পাঠক মত

প্রসঙ্গ : পুরুষ নির্যাতন দমন আইন

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

নাজমুল হোসেন সিলেট
নারীদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর সব সমাজে মাত্রা ভিন্নতায় নির্যাতন ছিল, আছে এবং আরও অনেক দিন থাকবে- সেই বিষয়ে আমারসহ অনেকেরই দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু এই নারীদের হাতেই পুরুষও নির্যাতিত হয়। যদিও এর মাত্রা, ধরন, প্রেক্ষিত ভিন্ন। পাষন্ড-দুর্বৃত্ত স্বামীর হাতে স্ত্রীরা যেমন প্রহার, লাঞ্ছনা, নিগ্রহের শিকার হন তেমনি স্ত্রীর হাতে পতি নিপীড়নের দৃষ্টান্তও কম নয়। এমনই নির্যাতিত ও ভুক্তভোগী অনেকের অনুরোধেই নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে আমার এই লেখা। বর্তমানে নারী নির্যাতনের পাশাপাশি বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতন একটি প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির পুরুষ মানুষ আজকে কোনো না কোনো নারী দ্বারা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। মানুষের জীবনে কয়েক রকমের নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে পারে। কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ দৈহিক-আর্থিক, আর কেউ বা সামাজিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। পাশাপাশি হচ্ছে শাসন-শোষণের শিকার, ঘরে-বাইরে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। সাম্প্রতিককালে দেশের নানা প্রান্তে স্ত্রীর অত্যাচারে বেশ কয়েকজন স্বামীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের তরুণ সম্ভাবনাময় ডাক্তার আকাশের আত্মহত্যা তারই উদাহরণ। ইদানীং ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, পারিবারিক বন্ধনের অভাব এবং নারীর ক্ষমতায়নের ফলেই বেশির ভাগ নারী বিয়েকে 'দাসত্ব' মনে করছেন। ফলে ভাই-বোনসহ তৃতীয়পক্ষের ইন্ধনে স্বামীর বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা, অতিমাত্রায় চাহিদা তৈরি করে আর্থিক চাপ প্রয়োগ, অতিরিক্ত যৌন চাহিদা, সামাজিক কর্মকান্ডের নামে ক্লাব-পার্টিতে যাতায়াত, গভীর রাতে বাসায় ফেরা, সিগারেট-ইয়াবার মতো মাদকে আসক্তি, একাধিক ছেলে বন্ধুর সঙ্গে ফোনালাপ ও মেলামেশা, পর পুরুষের সঙ্গে পরকীয়া, সন্তানকে অবহেলা করার মতো ঘটনাগুলো ঘটিয়ে স্ত্রীরা নির্যাতন করছেন পুরুষদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লোক-লজ্জার ভয়ে এবং সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে পুরুষরা স্ত্রীর অনেক অন্যায় দাবি মেনে নিলেও সমাজে পুরুষ নির্যাতন কিন্তু কমেনি। বর্তমান সময়ে যেভাবে সমাজে নারী ও শিশু আইনে মামলা করে জেল খাটানোর ভয় দেখিয়ে পুরুষ নির্যাতন করার পাশাপাশি স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে ডিভোর্স প্রদানের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। এক সময় নারীকে অবহেলিত মনে করা হলেও বর্তমানে নারী-পুরুষ সমান অধিকার দাবি তুলে নারীরা নিজেদের নানা রকম অন্যায় কর্মকান্ডকে বৈধ বানাতে আইনের অপব্যবহার করে চলেছেন। এ দেশে পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধে সুনির্দিষ্টভাবে নেই কোনো আইন। নারী ও শিশু নির্যাতনে পাঁচটি ট্রাইবু্যনাল তৈরি হলেও পুরুষদের জন্য একটিও নেই। ফলে ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেয়াটা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে। আমাদের সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯নং অনুচ্ছেদে নারীর অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে নারীর সুরক্ষার জন্য দেশে একাধিক আইন রয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০, এসিড নিরোধ আইন-২০০২, পারিবারিক সহিংসতা ও দমন আইন-২০১০, যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ উলেস্নখযোগ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য নারীর সুরক্ষার জন্য আইনগুলো তৈরি হলেও বর্তমানে এই আইনগুলোকে কিছু নারী-পুরুষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সুতরাং বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীরা আর চার দেয়ালের বদ্ধ ঘরে নেই। এ অবস্থায় এগিয়ে যাওয়া এই নারীদের জন্য বিশেষ আইন থাকলেও পুরুষদের জন্য বিশেষ আইন করতে বাধা কোথায়? নারী নির্যাতনের মতো পুরুষ নির্যাতন আইন প্রণয়ন করে নারী-পুরুষদের মধ্যে সত্যিকারের বৈষম্যতা দূর করতে সরকারকে আরও সচেষ্ট হতে হবে। নির্যাতন যাদের ওপরই হোক না কেন, তা সমাজ কিংবা ব্যক্তিজীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ।