অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন

প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা অত্যন্ত ইতিবাচক

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চন অনুষ্ঠানের বিষয়টি বহুল আলোচিত। সরকারি রাজনৈতিক দলের বাইরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, এমনকি সাধারণ মানুষের মনেও সুষ্ঠু নিবার্চন অনুষ্ঠান নিয়ে নানান কৌত‚হল ও উৎকণ্ঠা রয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার জন্যও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নিবার্চনের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকারের উপায় নেই। আবার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নিবার্চন অনুষ্ঠানে নিবার্চন কমিশন কতটুকু সক্ষমÑ এমনও প্রশ্ন ঘুরে ফিরে উচ্চারিত হয়। এ বছরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। যার ফলে, শুধু রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা সাধারণ মানুষই নন, বিদেশি ক‚টনীতিকরাও সরকার পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নিবার্চন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছেন। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জামাির্ন পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নিয়েলস আনেনকে বলেছেন, নিবার্চন কমিশন একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নিবার্চন অনুষ্ঠানে সক্ষম। দেশের সরকারপ্রধান যখন অত্যন্ত দৃঢ়তা নিয়ে এমন মন্তব্য করেন, তখন তা অত্যন্ত ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। তত্ত¡াবধায়ক সরকার পুনবর্হালের দাবিতে দশম সংসদ নিবার্চন বজর্ন করা দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নিবার্চনকালে ‘নিদর্লীয়’ সরকারের দাবি তুলে দলীয় সরকারের অধীন নিবার্চন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না বলে দীঘির্দন বলে আসছে। দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নিবার্চনে দলটি অংশগ্রহণ করবে কিনাÑ এ নিয়েও রয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। এ ছাড়া নিবার্চন কমিশন নিয়েও দলটির অসন্তোষ আছে, যা বিভিন্ন সময়ে দলটির বিবৃতি থেকে স্পষ্ট। এসব বিষয়ে বিএনপি নেতারা ক‚টনীতিকদের দৃষ্টিও আকষর্ণ করেছেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিবার্চন কমিশন সম্পূণর্ স্বাধীন এবং ইতিমধ্যে এই কমিশন সারা দেশের জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার পযাের্য়র ছয় হাজারেরও বেশি নিবার্চন সম্পন্ন করেছে। এরপরও কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে নানান সমালোচনা করেছে বিএনপি। ফলে বিদ্যমান এ বাস্তবতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন কোনো প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে, এ নিয়ে কৌত‚হল এবং উৎকণ্ঠা দুটোই আছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের মধ্যকার আস্থার সংকট এতটাই তীব্র যে, দলগুলো কোনো বিষয়ে ঐক্যমতে পেঁৗছাতে পারছে না। রাজনীতিতে পরমতসহিষ্ণুতার অভাব এতটাই প্রকট, যে কারণে পারস্পরিক বিষোদ্গার অতীতের সব রেকডর্ ছাপিয়ে গেছে বললেও অত্যুক্তি হয় না। রাজনৈতিক দলগুলোর আদশর্গত পাথর্ক্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সাধারণের উন্নয়ন ও কল্যাণের কথা চিন্তা করে জাতীয় সমস্যাগুলো নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পেঁৗছতে ব্যথর্ হলে সঙ্গত কারণেই বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দঁাড়ায়। ‘সালিশ মানি কিন্তু তালগাছ আমার’ দলগুলো এই বৃত্ত থেকে বের হতে না পারলে গণমানুষের প্রকৃত মুক্তি কখনো সম্ভব নয়, বিশেষজ্ঞরা এমনও মন্তব্য করেন। দেশের বতর্মান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন অনুষ্ঠানের বিকল্প থাকা সমীচীন নয় বলেও আমরা বিবেচনা করতে চাই। আমরা বলতে চাই, একাদশ জাতীয় নিবার্চনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে নিবার্চনী বিধি-বিধানে সংস্কারসহ নিবার্চন কমিশনের অনেক গুরুত্বপূণর্ করণীয় আছে। একই সঙ্গে করণীয় আছে সরকার, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজসহ নিবার্চন সংশ্লিষ্ট সবার। যেহেতু সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ নিবার্চন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিবার্চন কমিশনের। নিবার্চন মানেই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নিবার্চন। শুধু তাই নয়, নিবার্চন বলতে প্রতিযোগিতামূলক নিবার্চনও। ‘নিবার্চন’ মানেই ‘চয়েস’ বা বিকল্পের মধ্য থেকে বেছে নেয়ার সুযোগ। তাই প্রতিযোগিতামূলক নিবার্চন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশন সব প্রতিযোগীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করুক, এমনটি চাওয়া নিশ্চয়ই অমূলক নয়। সবোর্পরি বলতে চাই, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বেশ তৎপর। ইসিও তাদের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাযর্ক্রম শুরু করেছে। সুষ্ঠু নিবার্চন নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন মহল থেকে গুরুত্বপূণর্ পরামশর্ আসছে। সব মিলিয়ে নিবার্চন কমিশনের এমন উদ্যোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন যা সুষ্ঠু, শান্তিপূণর্ ও অথর্বহ নিবার্চন নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখতে পারে। ইসি, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতায় দেশের নিবার্চনী সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবতর্ন আসুক- এটাই প্রত্যাশা।