দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে দুর্ভোগ

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

সাদিয়া আক্তার, কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ
আমাদের দেশের প্রধান কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এটি যেন বাংলাদেশের মতো দুর্বল অর্থনীতির দেশে এক বিশাল বড় সমস্যা। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করছে নিজেদের স্বার্থে। এর ফলে নিম্নআয় সম্পন্ন মানুষ ছাড়াও মধ্যবিত্তরাও তাদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। সাধারণত কোনো পণ্যের অত্যাধিক মূল্য বেড়ে যাওয়াকেই বলা হয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বর্তমানে পণ্যের মূল্য ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে আমাদের দেশের জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মুদি দোকানগুলোতে যদি নজর দেওয়া হয়, তাহলে দেখা যায়, গত কয়েক মাসে আটা-ময়দাসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা করে বেড়েছে। এ ছাড়াও শিশুখাদ্যসহ মাছ-মুরগির খাদ্য ইত্যাদির মূল্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে উৎপন্ন পণ্যে। বর্তমান পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে, বাজার পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে? এ রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে জনসাধারণের জীবন হয়ে উঠবে আরও দুর্বিষহ। উৎপাদক পর্যায়ে কৃষক যে পরিমাণ মূলধন নিয়ে দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করে, এর চেয়ে ৪-৫গুণ বেশি মূল্যে ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে ব্যবসায়ীরা এর দায়ভার চাপানোর চেষ্টা করছে পণ্যের পচনশীল আর জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ওপর। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে না মানুষের আয়। ফলে নিম্নআয়সম্পন্ন মানুষের জীবন কষ্টকর হয়ে উঠছে। স্বল্প বেতনের চাকরিজীবী এবং পরিবার ছেড়ে দূরে থাকা শিক্ষার্থীদের জীবনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। যেমন- বর্তমানে কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমাগত বাড়ছে বইয়ের দামও। অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বলা হয়, 'বছরে ২% থেকে ৪% এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির হার থাকলে, সেটা দেশের জন্য শুভলক্ষণ।' কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির হার প্রায় ৮%। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। আর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না কিছু সুবিধাবাদী লোকের কারণে। সাধারণত টিসিবি আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। আমরা দেখতে পাই, টিসিবির প্রদানকৃত চালের অংশও কিছু সুবিধাবাদী লোক সাধারণ দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ না করে নিজেরা ভোগ করছেন। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। এভাবে উচ্চবিত্ত আরও ধনী হচ্ছে আর মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন হতদরিদ্রে পরিণত হচ্ছে। ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। সর্বোপরি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে বয়ে আনছে অমানিশার ঘোর অন্ধকার।