দুই ধাপ অবনতি
দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে
প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের দুই ধাপ অবনতি ঘটেছে। ১২তম স্থান থেকে ১০তম স্থানে উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। গত এক যুগের মধ্যে বাংলাদেশে দুর্নীতি এবারই সবচেয়ে বেশি, বলছে টিআইবি। জার্মানির বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইর দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রতিবেদন (সিপিআই)-২০২৩ মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে একই সময়ে প্রকাশিত হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে 'বিব্রতকর ও হতাশাজনক চিত্র' মন্তব্য করা হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, যে মেয়াদের (নভেম্বর-২০২২ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৩) তথ্যের ওপর নির্ভর করে এই রিপোর্ট হয়েছে। সে সময় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অবস্থান ও সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' ঘোষণাসহ অন্য যেসব অঙ্গীকার ছিল, সেগুলো প্রতিপালন বা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সরকারি খাতে দুর্নীতির ব্যাপকতা বেড়েছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে দুর্নীতির হার বেশি। ভুটান আগের বছরের ৬৮ স্কোর ধরে রেখে ৫৩তম অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া নেপাল ও পাকিস্তানের যথাক্রমে ১ ও ২ পয়েন্ট উন্নতি হয়েছে ২১তম ও ১৫তম অবস্থানে। এদিকে শ্রীলঙ্কার ২ পয়েন্ট, মালদ্বীপ, ভারত ও বাংলাদেশের ১ পয়েন্ট কমেছে। সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শ্রীলঙ্কা ২০তম, ভারত ২৫তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ৬ নম্বর অবস্থানে আছে আফগানিস্তান। সূচকে ১০০ স্কোরের মধ্যে ৯০ পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তালিকার শীর্ষে আছে ডেনমার্ক। ৮৭ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ফিনল্যান্ড।
বাংলাদেশ এক সময় দুর্নীতির জন্য পর পর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। দুর্নীতির সেই কলঙ্ক-তিলক মোচন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি এটা যেমন সত্য, একইভাবে সত্য যে, আমরা সমাজ-রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে পারিনি। যার কারণে আমাদের আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে তার রয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার তিনি। ইতোমধ্যে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, দুর্নীতি না হলে দেশের চেহারা পাল্টে যেত। তিনি আরো বলেছেন, ফাঁকফোকর কোথায় এবং কারা উন্নয়ন প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। অসৎ দুর্নীতি-অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খলতায় জড়িত থাকলে দলের লোকদেরও ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে, বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কত টাকা প্রয়োজন। দেশের সবাই যদি অবৈধভাবে কোটিপতি হতে চায় তা হলে এটা রাষ্ট্রের জন্য একটা বিপজ্জনক বার্তা। বাংলাদেশের সাফল্যের তালিকা দীর্ঘ এবং আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর নিজস্ব আর্থিক সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশের সাফল্যের তালিকা আরও অনেক বেশি দীর্ঘ হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। যদিও সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাও রয়েছে- এটা স্বীকার করতেই হবে। দুর্নীতি নির্মূল করতে না পারা এটা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশালী ও গর্বিত দেশ।