রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা হোক

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

মোহাম্মদ ফজল সিলেট
রোহিঙ্গা আদিবাসী জনগোষ্ঠী পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি উলেস্নখযোগ্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। এরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত। রোহিঙ্গাদের আলাদা ভাষা থাকলেও তা অলিখিত। মিয়ানমারের আকিয়াব, রেথেডাং, বুথিডাং মংডু, কিয়ক্টাও, মাম্র্রা, পাত্তরকিলস্না এলাকায় এদের বাস। মিয়ানমার ছাড়াও ১৫ লাখের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এবং প্রায় ৫ লাখ সৌদি আরবে বাস করে বলে ধারণা করা হয়। যারা বিভিন্ন সময় বার্মা সরকারের নির্যাতনের কারণে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, রোহিঙ্গারা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে একটি প্রচলিত গল্প রয়েছে এভাবে- সপ্তম শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজন উপকূলে আশ্রয় নিয়ে বলেন, আলস্নাহর রহমে বেঁচে গেছি। এই রহম থেকেই এসেছে রোহিঙ্গা। গত কয়েকদিন আগে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিন জার্মান সাংবাদিক ও এক পুলিশসহ ছয়জনকে ব্যাপক মারধর করেছে রোহিঙ্গারা। এ সময় ভেঙে দেয়া হয়েছে তাদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিও। নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের সাতটি বস্নকের ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে জিম্মি করে রেখেছে মাত্র জনাদশেক সশস্ত্র দুর্র্ধর্ষ রোহিঙ্গার নেতৃত্বে 'নকল আরসা' নামে পরিচিত সশস্ত্র গ্রম্নপের লোকজন। সীমান্তের আরও কয়েকটি শিবিরজুড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় রোহিঙ্গারা ঝাঁপিয়ে পড়ে বিভিন্ন বাঙালিদের ওপর। এতে অনেক বাঙালিদের হতাহতের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়। বাঙালিরাই যেন কিছু সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে নিজ ভূমিতে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে অনেক দালাল মানব পাচারের ব্যবসা চালু করেছে। কথিত আছে, রোহিঙ্গাদের ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বাংলাদেশি আইডি কার্ড এবং ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিতে পারে দালালরা। এতে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি সেজে ভিসা নিয়ে উড়াল দেয় বিভিন্ন দেশে। যে সব রোহিঙ্গার এমন দালাল আর এত টাকা নেই, তারা সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে চায়। কক্সবাজারের বিভিন্ন ঘাট থেকে বোটে করেই যাত্রা শুরু হয় তাদের। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে এই যাত্রা শুরু হলেও; এ যেন এক অনিশ্চিত যাত্রা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক সক্রিয় হয়ে উঠেছে আদমপাচারকারী চক্র। পাচারকারী চক্রের প্রথম টার্গেট রোহিঙ্গা তরুণী। আর এই চক্রের ফাঁদে পড়ে মিয়ানমার থেকেও নতুন করে রোহিঙ্গা তরুণীরা আসছে বাংলাদেশে। এসব তরুণীদের অনেককেই দেশে-বিদেশে বিয়ের নামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যৌন কাজে। কিছু সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের কার্যক্রমে ও কিছু বাঙালি দালালদের দৌরাত্ম্যে রোহিঙ্গা অধু্যষিত এলাকাগুলো ত্রাসের এলাকায় পরিণত হচ্ছে। এতে অসহায় হয়ে পড়ছে সাধারণ রোহিঙ্গারা আর সাধারণ বাঙালিরা। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোসহ জাতিসংঘের উচিত মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ সরকার কাজে এই বিষয়ে শক্ত কূটনৈতিক প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে আগামী দিনে রোহিঙ্গারা জাতীয় সমস্যায় পরিণত হবে।