আবারও মৃতু্য

সড়ক কি নিরাপদ হবে না?

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একের পর এক সড়কে মর্মস্পর্শী দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। সঙ্গত কারণেই এর ভয়াবহতা কীরূপ তা সহজেই অনুমেয়। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, মিরপুর ১০ নম্বরে গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তিশা- ২০১৭ সালে ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরে পরীক্ষা শেষ করে মা ও ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় দানবের গতি নিয়ে তিশাকে ছোবল দিয়েছিল একটি বাস। চোখের পলকে থেঁতলে গিয়েছিল তিশার শরীর। প্রায় দেড় বছর পর সোমবার সকালে একই সড়কে বাসচাপায় আরেকটি মৃতু্যর ঘটনা ঘটল বলেই জানা যাচ্ছে। তথ্য মতে, মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন নূর ইসলাম শান্ত। রাস্তা ফাঁকা তবুও অস্থির বাসচালক। পেছন থেকে ধাক্কা দেন নূর ইসলাম শান্তের মোটরসাইকেলকে। ছিটকে পড়েন সড়কে। নিথর হয়ে যায় শান্তর দেহ। মিরপুরের ওসি বলেছেন, একটি বাস শান্তর মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। . এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয়, দুটি ঘটনার ব্যবধান বছর দেড়েক। কিন্তু বাস দুটি একই কোম্পানির। জানা যায়, তিশার মৃতু্যর পর জনতা বাসটি পুড়িয়ে দিয়েছিল। চালকও ধরা পড়েছিল। কিন্তু ঘটনার কয়েক দিন পর চালক জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও স্টিয়ারিংয়ে বসে যান! আমরা বলতে চাই, যেভাবে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে এবং লাশের সংখ্যা বাড়ছে- এ ক্ষেত্রে এমন প্রশ্ন অস্বাভাবিক নয় যে, এই পরিস্থিতির শেষ কোথায়? সড়ক কি নিরাপদ হবে না? বলা দরকার, সড়কের নিরাপত্তার দাবিতে ২০১৮ সালের আগস্টে দেশব্যাপী বৃহত্তর গণআন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আইন সংস্কারসহ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো- সড়ক দুর্ঘটনা থেমে নেই। কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় বিইউপির শিক্ষার্থী আরবার নিহত হওয়ার পর আবারও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের বিষয়টি সামনে আসে। সুপ্রভাত পরিবহনের যে বাসটি আরবারকে চাপা দেয়, সেই বাসটির বিভিন্ন অনিয়ম ও ত্রম্নটির কারণে ২৭ বার আইনিব্যবস্থা নেয়া হলেও বাসটি কীভাবে রাস্তায় চলল- তা নিয়েও প্রশ্ন সামনে আসে। আমরা মনে করি, সার্বিকভাবে গণপরিবহনসংক্রান্ত যে বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে তা আমলে নেয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, সারা দেশের গণপরিবহন নিয়ে জনগণের নানামাত্রিক অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীতে চলাচলকারী গণপরিবহনের চালকরা এতটাই বেপরোয়া যে, এদের লাগাম কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। অথচ এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি দেশের সড়ক ও যোগাযোগব্যবস্থার যতই উন্নয়ন হোক না কেন, তা যদি নিরাপদ না হয় তবে তা অত্যন্ত পরিতাপের। বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো সামনে এসেছে। নানান জরিপ ও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতাও দায়ী দুর্ঘটনার জন্য। আমরা মনে করি, একটি দেশে যখন লাইসেন্সবিহীন যানবাহন সড়কে চলাচল করতে পারে, তখন তা কতটা বিস্ময়কর এবং ভয়ের তা আমলে নেয়া সমীচীন। ফলে সার্বিক ঘটনাগুলোকে আমলে নিয়ে সড়কে কীভাবে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে, তা সংশ্লিষ্টদেরই খুঁজে বের করতে হবে। সরকারের কঠোরতার পরও কেন দুর্ঘটনা রোধ হচ্ছে না, অনিয়ম কোথায় তা খতিয়ে দেখে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা এমন উদ্যোগ নিশ্চিত করবে যাতে 'নিরাপদ সড়ক' বাস্তবেই প্রতিষ্ঠিত হয়। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কম কথা বলা হয়নি। ফলে যে কোনো মূল্যে সড়ক নিরাপদ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। গাড়িচালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালনা বন্ধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তা থেকে ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন অপসারণ করতে হবে। চালকদের সুনির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বা জীবন বাজি রেখে যাতায়াত করতে হচ্ছে জনগণকে এই বিষয়টি অত্যন্ত ভীতিপ্রদ। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সড়ক নিরাপদ করতে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।