ফেনীতে ছাত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরতা

অপরাধীর সাজা নিশ্চিত করুন

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নির্যাতন রোধে আইন থাকলেও, তা নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে নির্যাতনের কৌশলও পাল্টাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, শনিবার ফেনীর সোনাগাজীতে আলিম পরীক্ষা দিতে গিয়ে এক মাদ্রাসা ছাত্রী দুর্বৃত্তদের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন। বোরকা পরা চার দুর্বৃত্ত নুসরাত জাহান রাফি নামে ওই পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। মারাত্মক দগ্ধ ওই ছাত্রী এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে মৃতু্যর সঙ্গে লড়ছেন। ছাত্রীর পরিবার অভিযোগ করেছে, শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় স্থানীয় এক মাদ্রাসা অধ্যক্ষের অনুসারীরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। ছাত্রীর গায়ে আগুন লাগানোর ঘটনাটি অত্যন্ত আতঙ্কের বলেই আমরা বিবেচনা করতে চাই। ইতোমধ্যে এ ঘটনাকে 'চরম নৃশংসতা' উলেস্নখ করে বিশ্লেষকরা তাদের উদ্বেগের কথাও তুলে ধরেছেন। উলেস্নখ্য, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নুসরাত রাফিকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব দেন এবং একপর্যায়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী পরিবারের সদস্যদের কাছে ঘটনাটি জানালে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পুলিশের কাছে দেয়া বক্তব্যেও রাফি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন। পুলিশ মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। আর অন্য অংশ অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এলাকার প্রভাবশালীরাও দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, পুলিশি তদন্তে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা শ্লীলতাহানির ঘটনার প্রমাণ মিলেছে। অধ্যক্ষের অতীত রেকর্ডও ভালো নয়। এর আগে একই ধরনের অভিযোগও উঠেছিল ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। আর মামলা হওয়ার পর থেকেই অধ্যক্ষের লোকজন মামলা তুলে নিতে তাদের চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। হুমকি-ধমকিও দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকবার। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মামলা না তোলায় ভয়াবহ শাস্তি পেতে হয়েছে রাফিকে। জানা গেছে, দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে মুখমন্ডল ছাড়া রাফির শরীরের প্রায় পুরো অংশই দগ্ধ হয়েছে। শ্বাসনালিও পুড়ে গেছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। আর এ ঘটনার পর মাদ্রাসা শিক্ষক আকতার হোসেন ও আরিফকে আটক করেছে পুলিশ। দগ্ধ রাফি গণমাধ্যমকে জানান, শনিবার পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে বোরকা পরা এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর মারধর করা হচ্ছে বলে জানায়। এই তথ্য জানার পর তিনি ছাদে গেলে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে একজন নারীকণ্ঠে কথা বলেছে তার সঙ্গে। সুতরাং এ ঘটনায় স্পষ্ট হতে পারে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ীই রাফির গায়ে আগুন লাগানো হয়েছে। ফলে এ ঘটনায় সম্পৃক্ত কেউই যেন রেহাই না পায় তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, মাদ্রাসাছাত্রীর দগ্ধ হওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারেই খতিয়ে দেখতে হবে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ ঘটনায় জড়িত বলে যেহেতু পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সুতরাং এ বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তদন্তে এ বিষয়টিকেও প্রাধান্য দিতে হবে। স্মর্তব্য যে, ২০১৬ সালে দাখিল পরীক্ষা দেয়ার সময়ও এলাকার দুর্বৃত্তরা রাফির ওপর হামলা চালিয়েছিল। তখন চুন মারা হয় তার চোখে। এতে তার ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শনিবারের ঘটনার অতীতের ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে কিনা, সেটিও সংশ্লিষ্টরা বিবেচনায় নিতে পারেন। অধ্যক্ষ সিরাজ মাদ্রাসায় নানান অপকর্ম চালালেও পরিচালনা কমিটি তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি- এ ধরনের তথ্য আতঙ্কজনক এক বাস্তবতাকেই নির্দেশ করে। সর্বোপরি বলতে চাই, রাফির ওপর আগুনসন্ত্রাসের ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়, যা করতে হবে প্রশাসনকেই। সারা দেশে নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষকে নির্যাতন প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। একজন নারীও যেন আর ঘরে-বাইরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতেও সরকারকে নিতে হবে পরিকল্পিত উদ্যোগ।