বৈরী আবহাওয়া
বিশ্ব নেতৃত্বকে উদ্যোগ নিতে হবে
প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
শীতকে সঙ্গে নিয়েই বছর শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, শীতে নানারকম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে, বাড়ছে শীতজনিত রোগ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায়, এরই মধ্যে শীতে জবুথবু উত্তরের মানুষ। শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে দিনাজপুর অঞ্চলের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এছাড়া দেশের ১০ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ- এমনটিও জানা গেছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে বৃহস্পতিবার ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন খেটেখাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ। শিশু-বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে ভুগছেন। কৃষিতে বীজতলা হলুদ হয়ে যাওয়া ও রবিশস্যের ক্ষতি হচ্ছে এবং বোরো রোপণ পিছিয়ে যাচ্ছে। কোল্ড ইনজুরিতে মাঠেই ঝরে পড়ছে সরিষার ফুল, শাকসবজি, পেঁয়াজ, ডালসহ অন্যান্য ফসল। ফসলের মাঠে পোকার আক্রমণ বাড়ছে। ফসলের ক্ষতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষক।
কিন্তু সার্বিকভাবে এটা আমলে নেওয়া দরকার যে- আবহাওয়ার এমন আচরণ শুধু বাংলাদেশ নয়; বিশ্বজুড়েই বৈরী আবহাওয়ার খবর জানা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, যখন বিশ্বজুড়ে বৈরী আবহাওয়ার বিষয়টি সামনে আসছে- তখন তা কতটা উদ্বেগের সেটি বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করারও বিকল্প নেই। তথ্য মতে ২০২৩ সাল ছিল বিশ্বে ১০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ গরমের বছর। আর ২০২৪ সাল শুরু হয়েছে রেকর্ড ভাঙা শীত দিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ব্যাকরণ ভুলে বৈরী হয়ে উঠছে আবহাওয়া। স্মর্তব্য, ২০২৩ সালে ইউরোপ থেকে আমেরিকা তীব্র দাবানল, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রেকর্ড ভাঙা তাপদাহে বিপর্যস্ত হয়। এশিয়ার দেশগুলোতে খরায় পুড়েছে ফসলের মাঠ। ঢাকায় ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্র রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গরমের সেই ভোগান্তি যেতে না যেতেই তীব্র শীতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। আমরা বলতে চাই, যখন তাপদাহের পর এবার শীতও রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে বলে আলোচনা উঠে আসছে, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি সহজ করে দেখার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডায় মুখোমুখি ভারতের উত্তরাঞ্চল। দেশটির রাজধানী দিলিস্নতে তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রিতে নেমেছে। কনকনে শীতে কাঁপছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। জারি করা হয়েছে শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা। শীত আর শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে চীন। এক সপ্তাহ ধরে রাজধানী বেইজিংয়ে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে শূন্যের নিচে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ১৯৫১ সালের পর শহরটিতে এত ঠান্ডা পড়েনি। উত্তর ও উত্তর-পূর্ব চীনের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হেনেছে শীতকালীন ঝড়। দেশটির বড় অংশজুড়ে শীত ও ভারী তুষারপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীত পরিস্থিতিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে 'জীবনহরণকারী মাত্রার মারাত্মক শীত' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, হাঁড় কাঁপানো শীত, তুষারপাতে বিপর্যস্ত ইউরোপের বিভিন্ন এলাকা। জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়াসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে দেখা দিয়েছে তীব্র তুষারপাত। কঠিন পরিস্থিতিতে রাশিয়া। ১৪৫ বছরের মধ্যে ভারী তুষারপাতের কবলে মস্কো। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা গ্রাস করেছে পুরো রাশিয়াকে। এ ছাড়া কানাডা, মঙ্গোলিয়া, স্কটল্যান্ড, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শীত ও তুষারপাত বেড়েছে। সুইডেনে গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তুষারপাত, বরফ আর হাড় কাঁপানো বাতাসে বিপর্যস্ত ইউরোপের বিভিন্ন এলাকা। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত জার্মানির জনজীবন। সপ্তাহব্যাপী এই বৈরী আবহাওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল। সাইবেরিয়ায় তাপমাত্রা এরই মধ্যেই পৌঁছেছে মাইনাস ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের তা অনুধাবন করা জরুরি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সারা বিশ্বেই বৈরী আবহাওয়ায় জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান ও নৌপরিবহণ চলাচলেও বিঘ্ন হচ্ছে। ফলে যখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ব্যাকরণ ভুলে বৈরী হয়ে ওঠছে আবহাওয়া- তখন এটাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে বিশ্ব নেতৃত্ব এবং সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য।