২৮ বছর পর সচল ডাকসু

বিকশিত হোক সুস্থ রাজনীতি চর্চা

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অবশেষে সচল হলো জাতীয় রাজনীতির সূতিকাগার খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু)। দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে ডাকসুর দায়িত্ব নিলেন নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূর। নবনির্বাচিত কমিটির প্রথম কার্যকরী সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে শনিবার। প্রসঙ্গত, ঢাবি উপাচার্য পদাধিকার বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আর বাকিরা নির্বাচিত হন ছাত্রদের মধ্য থেকে। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন গোলাম রাব্বানী। কার্যকরী এই সভায় নির্বাচিত ভিপি জিএসকে এক বছরের জন্য দায়িত্ব নেয়ার অনুমতি দেন ডাকসু সভাপতি। জানা গেছে, ২৩টি পদের সবগুলোতে জয়লাভ করেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। অন্যদিকে, ১৮টি হলের ১২টিতেই ভিপি-জিএসসহ অধিকাংশ পদে জয় পায় ছাত্রলীগ। বাকি ছয়টিতে স্বতন্ত্র পদে ভিপি-জিএসসহ কিছু পদে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, ডাকসু নেতৃত্বের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার চাপ অনেক বেশি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর ডাকসু সচল হওয়ার মধ্য দিয়ে যদি সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা বিকশিত হয় তাহলেই এর সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যাবে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, একদিকে নবনির্বাচিত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, অন্যদিকে নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষের আন্দোলন চলেছে। অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যা ও সংকট অনেক। বহুবারই আলোচনায় এসেছে যে, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর আবাসিক ব্যবস্থা করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান নিয়েও রয়েছে শিক্ষার্থীদের নানান অভিযোগ। হল পাঠাগার ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়েও আছে নানান প্রশ্ন। এ ছাড়াও পরিবহন সংকট, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, সংস্কৃতিচর্চায় গতি ফেরানো থেকে শুরু করে শিক্ষা-গবেষণার মান বৃদ্ধি- সব মিলিয়ে ডাকসুকে খুব অল্প সময়ে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ডাকসু নেতৃত্বকে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জটি মোকাবেলা করতে হবে, তা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা- বিশ্লেষকদের মত এমনই। ডাকসু নির্বাচনের সুবাদে দীর্ঘদিন পর ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলো সক্রিয়। আবার নির্বাচন নিয়ে সংগঠনগুলোর প্রশ্ন রয়েছে। আবাসিক হলগুলোতে আসনসংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক শিক্ষার্থীকে বাইরে থাকতে হচ্ছে। অপরদিকে হলে জায়গা পেতে সুনির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনের অনুসারী হতে হয়- এমন অভিযোগও আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অসন্তোষ আছে নানান বিষয়ে। শিক্ষার্থীদের অধিকার খর্ব হচ্ছে, এমন অভিযোগও শুনতে পাওয়া যায় মাঝেমধ্যে। সব মিলিয়ে গুণগত মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাসের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও যে ডাকসুর নতুন নেতৃত্বকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে তা বলাইবাহুল্য। নির্বাচিত কমিটির প্রথম কার্যকরী সভার দিনে কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের পক্ষে নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিলের বিষয়টি থেকে চ্যালেঞ্জের বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। উলেস্নখ্য যে, ঢাবি ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য আছে। বাঙালি জাতির মুক্তি ও ভাষিক মুক্তির সূতিকাগারই এই ডাকসু। এ ছাড়া নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের বিষয়টিও বাঙালির জাতীয় জীবনে স্মরণীয় হয়েছে আছে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই আমরা বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে যে প্রশ্ন এবং সন্ধ্যাকালীন বিভিন্ন কোর্স নিয়ে যে সব আপত্তির কথা শোনা যায়, তা নিরসন হওয়া অপরিহার্য। জানা যায়, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালানো এসব সান্ধ্যকোর্স উঠিয়ে দেয়ার পক্ষে অনেকে। আবার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু নতুন নতুন গবেষণার কোনো উদ্যোগ কি ঢাবিতে নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে? এসব বিষয়েও ডাকসুকে নজর দিতে হবে। এ কথা সত্য যে, বর্তমানের নতুন নেতৃত্ব আধুনিক মানসিকতার তরুণ। বিশ্ববিদ্যালয়ও যে বিশ্ব নাগরিক তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে, এ বিষয়ে নিশ্চয় তাদের সম্যক ধারণা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তরুণদের এগিয়ে আসতে বলেছেন দেশ পরিচালনায়। সুতরাং এটা বলা যেতে পারে, ঢাবির আধুনিকমনস্ক তারুণ্য নতুনত্বকে গ্রহণ করতে পারে। সর্বোপরি ডাকসুর নতুন নেতৃত্বে ঢাবি ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক দলের সহাবস্থানের নতুন ধারা রচনা করুক, সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা বিকশিত হোক- এটাই প্রত্যাশা।