ছাদ ভেঙে ছাত্রী নিহত

দোষীদের শাস্তি হোক

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কোনোভাবেই রোধ হচ্ছে না অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বরং এমনভাবে নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে- যেখানে সতর্ক হওয়া কিংবা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে হয়তো দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। আমরা মনে করি, যখন প্রতিনিয়তই একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে চলেছে এবং মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে; তখন সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নেয়া জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বরগুনার তালতলী উপজেলার ৫নং ছোটবগী পিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনের ছাদ ভেঙে মানসুরা নামের এক ছাত্রী নিহত হয়েছে। এর পাশাপাশি ৯ জন আহতও হয়েছে। আহতদের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তিও করা হয়েছে। এ ছাড়া জানা গেছে, শনিবার দুপুরের এই ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, স্কুলের জরাজীর্ণ ছাদ ভেঙে পড়বে আর শিক্ষার্থী নিহত হবে- এই ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং পরিতাপের জন্ম দেয়। তথ্য মতে, ছোটবগী পিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০২ সালে আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগ স্কুল ভবন নির্মাণ করে। ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেতু এন্টারপ্রাইজ। ওই সময় নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করে- এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। কেননা নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় ওই ভবনের ভিমে ফাটল ধরে পলেস্তারা খসে পড়ে। এ ছাড়া ২০১৬ সালে বিদ্যালয়ের ভবনটি জরাজীর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। আর এটাও জানা যাচ্ছে যে, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করেন। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওই জরাজীর্ণ ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা না করে ক্লাস চালিয়ে নেয়ার আদেশ দেন। ফলে আমরা মনে করি, সার্বিক এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা জরুরি। বলা দরকার, স্কুলছাত্রীর নিহতের এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেয়া জরুরি যে, অভিভাবকরা ভবন নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি করেছেন। ফলে যেহেতু তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত হবে এবং এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রম্নত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া এই ঘটনার পাশাপাশি এটিও আমলে নিতে হবে যে, মেসার্স সেতু এন্টারপ্রাইজের মালিক বলেছেন, তার লাইসেন্স দিয়ে ওই বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়নি। কে বা কারা করেছে তিনি জানেন না! আমরা মনে করি, অসতর্কতা কিংবা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা বা যে কোনো ধরনের ত্রম্নটির কারণে বড় ধরনের ক্ষতি কিংবা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গত কারণেই এই ধরনের ঘটনা রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। শিশুরা স্কুলে যাবে পড়ালেখা করতে আর ফিরবে লাশ হয়ে- ছাদ ভেঙে পড়বে মাথার উপরে, এ ধরনের পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সর্বোপরি বলতে চাই, পত্রপত্রিকায় নানা সময়েই এমন সব ঘটনা সামনে আসে যার ফলে অব্যবস্থাপনা বা অসতর্কতার চিত্র পরিলক্ষিত হয়। ফলে এ ধরনের ঘটনাগুলোকে আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। ঘটনা ঘটে যাবে, তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে- এই পরিস্থিতিরও অবসান হওয়া জরুরি। এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।