার্থক্য নেই। তথ্যপ্রযুক্তিতে আজকের তরুণ প্রজন্ম দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হচ্ছে। কৃষকের ছেলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। শিক্ষা আর তথ্যপ্রযুক্তি এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাতের নাগালে। মাত্র কয়েক বছর আগে মোবাইলের একটা সিম বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। আর সে সিম এখন ফ্রি-তে পাওয়া যায়। প্রায় আঠারো কোটি জনগণের এ দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি এখন জনগণ দেখছে না। উৎপাদন, বিপণন বাজার সবদিকেই দেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপিয়ান কতিপয় দেশ বাংলাদেশকে ভিক্ষুক আর খয়রাতির দেশ বলছিল মাত্র কয়েক বছর আগে। আজ তারাও বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়নে বেকুপ হয়ে আছে। পদ্মা সেতুর মতো মেঘা বিশাল অর্থের প্রজেক্ট বাংলাদেশের সৎ ও সাহসী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। সম্পূর্ণ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে দেশব্যাপী হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রজেক্ট বাস্তবায়ন অব্যাহত আছে। এ তৃপ্তির সাধুবাদ না জানানো একটি মানসিক রোগ ছাড়া কিছুই না। জাতীয় উন্নয়ন মানবকল্যাণে সব ধরনের কর্মসূচির প্রতি জাতির নিরঙ্কুশ সমর্থন ও সহযোগিতা রয়েছে। জাতির তৃপ্তির কথা বলে সংক্ষিপ্ত আর্টিকেলে শেষ করা যাবে না। চিকিৎসাসেবাসহ আরও অসংখ্য সফলতার দৃষ্টান্ত বলতে গেলে বলা যায়। তবে কিছু কিছু বিষয় জনগণের অতৃপ্তি অনুভূত হয়। ভোট, নির্বাচন, জনপ্রতিনিধি সিলেকশনে জনগণের মতামত শ্রদ্ধার সঙ্গে রাখতে হবে। স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ধারা উপধারায় দেশ চালিয়ে নিলে বর্তমান সরকার আরও প্রশংসিত হতো। নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার, শিশু ও বয়ঃজ্যেষ্ঠ নাগরিকের প্রতি আরও যত্নবান হওয়া চাই। জনগণের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যকে আরও স্বচ্ছ ও সহজ করতে হবে। ছিন্নমূল গৃহহীন মানুষের মিছিল যেন না বাড়ে সেদিকে যত্নবান হতে হবে। ২২ পরিবার থেকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের দারিদ্র্য জনগণকে মুক্তি দিয়েছে। আবার যেন দেশ ও জাতি নৈব্য ২২ পরিবার দেশকে গ্রাস করতে না পারে। দেশের ভোগ্যপণ্য, নিত্যপণ্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চায় জনগণ। রাষ্ট্রের সব সেক্টরের নজরদারির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশের ভূমিকা আরও স্বচ্ছ জবাবদিহি ও জনবান্ধব করতে হবে। অহেতুক পুলিশি হয়রানি জনগণের মৌলিক ও সংবিধান বিরোধী। পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কোনো অবস্থায় সংবিধান ও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কোনো অবস্থায় তাদের কতিপয় লোকের অবৈধ কর্মকান্ডকে আইন বহির্ভূতভাবে ছেড়ে দেয়া যাবে না। দেশের জনগণের যে ক্ষমতা ও নাগরিক অধিকার অনুরূপভাবে রাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একই নিয়মে চলতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জাতির কল্যাণে রাত-দিন যেভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অনুরূপ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সেভাবে জাতি পেতে চায়। তাহলে আজকের দিনের মহান স্বাধীনতা দিবসে স্বার্থক ও শান্তির নিঃশ্বাস দীর্ঘ হবে। জাতির জনকসহ সব মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ভাই-বোনদের প্রতি গভীর থেকে গভীর অজস্র শ্রদ্ধা জানিয়ে স্বাধীনতার অব্যাহত সাফল্য কামনা করছি। \হ