মানবিক বিপর্যয় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জলবায়ু পরিবর্তন, সংঘাত, ঋণের বোঝা আর আন্তর্জাতিক সহায়তা কমায় সারাবিশ্বে ২০২৪ সালে আরও প্রকট হবে মানবিক বিপর্যয়। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি, আইআরসি'র প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছর সবচেয়ে বেশি মানবিক সংকটে পড়তে পারে আফ্রিকার ২০টি দেশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, ২০২৩ সালে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। যুদ্ধ-সংঘাত আর জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা যেন প্রকট আকার ধারণ করেছে গত বছর থেকে। ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান, মিয়ানমারে সেনাবিরোধী সংঘাত, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে গত বছর শরণার্থী হয়েছেন রেকর্ডসংখ্যক মানুষ। সেইসঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে জলবায়ু বিপর্যয়, দেশে দেশে ঋণের বোঝা। সহায়তা দিয়েও পেরে উঠছে না আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে মানবিক সংকট মোকাবিলায় ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৭শ' কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৪ সালে প্রয়োজন পড়বে সাড়ে ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। সাহায্যপ্রার্থী মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৩০ কোটিতে পৌঁছেছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে বাস্তুচু্যত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটিতে। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী এই মানবিক সংকট আরও বাড়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে সংস্থাটি। সবচেয়ে বেশি মানবেতর পরিস্থিতি হবে সুদান আর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ অঞ্চলগুলোর। এছাড়াও, সাব সাহারা অঞ্চলের নয় দেশসহ এশিয়ার মিয়ানমার ও আফগানিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যে লেবানন, সিরিয়া আর ইয়েমেন, ইউরোপে ইউক্রেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর আর ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের হাইতি রয়েছে বিশেষ ঝুঁকিতে। এই অঞ্চলগুলোতে বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশ বাস করলেও মানবিক সহায়তার ৮৬ শতাংশই প্রয়োজন এই অঞ্চলগুলোতে। বাস্তুচু্যত ৭০ শতাংশ মানুষ এখানকারই। যারা চরম আকারে দারিদ্র্য আর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছে। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে যত মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে তত সংখ্যক বিপর্যয় বা দুর্যোগ গত এক দশকের মধ্যে ঘটেনি। সদ্য বিদায় নেওয়া বছরটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অন্তত ২৯টি দেশ প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে ৪৩ বার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। তালিকায় স্থান পেয়েছে ২০২৩ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্প, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সুদানের সামরিক বাহিনী ও আধাসামরিক আইএসএফের সংঘাত, মে মাসে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মোচা, গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধসহ বিভিন্ন ঘটনা। বস্তুত ২০২৩ সালে দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বের অজস্র মানুষকে যে ভয়াবহ ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে- তা এক কথায় অবর্ণনীয়। এর আগে বিশ্বে এক বছরে এতসংখ্যক মানুষ আশ্রয়হীন হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আশঙ্কার বিষয় হলো, চলতি বছর এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে শরণার্থী শিবিরগুলোতে বর্তমানে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ আশ্রিত অবস্থায় রয়েছেন। এমন পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। যে করেই হোক, এই ধরনের মানবিক বিপর্যয় সহনীয় পর্যায়ে আনতে আন্তর্জাতিক মহলকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।